নয়া দিল্লি: রাষ্ট্র সমর্থিত প্রাতিষ্ঠানিক উপায়ে হত্যা। পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচনে নজিরবিহীন হিংসা সম্পর্কে মন্তব্য করলেন বিজেপির জাতীয় মুখপাত্র সম্বিত পাত্র। মঙ্গলবার (১১ জুলাই), পঞ্চায়েত নির্বাচনের গণনার দিনই নয়া দিল্লিতে বাংলার পঞ্চায়েত ভোট নিয়ে এক সাংবাদিক বৈঠক করলেন তিনি। তৃণমূল কংগ্রেস সরকারের অধীনে বাংলায় উত্তরোত্তর হিংসা বাড়ছে বলে অভিযোগ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়কে ‘নির্মম বন্দ্যোপাধ্যায়’ বলে কটাক্ষ করেছেন। বাংলার হিংসার বিষয়ে নীরব থাকার জন্য দেশের অন্যান্য বিরোধী দলগুলিকেও একহাত নিয়েছেন সম্বিত পাত্র। তিনি প্রশ্ন ছোড়েন, “রাহুল গান্ধীর ‘মহব্বত কা দুকান’ কোথায় গেল? বাংলার নির্বাচনে হিংসা নিয়ে রাহুল গান্ধী নিশ্চুপ কেন?”
বাংলা ভাষায় সম্বিত পাত্র বলেন, “বাংলার গণতন্ত্র রক্তস্নাত। এখানে ভোট হলে মানুষের প্রাণ চলে যায়। এখানে নিয়ম কানুনের কোনও বালাই নেই। মুখ্যমন্ত্রী নির্মম বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর পারিষদরা সরকারি আইনকে ক্ষমতায় টিকে থাকার মেশিনে পরিণত করেছে। আমি এই ব্যবস্থার তীব্র নিন্দা করি।” তিনি আরও জানান, পঞ্চায়ত নির্বাচনে ভয়াবহ হিংসায় বলি হয়েছেন ৪৫ জন। সোশ্যাল মিডিয়ায় যুগে কিছু লুকিয়ে রাখা যায় না। স্ট্রেচারে করে একের পর এক দেহ নিয়ে যেতে দেখা গিয়েছে। শুধুমাত্র বিজেপি কর্মীদের হত্যা করা হয়েছে এমনটা নয়। নিহতদের মধ্যে সিপিএম, কংগ্রেসের কর্মীরাও আছেন। প্রাণ গিয়েছে সাধারণ মানুষের। যারা শুধুমাত্র ভোট দেওয়ার জন্য রাজ্যে এসেছিলেন। শুধুমাত্র তৃণমূলকে ভোট না দেওয়ায় কারণে তাঁদের হত্যা করা হয়েছে। তিনি আরও জানিয়েছেন, বাংলার হিংসা নিয়ে তথ্য-প্রমাণের উপর ভিত্তি করে রিপোট তৈরি করবে বিজেপি। এনআইএ ও সিবিআই তদন্তের বিষয়েও বিবেচনা করা হবে বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, গোটা বাংলায় ‘ডায়মণ্ড হারবার মডেল’-এ ভোট হচ্ছে। অর্থাৎ, দাদাগিরি করে ক্ষমতা দখল করা হচ্ছে। বিরোধী প্রার্থীদের মনোনয়ন জমা দেওয়ার সময় বাধা দেওয়া হচ্ছে। মারধর করা হচ্ছে। ভয় দেখানো হচ্ছে। অপহরণ করা হচ্ছে। তারপরও কেউ মনোনয়ন জমা দিলে, তাকে সেই মনোনয়ন প্রত্যাহারের জন্য চাপ দেওয়া হচ্ছে। তারপরও যদিকেউ মনোনয়ন প্রত্যাহার না করে, তাকে অপহরণ-হত্যা-মারধর করা হচ্ছে। তাদের আত্মীয় পরিজনদের ভয় দেখানো হচ্ছে। ভোটারদের তৃণমূলে ভোট দিতে বাধ্য করা হচ্ছে। অন্য দলের ভোটারদের ক্রমাগত ভয় দেখানো হচ্ছে। পোলিং এজেন্টদের বুথে থাকতে দেওয়া হচ্ছে না। দেদার ছাপ্পা মারা চলছে। গণনার সময়ও বিরোধী দলের এজেন্টদের মারধর করা হচ্ছে। তিনি প্রশ্ন তোলেন, “এর নাম গণতন্ত্র?”
হিংসার প্রসঙ্গে বিরোধী জোটকেও আক্রমণ করেন সম্বিত পাত্র। বাংলায় যখন এই ধরনের বেনজির হিংসা চলছে, সেই সময় বিরোধীরা চুপ কেন সেই নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি বলেন, “কোথায় লালুপ্রসাদ যাদব, কোথায় নীতীশ কুমার, কোথায় মহব্বতের দোকান খোলা রাহুল গান্ধী? কারোর মুখ থেকে একটিও শব্দ বের হয়নি।” প্রশ্ন করেন, “রাহুল গান্ধী তো গোটা দেশে মহব্বতের দোকান খুলতে চেয়েছিলেন, তাহলে বাংলার হিংসার বিষয়ে তিনি চুপ কেন?” সম্বিত পাত্র দাবি করেন, আসলে রাহুল গান্ধী যে কোনও উপায়ে প্রধানমন্ত্রীর চেয়ারে বসতে চান। তাই কংগ্রেস কর্মীদের হত্যার পরও, তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে হাত মেলাতে দ্বিধা করবেন না। তাই তিনি তৃণমূল কংগ্রেসের এই হিংসা দেখেও না দেখার ভান করছেন, চুপ করে আছেন।