মুম্বই: পেশায় তিনি একজন আইনজীবী। তবে, মুম্বইয়ের বাসিন্দা আফরোজ শাহ একজন সমুদ্র প্রেমিকও বটে। আমরা অনেকেই নিজেদের সমুদ্রপ্রেমী বলে দাবি করে থাকি। কিন্তু, তারপর সমুদ্রের তীরে গিয়ে প্লাস্টিকের প্যাকেট, বোতলের মতো যতসব আবর্জনাও ফেলে থাকি। আফরোজ শাহ অবশ্য এই রকম নন। তিনি প্রকৃত অর্থেই সমুদ্রপ্রেমী। সমুদ্রের সৌন্দর্য এবং প্রাকৃতিক পরিবেশ রক্ষায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন তিনি। মুম্বইয়ের ভারসোভা সৈকত থেকে ৫০ লক্ষ কেজি আবর্জনা পরিষ্কার করেছেন। যে সমুদ্র সৈকতে একসময় আবর্জনার জেরে হাঁটাচলা করা যেত না, এখন সেই একই সৈকত একেবারে ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠেছে। পা পড়ছে পর্যটকদের।
আফরোজ শাহের এই পরিবেশ রক্ষার লড়াই শুরু হয়েছিল ২০১৫ সালে। সেই সময় ভারসোভা সমুদ্র সৈকত ছিল ৬ ফুট দীর্ঘ আবর্জনার স্তূপের নীচে। আপাত দৃষ্টিতে এই বিপুল আবর্জনা সাফ করা অসম্ভব বলে মনে হলেও দমে যাননি মুম্বইয়ের এই আইনজীবী তথা পরিবেশ যোদ্ধা। একেবারে ব্যক্তিগত উদ্যোগেই ভারসোভা সৈকত সাফাইয়ের কাজ শুরি করেন আফরোজ। তাঁকে দেখে এগিয়ে আসেন নাগরিক সমাজের অনেকেই। ক্রমে আফরোজ শাহের উদ্যোগ পরিণত হয়েছিল এক নাগরিক আন্দোলনে। ৮৫ সপ্তাহ ধরে একেবারে হাতে করে ৫০ লক্ষ কেজি আবর্জনা সাফ করেছেন তাঁরা।
কীভাবে শুরু করেছিলেন এই উদ্যোগ? আফরোজ শাহ জানিয়েছেন, ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে এই ভারসোভা সৈকতেই সাঁতার কাটতে আসতেন তিনি। তখন এই সৈকত ছিল একেবারে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। কিন্তু ২০১৫ সালে এই সৈকতে এসে মন খারাপ হয়ে গিয়েছিল তাঁর। ছোটবেলার দেখা ঝকঝকে সমুদ্র সৈকত তখন আবর্জনার স্তূপে পরিণত। অবস্থা এতটাই খারাপ ছিল যে, সেই জঞ্জাল সাফাই কোনওদিন সম্ভব নয় বলে মনে হয়েছিল তাঁর। আফরোজ বলেছেন, “কিন্তু কথায় বলে না, মানুষের ক্ষমতাকে আমরা খুব ছোট করে দেখি। এখনও পর্যন্ত আমরা ১০ কোটি টুকরো প্লাস্টিক সরিয়েছি এই সমুদ্র সৈকত থেকে। নাহলে সেগুলি সমুদ্রের জলে গিয়ে পড়ত। মাছ, পাখি বা অন্য সামুদ্রিক প্রাণীদের পেটে চলে যেত। এবং তাদের মৃত্যুর কারণ হতে পারত।”
সমুদ্র সৈকত পরিষ্কারের এই সবথেকে বড় অভিযান, বিশ্বব্যাপী বহু মানুষকে তাদের আশপাশের পরিবেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখতে অনুপ্রেরণা দিয়েছে। সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ২০১৬ সালে আফরোজ শাহকে ‘আর্থ চ্যাম্পিয়ন’ বলে ঘোষণা করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। সেই সঙ্গে বিশ্বব্যাপী ‘ক্লিন সি’ বা ‘পরিচ্ছন্ন সমুদ্র’ প্রচার শুরু করে রাষ্ট্রপুঞ্জ। ২০১৭-র ২৮ মে ‘মন কি বাত’ রেডিয়ো অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীও আফরোজ শাহের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেন। আফরোজ অবশ্য স্বীকৃতির পিছনে ছোটেন না। তিনি বলছেন, “দেশ আমাদের অনেক দিয়েছে। এবার চাওয়া বন্ধ করে দেশকে কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার পালা। শুধু ১৫ অগস্ট বা ২৬ জানুয়ারি, দেশকে ভালবাসি বললেই হবে না। এবার করে দেখাতে হবে। সংবিধানের ৫১-র ক অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রকৃতি মা এবং পরিবেশকে রক্ষা করা আমার আপনার সকলের কর্তব্য। এটা সরকারের যেমন দায়িত্ব, তেমন আমাদেরও দায়িত্ব।”