চন্দ্রযান ৩ কিছুদিন আগেই লঞ্চ করেছে ভারত। অনেক হলিউড সিনেমার বাজেটের থেকেও কম খরচে চন্দ্রযান মিশন লঞ্চ করেছে ভারত। চন্দ্রযান ২-এর মাধ্যমে ভারত প্রথমবার চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ডিংয়ের চেষ্টা করেছিল। সে চেষ্টা সফল হয়নি। এবার চন্দ্রযান ৩ মিশনের মাধ্যমে ভারত দ্বিতীয়বার সেই চেষ্টা করছে চলেছে। বর্তমানে চাঁদের কক্ষপথে ঢুকে পড়েছে চন্দ্রযান ও চাঁদের চারদিকে পাক খাচ্ছে। আগামী ২৩ অগস্ট তা চাঁদের মাটিতে সফট ল্যান্ড করবে। সঙ্গে সঙ্গে চতুর্থ দেশ হিসাবে ভারত চাঁদের মাটিতে নামবে ও প্রথম দেশ হিসাবে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে ল্যান্ড করব আমরা।
২০২০ সালে ভারতের মহাকাশ অর্থনীতির ভ্যালু ছিল ৯.৬ বিলিয়ন ডলার। ব্রিটিশ মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানি আর্নেস্ট অ্যান্ড ইয়ংয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী আগামী ২০২৫ সালে ভারতের মহাকাশ অর্থনীতির ভ্যালু দাঁড়াবে প্রায় ১৩ বিলিয়ন ডলার। বিগত ৫ বছরে ১৯টি দেশের ১৭৭টি স্যাটেলাইট লঞ্চ করে ইসরো ১১০০ কোটি টাকা লভ্যাংশ আয় করেছে। অর্থাৎ, বোঝাই যাচ্ছে ভারতের মহাকাশ অর্থনীতি ও ইসরো উভয়েই দ্রু বৃদ্ধির পথে এগিয়ে চলেছে। চন্দ্রযান ৩ মিশন সফল হলে ভারতের মহাকাশ গবেষণা ক্ষেত্র আরও অনেক বিনিয়োগ টেনে নিয়ে আসবে।
কেউ যদি এখন চায় ইসরোতে বিনিয়োগ করবে তাহলে এই ধরণের সরকারি সংস্থায় তা কখনোই সম্ভব নয়। কিন্তু ভারতের শেয়ার বাজারে লিস্টেড এমন কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা ইসরোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে ইসরোর বিভিন্ন মিশনে সহযোগিতা করছে।
১. পরশ ডিফেন্স ও স্পেস টেকনোলজিস (Paras Defence & Space Technologies)
২০১৮ সালে পরশ ডিফেন্স স্পেস অপটিক্সে প্রবেশ করেছিল। তখন ইসরোর থেকে তারা স্পেস অপটিক্সের বিশাল অর্ডার পেয়েছিল। ২০২২-এ এদের অর্জিত লভ্যাংশের ৫১ শতাংশ এসেছিল ডিফেন্স ও স্পেস অপটিক্স থেকেই। টেকনোলজির উন্নতিসাধন ও রিসার্চ ও ডেভেলপমেন্টের মতো কাজের জন্য পরশকে ইন্ডিজেনাস ডিজাইন ও ম্যানুফ্যাকচার্ড ক্যাটেগরিতে রাখা হয়। ইসরো ছাড়াও ভারত ডায়নামিক্স লিমিটেড, ভারত ইলেকট্রনিক্স, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL) ও এল অ্যান্ড টি এর মতো কোম্পানির সঙ্গেও কাজ করেছে পরশ। এছাড়াও ইজরায়েল, সিঙ্গাপুর ও ইউএসএর বিভিন্ন কোম্পানিকে পরশ বিভিন্ন যন্ত্রাংশ সাপ্লাই করে। যদিও গত ১ বছরে পরশ -৩.২ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
২. লারসন অ্যান্ড টুরবো (L&T)
চন্দ্রযান ৩-এর জন্য লারসন অ্যান্ড টুরবো ক্রিটিক্যাল বুস্টার সেগমেন্ট তৈরি করেছে। প্রধানত ‘হেড এন্ড সেগমেন্ট’, ‘মিডল সেগমেন্ট’ ও ‘ন্যাজাল বাকেট প্লাঞ্জ’ তৈরি করেছে। গত ১ বছরে কোম্পানির শেয়ার প্রায় ৪৩ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
৩. এমটিএআর টেকনোলজিস লিমিটেড (MTAR Technologies Limited)
তেলেঙ্গনায় অবস্থিত এমটিএআর-এর কারখানায় ইসরোর মহাকাশ মিশনে ব্যবহৃত ইঞ্জিন তৈরি করা হয়েছিল। এই কোম্পানি নিউক্লিয়ের পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্য ফুয়েলিং মেশিন হেড, গ্রিড প্লেট ও এফএম ব্রিজ ও কলাম তৈরি করে। এমটিএআর ইসরোর জন্য লিকুইড প্রপালশন রকেট ইঞ্জিন, ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরি করে। ইসরো ছাড়াও এসএসি, রাফাল, টাটার মতো কোম্পানির সঙ্গে যুক্ত এমটিএআর। গত ১ বছরে এই কোম্পানির শেয়ার প্রায় ৫৫ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
৪. এইচএএল (HAL)
এইচএএল বা হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড একটি সরকার অধিনস্ত সংস্থা। এইচএএল বিমান, হেলিকপ্টার, ইঞ্জিন ও এই ধরণের বিভিন্ন যন্ত্রাংশ তৈরি করে। হ্যাল ইসরোর জন্য ২০৮ কোটি টাকার রকেট ইঞ্জিন তৈরির কারখানা তৈরি করেছে। এখানে ইন্টিগ্রেটেড ক্রায়োজেনিক ইঞ্জিন তৈরি করা হয়, যা রকেটের জন্য প্রয়োজন সমস্তরকম ইঞ্জিন একই ছাদের তলায় তৈরি করার সুবিধা দেবে। কোম্পানির চেয়ারম্যান ও এমডি সিবি আনন্দকৃষ্ণণ এই বছরের ফেব্রুয়ারিতেই ঘোষণা করেছিলেন ইতিমধ্যেই কোম্পানির কাছে ৮৪ হাজার কোটি টাকার অর্ডার রয়েছে। আরও ৫০ হাজার কোটি টাকার অর্ডার আসতে চলেছে। হ্যালের বেশিরভাগ লভ্যাংশ ভারতীয় সেনাবাহিনী থেকেই আসে। গত ১ বছরে হ্যালের শেয়ার, প্রায় ৭৬ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
৫. ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (Bharat Heavy Electricals Limited)
ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড বা ভেল ভারতের বৃহত্তম ইঞ্জিনিয়ারিং ও ম্যানুফ্যাকচারিং কোম্পানি। এতদিন ইসরোর প্রয়োজনীয় লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারি ভারতের বাইরে থেকে সংগ্রহ করা হত ও ভেল তা দেশের মধ্যে অ্যাসেম্বল করত। এবার ভেলের সঙ্গে ইসরো টেকনোলজি শেয়ার করছে ফলে ভেল এই ব্যাটারি এবার দেশের মধ্যেই তৈরি করবে। চন্দ্রযানের ইলেক্ট্রিক প্রোপালসন মডিউল ও টাইটানিয়ামের তৈরি ফুয়েল ট্যাঙ্ক তৈরি করেছে ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড। গত একবছরের ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেডের শেয়ার প্রায় ৯২ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
উপরে বলা কোনও শেয়ারেই বিনিয়োগ করতে বলে না TV9 বাংলা। বা এর উপর ভিত্তি করেই আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে এমনটাও নয়। গত এক বছরের রিটার্নের কথাই বলা হয়েছে এই রিপোর্টে। তবে সেখানে এখন বিনিয়োগ সঠিক কি না তা অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্ত।
*যে কোনও রকম বিনিয়োগ বাজারগত ঝুঁকি সাপেক্ষ। বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি ভাল করে পড়ে নিন।