শিলং: বছর দুয়েক আগে বাংলায় বিজেপির ক্ষমতা দখলের আশা ভঙ্গ করেছিলেন। জয়ের হ্য়াটট্রিক করেছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পরপর তৃতীয় বারের জন্য মুখ্য়মন্ত্রীর মসনদে বসেন তিনি। এই জয় তৃণমূলকে অন্যই একটা আত্মবিশ্বাস পাইয়ে দিয়েছে। এই জয়ের মুহূর্ত থেকেই উত্তর-পূর্ব ও বাংলার বাইরে বিভিন্ন রাজ্যে ঘাসফুল ফোটানোর পরিকল্পনা করে তৃণমূল। আর ব্লু প্রিন্ট তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয় তৃণমূলের সেকেন্ড ইন কম্যান্ড অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাতে। ২১-র জুনেই তাঁকে সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক হিসেব নির্বাচন করা হয়। এদিকে এই দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকে কখনও ত্রিপুরা, গোয়া আবার কখনও মেঘালয়ে উড়ে গিয়েছেন তিনি। সেখানে জনসংযোগ কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। মেঘালয়ের ক্ষেত্রে সেই জনসংযোগ কর্মসূচি কতটা সফল হয়েছে তা বৃহস্পতিবারের ফলাফল দেখেই বোঝা যাবে।
গত বছর গোয়ায় বিধানসভা নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেসকে। সেই পরাজয়ের পর ২০২৩ সালে ত্রিপুরা ও মেঘালয় নির্বাচনের আরও একবার ক্ষমতা পরখের লড়াই। মেঘালয়ের উপর তৃণমূলের বিস্তার পরিকল্পনা অনেকাংশেই নির্ভরশীল বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। মেঘালয়ে নির্বাচনী প্রচারে গিয়ে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, তৃণমূল ধীরে ধীরে উত্তর-পূর্বের সব রাজ্যে যাবে। আর সেই সূচনাটা বোধহয় মেঘলায়ের জয়ের সঙ্গে আরও জোরদার হবে। ২৪-র নির্বাচনে বিজেপি চ্যালেঞ্জ জানানোর আগে মেঘালয়ে একটি নির্দিষ্ট সংখ্যক আসন জয়ে তৃণমূলের আত্মবিশ্বাস কিছুটা বাড়বে বলে অভিমত বিশেষজ্ঞদের।
তবে মেঘালয়ে পা রাখার পর থেকে খেলাটা তৃণমূলের পক্ষেই ছিল। ২০২১ সালের ২৫ নভেম্বর মেঘালয় কংগ্রেসের ১৭ জন বিধায়কের মধ্য়ে ১২ জন বিধায়কই তৃণমূলে যোগ দেন। কংগ্রেসের হাত ছেড়ে এসেছিলেন প্রাক্তন মুখ্য়মন্ত্রী মুকুল সাংমাও। আর রাতারাতি পাহাড়ের রাজ্যের রাজনৈতিক সমীকরণ বদলে যায়। কংগ্রেস থেকে বিরোধী দলের তকমা পেয়ে যায় তৃণমূল কংগ্রেস। বিরোধী হিসেবে যাত্রা শুরু করে সে রাজ্যে ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে ঘাসফুল শিবির। এর আগে মমতার দল বাংলার বাইরে কোথাও প্রধান বিরোধী দল হয়ে উঠতে পারেনি। রাজ্যের বাইরে এই প্রথম সেই জায়গা তৈরি করতে পারায় মেঘালয় নিয়ে বেশি প্রত্যাশী তৃণমূল কংগ্রেস। তাই নির্বাচনী প্রচারে কোনও ফাঁক রাখেনি তাঁরা। নির্বাচনের অন্তত পাঁচ মাস আগে তৃণমূল এই মেঘের রাজ্যে প্রচার শুরু করেছে। এক বছরের বেশি সময় ধরে রাজ্যে ধীরে ধীরে নিজেদের জমি তৈরি করেছে তারা। এবার এই জমি চষায় ফলন কেমন হয় তা আগামিকাল ফলাফল প্রকাশ থেকেই জানা যাবে।
এদিকে ২০২১-র বিধানসভা নির্বাচনের পর ত্রিপুরাকে পাখির চোখ করে দিল্লির পথ সুগম করতে চেয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস। টিলার রাজ্যে পা রাখার পর তৃণমূলের সামনে সবচেয়ে চ্য়ালেঞ্জ ছিল সেখানকার পুরভোট। সেখানে বিজেপির সহিংসতার অভিযোগ তুলে বারবার সরব হয় তৃণমূল কংগ্রেস। বাংলা থেকে উড়ে যায় তৃণমূলের দল। তবে পুরভোটে সেরকম ভাল ফল করতে পারেনি। ৩৩৪ আসনের মধ্যে ১২০ টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে মাত্র একটি আসন পায় তৃণমূল। ভোট শতাংশের নিরিখে তৃণমূলের ঘরে আসে প্রায় ২০ শতাংশ ভোট। তৃণমূল নিজেদেরই সান্ত্বনা দেয় যে, দু’মাসের মধ্যে এই ফল অনেকটাই সন্তোষজনক। তারপর ২০২৩-র বিধানসভা নির্বাচনে ভাল ফলের আশায় প্রচার জারি রাখে। যে জমি টিলার রাজ্যে বিজেপি তৈরি করেছে সেখানে তৃণমূল কীরকম ফল করে, তা জানা যাবে আর কয়েকঘণ্টার মধ্যেই।