আগরতলা: ত্রিপুরার বিধানসভা নির্বাচনের (Tripura Elections 2023) ফলঘোষণা হয়ে গিয়েছে। কিন্তু ভোট পরবর্তী সময়ে অশান্তি অব্যাহত। জায়গায় জায়গায় অভিযোগ উঠছে মারধর, লুঠপাটের। বাড়িতে বাড়িতে আগুন জ্বলছে। আক্রান্ত হচ্ছেন জয়ী, পরাজিত সব শিবিরে কর্মী ও সমর্থকরাই। কোথাও আক্রান্ত হচ্ছেন বিজেপি কর্মীরা, আবার কোথাও আক্রান্ত হচ্ছেন বাম কর্মী ও সমর্থকরা। এদিকে এই পরিস্থিতি কড়া হাতে দমন করতে তৎপর ত্রিপুরার পুলিশ প্রশাসনও। এখনও পর্যন্ত পুলিশের তরফে ভোট পরবর্তী এই অশান্তিতে ২০০ জনকে দুষ্কৃতীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এদিকে বেশ কিছু জায়গায় অশান্তি নিয়ে গুজব ছড়ানো হচ্ছে বলেও জানা গিয়েছে। ত্রিপুরার বেশ কয়েকটি জেলা পুলিশ প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, কোথাও কোথাও গুজব ছড়ানো হচ্ছে। সেগুলি নিয়ে পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ করবে। ইতিমধ্যেই স্পর্শকাতর এলাকাগুলিতে পুলিশের টহলদারি চলছে এবং সবরকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
এদিকে এদিন খোয়াইয়ে আক্রান্ত দলীয় কর্মীদের দেখতে গিয়েছিলেন ত্রিপুরার বিদায়ি মুখ্যমন্ত্রী মানিক সাহা। এই ধরনের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন তিনি। মানিক সাহা বলছেন, ‘এই ঘটনায় কাউকে রেয়াত করা হবে না। কোনও কোনও স্বার্থান্বেষী মহল যদি এই ঘটাচ্ছে। ১৬ ফেব্রুয়ারি শান্তিপূর্ণভাবে নির্বাচন হয়েছিল। তার পরবর্তীতেও শান্তি ছিল। কেউ বা কারা এর পিছনে রয়েছে, তা আমরা সকলেই জানি। এটিকে অনেকে ত্রিপুরার সংস্কৃতিতে পরিণত করার চেষ্টা করছে। কিন্তু কাউকে বরদাস্ত করা হবে না। ত্রিপুরার মানুষ শান্তি চায়।’ এদিন বিদায়ি মুখ্যমন্ত্রী এও জানিয়েছেন, ‘এই ঘটনায় কোথাও কোথাও আমাদের দলের কর্মীদের নামও সামনে আসছে।’ অর্থাৎ, নিজেদের দলের লোক কেউ জড়িত থাকলে, তাঁকেও যে রেয়াত করা হবে না, সেই কথাই বুঝিয়ে দিয়েছেন তিনি।
এদিন ত্রিপুরায় এসেছিলেন অসমের মুখ্যমন্ত্রী তথা উত্তর পূর্বে বিজেপির গুরু দায়িত্বে থাকা হিমন্ত বিশ্বশর্মাও। তিনিও ত্রিপুরার বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছেন। এই ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয় বলে মনে করছেন তিনিও এবং তাঁর বিশ্বাস ত্রিপুরার প্রশাসন এই বিষয়টি মোকাবিলা করতে পারবে। এই ধরনের ঘটনা বন্ধ হওয়া প্রয়োজন বলেও এদিন জানিয়েছেন হিমন্ত বিশ্বশর্মা।
নির্বাচনোত্তর পরিস্থিতিতে আইন-শৃঙ্খলা ও শান্তি বজায় রাখার জন্য শনিবার খোয়াই এবং সিপাহীজলা জেলায় আধিকারিকদের নিয়ে শনিবার বৈঠক করেন মানিক সাহা, রাজীব ভট্টাচার্যরা। সিপাহীজলায় পুলিশ সুপার জানিয়েছেন, সেখানে বাঙালি ও জনজাতিদের মধ্যে যে অশান্তির কথা ছড়িয়েছে, তা সম্পূর্ণ গুজব ও ভিত্তিহীন।
সিপিএম নেতৃত্বের থেকেও এই পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে বলা হয়েছে, যা চলছে তা সমর্থনযোগ্য নয়। প্রশাসনের উচিত এগুলি কঠোরভাবে মোকাবিলা করা। ভোটের পর বিরোধীদের উপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে, তা কোনওভাবেই কাম্য নয়। পাশাপাশি, রামচন্দ্রঘাট বিধানসভা এলাকায় তিপ্রা মথার জয়ী প্রার্থী রঞ্জিত দেববর্মা এদিন বাড়ি বাড়ি ঘুরে সাধারণ মানুষকে শান্তি শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য আবেদন জানান।