আর মাস দেড়েক পরই ভারতে বসতে চলেছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর। কয়েকশো কোটি টাকা খরচ করে এই বিশ্বকাপ আয়োজন করতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড। তবে শুধুই খরচ নয়, বোর্ডের ও আইসিসির অবশ্যই লক্ষ্য থাকবে যা খরচ হচ্ছে তার থেকে কয়েকগুণ অর্থ যাতে তুলে নেওয়া যায়। গতবার অর্থাৎ ২০১৯ সালে ক্রিকেট বিশ্বকাপের আসর বসেছিল ইংল্যান্ডে। ইকোনমিক টাইমসের একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, সেই বছর তারা ক্রিকেট বিশ্বকাপ থেকে প্রায় ৩৬০০ কোটি টাকার লভ্যাংশ পেয়েছিল। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের একটি রিপোর্ট বলছে, শুধুমাত্র ভারতীয় বিজ্ঞাপনদাতাদের থেকেই এই বিশ্বকাপে প্রায় ৪০০ মিলিয়ন ডলার বা ৩ হাজার ৩০০ কোটি টাকার বেশি আয় করতে চলেছে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড ও আইসিসি। টিভি বিজ্ঞাপনে ১০ সেকেন্ডের স্লটের দাম প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠতে পারে। আর এই অবস্থায় বেশ কিছু কোম্পানি রয়েছে যারা সত্যিই লাভবান হবে। আর তাদের শেয়ারে এখন থেকে বিনিয়োগ করলে লাভবান হতে পারেন আপনিও।
১. আইআরসিটিসি (IRCTC)
ভারতীয় রেলের অধীনস্থ এই সংস্থা ৪ ধরনের ব্যবসায় নিযুক্ত। কেটারিং ও হসপিটালিটি, পানীয় জল, ইন্টারনেট টিকিট বুকিং ও ভ্রমণ এবং পর্যটন ব্যবসায় যুক্ত এই কোম্পানি। ভারতের রেল স্টেশন ও ট্রেনে আইআরসিটিসি ছাড়া অন্য কোনও কোম্পানির খাবার ও পানীয় জল ছাড়া অন্য কিছু পাওয়া যায় না। আবার ইন্টারনেটে ট্রেনের টিকিট কাটতে গেলে আইআরসিটিসির ওয়েবসাইট ছাড়া অন্য কোথাও থেকে কাটাও সম্ভব নয়। ফলে আইআরসিটিসি এই সব ক্ষেত্রে একচেটিয়া ব্যবসা করে। এছাড়াও ভারতীয় রেলের বেশ কিছু পর্যটনমূলক ট্রেন যেমন, মহারাজা এক্সপ্রেস, ভারত দর্শন বা গোল্ডেন চ্যারিয়ট পরিচালনা করে আইআরসিটিসি। আর ভারতে বিশ্বকাপ হলে অনেকেই ট্রেনে সফর করবেন বা মহারাজা এক্সপ্রেস বা গোল্ডেন চ্যারিয়টের মতো বিলাসবহুল ট্রেনে চেপে বিভিন্ন জায়গা ভ্রমণ করবেন। ফলে শেয়ারের দাম বাড়তে থাকবে আইআরসিটিসির। যদিও গত ১ বছরে আইআরসিটিসি -৩.৫৮ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
২. ইন্টারগ্লোব এভিয়েশন (Indigo)
ইন্টারগ্লোব এভিয়েশনের ব্র্যান্ড ইন্ডিগো ভারতে প্যাসেঞ্জার ও কার্গো পরিবহণ করে থাকে। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, ভারতের অভ্যন্তরে বিমান পরিবহণে ইন্ডিগোর হাতে ৫৬ শতাংশের বেশি বাজার রয়েছে। এছাড়াও বৈদেশিক ক্ষেত্রেও তাদের বেশ ভালরকম বাজার রয়েছে। ফলে ভারতে ক্রিকেট বিশ্বকাপের সময় দেশের মধ্যে বা দেশের বাইরে থেকে যাত্রী পরিবহণের ক্ষেত্রে অন্য বিমান সংস্থাগুলোর তুলনায় কয়েক যোজন এগিয়ে রয়েছে ইন্ডিগো। গত ১ বছরে ইন্ডিগোর শেয়ার ১৮.৬ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে।
৩. ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড (IHCL)
টাটা গ্রুপের অধীনস্থ এই সংস্থা হোটেল ও হস্পিটালিটি ব্যবসায় প্রায় ১২০ বছর ধরে রাজ করছে। ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেডের হোটেল ব্যবসা ১২টি দেশের ছড়িয়ে। ১২৫-এর বেশি যায়গায় তাদের হোটেল বা রিসর্ট রয়েছে। তাজ, ভিভান্তা, জিঞ্জার, সিলেকশনস, এক্সপ্রেশনসের মতো বড় বড় বিলাসবহুল হোটেল ব্র্যান্ডের মালিক ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেড। ফলে বাইরে থেকে ভারিতে আসা বিদেশিদের অনেকেই এই ধরণের হোটেলে থাকবেন বা যে সমস্ত ভারতীয় খেলা দেখার জন্য এক শহর থেক অন্য শহরে পাড়ি জমাবেন তারাও ইন্ডিয়ান হোটেলস কোম্পানি লিমিটেডের কোনও হোটেলেই থাকতে পারেন। ফলে বিশ্বকাপের সময় অবশ্যই বেশ বড় লাভের মুখ দেখতে চলেছে টাটা গোষ্ঠীর হোতেল ব্যবসা। আর তার প্রভাব পড়বে কোম্পানির শেয়ারেও। গত ১ বছরে টাটা গোষ্ঠীর অধীনস্থ এই সংস্থা ৪২ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে।
৪. জোম্যাটো (Zomato)
২০০৮ সালে শুরু হওয়া এই স্টার্ট-আপ বর্তমানে ভারতের সবচেয়ে বড় ফুড ডেলিভারি প্ল্যাটফর্ম। জোম্যাটো বিজনেস টু বিজনেস ও বিজনেস টু কমসিউমার দুই সেগমেন্টেই পরিচালিত হয়। এছাড়াও ব্লিঙ্কইটের মতো কোম্পানির মাধ্যমে মুদিখানা দ্রব্যও ডেলিভারি করে তারা। জোম্যাটো গোল্ডের মতো পরিষেবা নিয়ে এসে জোম্যাটোর লভ্যাংশের পরিমাণ বহুলাংশে বেড়েছে। আর খেলা দেখার মাঝে কিছু খেতে ইচ্ছা হলে ভারতবাসীর কাছে এই মুহূর্তে জোম্যাটোর থেকে ভাল অপশন আর কিছুই নেই। গত ১ বছরে জোম্যাটো ৫২ শতাংশের বেশি রিটার্ন দিয়েছে।
উপরে বলা কোনও শেয়ারেই বিনিয়োগ করতে বলে না TV9 বাংলা। বা এর উপর ভিত্তি করেই আপনাকে বিনিয়োগ করতে হবে এমনটাও নয়। গত এক বছরের রিটার্নের কথাই বলা হয়েছে এই রিপোর্টে। তবে সেখানে এখন বিনিয়োগ সঠিক কি না তা অবশ্যই আপনার সিদ্ধান্ত।
*যে কোনও রকম বিনিয়োগে ঝুঁকি রিয়েছে। বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথিপত্র মিলিয়ে দেখে নিন।