কলকাতা: কার ভাগ্য কখন খুলে যায় কেই বা বলতে পারে! হিসাবের ভুলে কার ভাগ্যের চাকা কাকে কখন পথে বসাবে আর কাকেই করবে রাজা সবটাই নাকি লটাট লিখন! কিন্তু, দালাল স্ট্রিটের লোকজন কিন্তু, সবসময় এমনটা বলতে রাজি নয়। শেয়ার বিশেষজ্ঞদের মতে বাজার বুঝে, মাথা খাটিয়ে আর একটু হোমওয়ার্ক করে মাঠে নামলে অচিরে ঘরে আসতে পারে বড় লাভ। পিঁপড়েতেও খেয়ে যাবে না লাভের গুড়। শুধু নামী-দামি স্টক নয়, বাজারে রয়েছে এমন কিছু শেয়ার যেগুলির দাম আপতদৃষ্টিতে খুবই কম। এমনকী বিগত কয়েক বছরে স্টকগুলির খুব একটা বুল রানও দেখতে পাওয়া যায়নি। কিন্তু, তারপরেও এই সংস্থাগুলির বার্ষিক টার্নওভার বা রেভিনিউ, লাভ, মোট শেয়ারের সংখ্যা, বাজারে ভাবমূর্তির নিরিখে আগামীতে বহু উন্নতির সম্ভাবনা রয়েছে। এই তালিকায় যেমন উপরের দিকেই রয়েছে NCL Research and Financial Services Ltd, Visagar Financial Services Ltd, GTL Infrastructure Ltd এর মতো বেশ কিছু সংস্থা। এই সংস্থাগুলির এক একটি শেয়ারের দাম ১ টাকারও কম। কোনওটির আবার ১টাকার সামান্য বেশি।
নজর নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল সংস্থার এই শেয়ারে
এর মধ্যে NCL Research and Financial Services Ltd আদপে ভারতের একটি নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি। সংস্থাটির পথচলা শুরু ১৯৮৫ সালে। সদর দপ্তর মুম্বইতে। কোম্পানিটি বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। বর্তমানে এই সংস্থার এক একটি শেয়ার মূল্য ০.৫৫ টাকা। বাজার মূলধন ৫৬.৭৩ কোটি টাকা। মোট শেয়ারের সংখ্যা ১১৩ কোটি। এমনকী এই সংস্থার শেয়ারগুলি BSE এবং NSE, দুই জায়গাতেই তালিকাভুক্ত রয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে এই সংস্থায় লেনদেনের পরিমাণ ৫০% বৃদ্ধি পেয়েছে। যা প্রায় ২৮৩ কোটি টাকার বেশি। সাম্প্রতিককালে আবার এই সংস্থাটি নতুন নতুন আর্থিক পরিষেবা দিতে শুরু করেছে।
২০১৯ সালের মে মাসে এই সংস্থার শেয়ারের দাম ঘোরাফেরা করছিল মাত্র ৬ পয়সার আশেপাশে। ২০২১ সালের ডিসেম্বরে তা ২ টাকা ছাড়িয়ে যায়। চলতি অর্থবর্ষের শেষ দুই ত্রৈমাসিকে এই সংস্থার রেভিনিউ ১ কোটি টাকারও বেশি। একইসময়ে লাভ প্রায় ১ কোটি টাকার কাছাকাছি। তাই সবদিক দেখেই বিশেষজ্ঞরা বলছেন এই সংস্থার ভবিষ্যত মোটের উপর বেশ ভালই। তাই আগামীর কথায় মাথায় রেখে এই সংস্থায় বিনিয়োগ করে ভাল লাভ ঘরে তোলা যেতে পারে।
৩ পয়সার শেয়ার ছাড়িয়েছে ১ টাকার গণ্ডি
তালিকায় রয়েছে Visagar Financial Services Ltd এর শেয়ার। এই সংস্থাটিও দেশের একটি নন-ব্যাঙ্কিং ফাইন্যান্সিয়াল কোম্পানি। পথচলা শুরু ১৯৯৪ সালে। সদর দপ্তর ওড়িশার ভুবনেশ্বরে। এই কোম্পানিটিও বিভিন্ন ধরনের আর্থিক সেবা প্রদান করে থাকে। রয়েছে বীমা পরিষেবাও। কোম্পানির বর্তমান শেয়ার মূল্য ১.১৮ টাকা। বাজার মূলধন ৬৫.৯৮ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ১৬৪ কোটি। এই সংস্থার শেয়ারগুলি BSE এবং NSE তে তালিকাভুক্ত রয়েছে।
বিগত কয়েক বছরের পরিসংখ্যান দেখলে দেখা যাবে কোম্পানির আয় এবং লাভের বৃদ্ধি মোটের উপর স্থির। তবে ২০২২ সালে বেশ খানিকটা ভারী লোকসানের মুখ দেখেছিল এই কোম্পানিটি। গত বছরের মার্চে রেভিনিউয়ে ক্ষতি হয় প্রায় ৪১ কোটি টাকার। তবে ঘুরে দাঁড়াতে খুব বেশি সময় লাগেনি। চলতি বছরের মার্চেই উপরে ওঠে গ্রাফ। লাভের ঘরে রেভিনিউ দাঁড়ায় ১৭ কোটি টাকা। এই মার্চে লাভ হয়েছে ৫ কোটি টাকা। বর্তমানে বাজারে সংস্থাটির ভাবমূর্তিও বেশ ভাল রয়েছে। ২০০ সালে সংস্থাটির শেয়ার যেখানে ৩ পয়সার কাছে ঘোরাফেরা করছিল ২০১১ সালের ডিসেম্বরে তা ১১ টাকার গণ্ডি ছাড়িয়ে যায়।
বড় লোকসানের ধাক্কা সামলেও পারবে ঘুরে দাঁড়াতে?
অন্যদিকে GTL Infrastructure Ltd একটি ভারতীয় টেলিযোগাযোগ কোম্পানি। কোম্পানিটি ১৯৯৮ সালে পথচলা শুরু করে। সদর দফতর মুম্বাইতে। দেশের ২২টি রাজ্যে এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে কাজ করছে এই সংস্থা।
কোম্পানির বর্তমান শেয়ার মূল্য ০.৮০ টাকার আশেপাশে। কোম্পানির বাজার মূলধন ১,২৮০.৬৪ কোটি টাকা। কোম্পানির মোট শেয়ারের সংখ্যা ১,৯৩৮ কোটি। কোম্পানির শেয়ারগুলি BSE এবং NSE -তে তালিকাভুক্ত রয়েছে। রেভিনিউয়ের দিক থেকে সংস্থাটি বেশ ভাল জায়গায় রয়েছে। পরিসংখ্যান বলছে ২০১৯ সালে সংস্থাটির মোট রেভিনিউ ছিল ১৫০০ কোটি। ২০২২ সালে তা ছিল ১৪৬৩ কোটি। কিন্তু, লাভের গুড় খুব একটা ঘরে তুলতে পারেনি। ২০২২ সালে মোট লোকসানের পরিমাণ ছিল ১৪৭৫ কোটি।
২০০৭ সালের নভেম্বরে এই সংস্থার শেয়ারের দাম যেখানে ৮৪ টাকার উপরে চলে যায় সেই শেয়ারই ২০১৩ সালের মে মাসে চলে আসে ২ টাকার নীচে। তবে সংস্থার আর্থিক লেনদেন, বিনিয়োগ, বাজারে ভাবমূর্তি, সবটা দেখে বিশেষজ্ঞদের ধারণা আগামীতে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর ভালই সম্ভাবনা রয়েছে এই সংস্থার।
বিঃ দ্রঃ – শেয়ার বাজারের বিনিয়োগ সর্বদাই ঝুঁকিুপূর্ণ। এখানে বিনিয়োগের কোনও নির্দিষ্ট ফর্মূলা নেই। তাই এখানে বিনিয়োগ নিজের দায়িত্বে করা উচিত।