পশ্চিম মেদিনীপুর: খদ্দরের বুশ আর উঁচু করে পরা ধুতি, এভাবেই সকলে চেনে গোপাল নন্দীকে। শুরু করেছিলেন সেই ৫৮ বছর আগে, ১৯৬৫ সালে। তারপর থেকে কখনও পঞ্চায়েতে কখনও পঞ্চায়েত সমিতিতে প্রার্থী হয়েছেন। কখনও কংগ্রেস, কখনও নির্দল কখনও তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন। আর তাঁর রেকর্ড হল, একবারও হারেননি। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই জয়ের ধারা অব্যাহত রাখলেন ৮৮ বছরের এই রাজনীতিবিদ। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার দাসপুর ১ নম্বর ব্লকের নন্দনপুর গ্রাম পঞ্চায়েতে তৃণমূল কংগ্রেসের টিকিটে প্রার্থী হয়েছিলেন তিনি। জয়ের বিষয়ে পুরোপুরি নিশ্চিত ছিলেন। পোস্টার-ব্যানার বা বাড়ি বাড়ি গিয়ে বিশেষ প্রচারও করেননি। মঙ্গলবার (১১ জুলাই), ফল বের হতে দেখা গেল, ২৫১ ভোটে জয়ী হয়েছেন তিনি। ফলে ৫৮ বছর ধরে তাঁর জয়ের রেকর্ড অক্ষুণ্ণই থাকল। আরও উল্লেখযোগ্য, এতগুলি জয়ের কোনওটিই কিন্তু বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নয়।
শুরু করেছিলেন কংগ্রেসের ঘর থেকে। ছাত্রজীবন থেকেই রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হয়েছিলেন গোপাল নন্দী। শোনা যায়, বাবা হরিপদ নন্দীর হাত ধরে একসময় ‘ভারত ছাড়ো’ আন্দোলনেও সামিল হয়েছিলেন। কংগ্রেস ছেড়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় তৃণমূল কংগ্রেস গঠন করার পর থেকেই ঘাসফুল শিবিরে আছেন এই প্রবীন নেতা। ৩৪ বছরের বাম জমানাতেও, কংগ্রেস বা তৃণমূল কংগ্রেসের প্রার্থী হওয়া গোপাল নন্দী হারেননি। আসলে, বিভিন্ন ক্ষেত্রে দুর্নীতির অভিযোগে, যখন জেরবার শাসক দল, সেই সময় পঞ্চায়েত এলাকায় অত্যন্ত সৎ মানুষ হিসেবে পরিচিত গোপাল নন্দী। মাঝে কয়েক বছর তিনি পঞ্চায়েত প্রধানের দায়িত্বেও ছিলেন। ২০১৩ সালে পঞ্চায়েত সমিতিতে জিতেছিলেন। বন ও ভূমি কর্মাধক্ষ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল তাঁকে।
দীর্ঘ দিন ধরে জিতে জিতে, নির্বাচনে জয়টা একপ্রকার অভ্যাসে পরিণত করেছেন গোপাল নন্দী। ইদানিং প্রচারেও যান না।, জেতার বিষয়ে এতটাই আত্মবিশ্বাসী তিনি। তিনি জানেন, সারা জীবন মানুষের পাশে থেকে কাজ করার চেষ্টা করেছেন। তাই আর আলাদা করে প্রচার করার প্রয়োজন নেই। এক সময় বিধানচন্দ্র রায়, অজয় মুখোপাধ্যায়দের সান্নিধ্য পেয়েছিলেন এই নেতা। দিন কয়েক আগে নবজোয়ার কর্মসূচিতে এসে, এই অশিতীপর নেতার সঙ্গে দেখা করে গিয়েছেন অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ও। আরও একবার পঞ্চায়েত ভোটে জিতে, এক প্রকার রেকর্ড গড়লেন গোপাল নন্দী।