নয়া দিল্লি: চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান-৩ (Chandrayaan-3)। মাহেন্দ্রক্ষণ সন্ধে ৬টা ৪ মিনিট। দেশ তথা গোটা বিশ্বই এখন চন্দ্রযান-৩ এর অবতরণের অপেক্ষার। সবকিছু ঠিক থাকলে, চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে সফট ল্যান্ডিং (Soft Landing) করবে চন্দ্রযান-৩। এখনও অবধি সবকিছু ঠিকঠাকই চলছে চন্দ্রাভিযানের, ল্যান্ডিং পিছনোর কোনও সম্ভাবনা নেই। ইসরোর তরফে এমনটাই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। এর আগে সোমবারই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার কথা ছিল রাশিয়ার চন্দ্রযান লুনা-২৫(Luna-25)-এর। কিন্তু শেষ মুহূর্তে এসে ব্যর্থ হয় সেই অভিযান। চাঁদের বুকে আছড়ে পড়ে লুনা-২৫। আগামী মাসে জাপানও চন্দ্রযান পাঠাচ্ছে। এবার প্রশ্নটা হচ্ছে, সমস্ত দেশই চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে নামার চেষ্টা করছে কেন?
চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার পর ১৪ দিন থাকবে চন্দ্রযান-৩ এর ল্যান্ডার বিক্রম ও রোভার প্রজ্ঞান, যা চাঁদের সময়ে মাত্র ১ দিন। চাঁদের জমিতে থাকা জল ও মাটি সংগ্রহ করবে এই রোভার। চাঁদের সবথেকে মূল্যবান সম্পদ হল এই জল। সেই জলের খোঁজেই চাঁদের মাটিতে নামবে চন্দ্রযান-৩।
চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ- দুই মেরুতেই অধিকাংশ জায়গা অন্ধকার। সেখানে সূর্যালোক পৌঁছয় না। চাঁদের পৃষ্ঠে এই সমস্ত জায়গায় তাপমাত্রা মাইনাস ২৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস অবধি হতে পারে। এই অংশে বড় বড় গর্তও রয়েছে। ফলে আগে যেক’টি চন্দ্রাভিযান হয়েছে, তাতে চাঁদের এই অংশ ‘অদেখা’ই রয়ে গিয়েছে। বৈজ্ঞানিকদের মতে, অতিরিক্ত শীতল তাপমাত্রার কারণে চাঁদের এই পৃষ্ঠে সমস্ত কিছু হিমায়িত বা বরফ হয়ে রয়েছে। কয়েক হাজার বছর পরও তাতে কোনও পরিবর্তন হয়নি। ফলে চাঁদের উত্তর ও দক্ষিণ মেরুতে থাকা মাটি ও পাথর সৌরজগতের উৎপত্তি বা প্রাথমিক সময়ের অনেক তথ্য জানাতে পারে। এই মাটি সংগ্রহ করতেই যাচ্ছে চন্দ্রযান-৩।
উল্লেখ্য, এর আগে, ২০১৯ সালে চন্দ্রযান-২ এর পরিকল্পনাও ছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণ করার। কিন্তু সেই সময়ে সফট ল্য়ান্ডিং ব্যর্থ হয়। চাঁদের মাটিতে অবতরণের পরই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়।
২০০৮ সালে ব্রাউন ইউনিভার্সিটির গবেষকরা ফের ওই নমুনা পরীক্ষা করেন আধুনিক প্রযুক্তির সাহায্য নিয়ে। সেই গবেষণায় হাইড্রোজেন নমুনা পাওয়া যায়। ২০০৯ সালে চন্দ্রযান-১ এ থাকা নাসার যন্ত্রাংশও চাঁদের পৃষ্ঠে জলের অস্তিত্ব খুঁজে পায়। একই বছরে নাসাও চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে মাটির নীচে বরফ খুঁজে পায়।
বৈজ্ঞানিকদের দাবি, চাঁদের বুকে থাকা জল বা বরফ চাঁদের পৃষ্ঠে অগ্নুৎপাত বা লুনার ভলকানো সম্পর্কে তথ্য জানাতে পারে। এছাড়া পৃথিবীর বুকে আছড়ে পড়া ধূমকেতু ও গ্রহাণু সম্পর্কেও অনেক অজানা তথ্য জানা যেতে পারে। সমুদ্রের উৎপত্তি কোথা থেকে হল, তাও জানা যেতে পারে চাঁদের বুকে থাকা জল থেকে।
যদি চাঁদে পর্যাপ্ত পরিমাণ জল থাকে, তবে পরবর্তী সময়ে চন্দ্রাভিযানে পানীয় জল নিয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না মহাকাশচারীদের। ওই জলই আবার ভেঙে অক্সিজেন ও হাইড্রোজেনে পরিণত করা যাবে, যা নিশ্বাস নিতে ও জ্বালানিতে সাহায্য করবে।