কোহিমা: পুরো পরিবারের হয়ে ভোট দিচ্ছেন পরিবারের কোনও এক সদস্য। এমনটা কোথাও হয়? অবিশ্বাস্য মনে হলেও ২৭ ফেব্রুয়ারি নাগাল্যান্ডে সর্বশেষ যে ভোটগ্রহণ হয়েছে, তাতে নাগাল্যান্ডের একের পর এক গ্রামে এই দৃশ্য দেখা গিয়েছে। নির্বাচনের আগে কোনও প্রার্থীকে ভোট দিলে কত টাকা পাওয়া যাবে, তা ঠিক করতে সভাও করা হয়েছে। কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য মিলেছে ২৫ হাজার, কোনও প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার মূল্য পাওয়া গিয়েছে ৫০ হাজার টাকা। এমনটাই সূত্রের খবর। আর এর পিছনে রয়েছে নাগাল্যান্ডের এক প্রাচীন প্রথা বা ব্যবস্থা, ‘গাঁওবুড়া’। ভারতীয় গণতন্ত্রের মূল ভিত্তিই হল সুষ্ঠু নির্বাচন। নির্দিষ্ট সময় অন্তর অন্তর ভারতের নির্বাচন কমিশনের আওতায় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩২৬ অনুযায়ী ১৮ বছরের ঊর্ধ্বে বয়স এমন সকল নাগরিকের ভোটাধিকার রয়েছে। কে কাকে ভোট দেবে, সেই বিষয়ে চাপ দেওয়াটাও বেআইনি। অথচ, গাঁওবুড়া প্রথার দৌলতে মেঘালয়ে সেই কাজই হয়ে চলেছে।
মেঘালয়ের বেশিরভাগ গ্রামেই এখনও গাঁওবুড়া ব্যবস্থা চালু আছে। প্রতি গ্রামে একজন করে গাঁওবুড়া বা রাজা থাকেন। তাঁকে গ্রাম পরিচালনার কাজে সহায়তা করতে চারজন সহকারী গাঁওবুড়া এবং একটি গ্রাম পরিষদ থাকে। বহু প্রাচীনকাল থেকেই নাগাল্যান্ডে এই ঐতিহ্য চালু আছে। বংশ পরম্পরায় একই বংশের সদস্যরা গাঁওবুড়া হন। সহকারী গাঁওবুড়াদের ক্ষেত্রেও উত্তরসূরিরাই পরবর্তী সহকারী গাঁওবুড়া হন। প্রতিটি গ্রামের নিজস্ব নিয়ম-কানুন থাকে। গ্রাম পরিষদের সঙ্গে পরামর্শ করেই গাঁওবুড়া এবং সহকারী গাঁওবুড়ারা এই সকল নিয়ম কানুন তৈরি করেন। গাঁওবুড়ার নির্দেশ গ্রামের সকলকেই মেনে চলতে হয়। এই গাঁওবুড়ারাই ঠিক করেছেন, বুথে যাতে বেশি ভিড় না হয়, তার জন্য প্রতি পরিবার থেকে একজন করে ভোট দিতে আসবেন। এবারও সেইভাবেই ভোট হয়েছে। ২৭ ফেব্রুয়ারির আগেই চিঠি দিয়ে প্রতিটি পরিবারকে এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল।
যদি কখনও গ্রামের নিয়ম-কানুন বদলাতে হয়, সেই ক্ষেত্রে গাঁওবুড়ার বাড়িতেই সভা ডাকা হয়। যেখানে আলোচনার পরে আইন সংশোধন করা হয়। গ্রাম পরিষদের কোনও সিদ্ধান্তে গ্রামবাসীদের ভিন্নমত থাকলে, গাঁওবুড়াকে জানাতে হয়। সে যা সিদ্ধান্ত নেয়, তাই সকলকে মেনে নিতে হয়। এমনকি, গ্রামের উন্নয়নে যে অর্থ আসে তা কোথায় ব্যয় করা হবে, সেই বিষয়েও সিদ্ধান্ত নেয় গ্রাম পরিষদই। তবে চূড়ান্ত আদেশ দেয় গাঁওবুড়া। এমনকি, গাঁওবুড়া ব্যবস্থায় হস্তক্ষেপ করে না পুলিশও। ধর্ষণ বা হত্যার মতো গুরুতর মামলার ক্ষেত্রে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করতে গেলেও গাঁওবুড়ার অনুমতি নিতে হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই, মামলাটি আদালত পর্যন্ত গড়ায় না। গাঁওবুড়াই রায় ঘোষণা করেন।