TV9 Explained: দশ বছর দেশ শাসন করেও UPA-এর থেকে কেন জন্ম নিল INDIA

TV9 Bangla Digital | Edited By: Amartya Lahiri

Jul 20, 2023 | 10:33 PM

United Progressive Alliance: কেন ইউপিএ গঠনের প্রয়োজন হয়েছিল? কী কী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই জোটকে? ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের আনুষ্ঠানিক অবসানের সময়, আসুন জেনে নেওয়া যাক এই জোট সম্পর্কে।

TV9 Explained: দশ বছর দেশ শাসন করেও UPA-এর থেকে কেন জন্ম নিল INDIA
ইউপিএ জোটের অবসানে জন্ম নিয়েছে নয়া ইন্ডিয়া জোট
Image Credit source: TV9 Bangla

Follow Us

নয়া দিল্লি: ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনকে মাথায় রেখে জোট বাঁধছে বিরোধী দলগুলি। এর আগে প্রায় দুই দশক ধরে কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন জোটের নাম ছিল ইউপিএ, অর্থাৎ, ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স। মূলত, এনডিএ সরকারকে ক্ষমতা থেকে দূরে রাখতেই ২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর এই জোট জন্ম নিয়েছিল। ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবির পর থেকে এই ইউপিএ-র অস্তিত্ব আর ছিল না বললেই চলে। তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে এই জোট ভাঙা হয়নি। মঙ্গলবার (১৮ জুলাই), বেঙ্গালুরুতে বিজেপি বিরোধী ২৬টি দল তৈরি করেছে নয়া জোট, ইন্ডিয়া, বা ইউনাইটেড ন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টাল ইনক্লুসিভ অ্যালায়েন্স। আনুষ্ঠানিকভাবে অবলুপ্তি ঘটেছে ইউপিএ জোটের। গত দুই দশকে অনেক উত্থান পতনের মধ্য দিয়ে গিয়েছে এই জোট। যেমন এসেছে সাফল্য, মুখোমুখি হতে হয়েছে অসংখ্য চ্যালেঞ্জেরও। সব মিলিয়ে ইউপিএ মানে ভারতের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অন্যতম অধ্যায়। কেন ইউপিএ গঠনের প্রয়োজন হয়েছিল? কী কী চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যেতে হয়েছে এই জোটকে? ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্সের আনুষ্ঠানিক অবসানের সময়, আসুন জেনে নেওয়া যাক এই জোট সম্পর্কে।

কেন ইউপিএ?

২০০৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে কোনও দলই নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। ১৪৫টি আসনে জিতে কংগ্রেস হয়েছিল সবথেকে বড় দল। সাতটি আসন কম পেয়েছিল বিজেপি। অটলবিহারী বাজপেয়ী সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরাতে ধর্মনিরপেক্ষ বিরোধী দলগুলি জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। বামফ্রন্টের ৫৯ জন সাংসদ ইউপিএ-কে বাইরে থেকে সমর্থন দিয়েছিল। সমাজবাদী পার্টির ৩৯ জন এবং বহুজন সমাজ পার্টির ১৯ জন সাংসদ ইউপিএ-কে সমর্থন করেছিলেন। মনমোহন সিং হয়েছিলেন ইউপিএ সরকারের প্রধানমন্ত্রী।

ইউপিএ-র গঠন

এই জোট গঠনের প্রচেষ্টায় নেতৃত্ব দিয়েছিলেন প্রবীণ কমিউনিস্ট নেতা, তথা, সিপিআইএম-এর তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, হরকিশেন সিং সুরজিৎ। কংগ্রেস এবং সুরজিত ১৪টি দলকে একত্রিত করেছিলেন – আরজেডি, ডিএসকে, এনসিপি, পিএমকে, টিআরএস, জেএমএম, এলজেপি, এমডিএমকে, এআইমিম, পিডিপি, আইইউএমএল, আরপিআই (এ), আরপিআই (জি) এবং কেসি (জে)। চার বাম দল – সিপিএম, সিপিআই, আরএসপি এবং ফরওয়ার্ড ব্লক এই সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন করেছিল। কংগ্রেস আমন্ত্রণ না জানালেও, সমাজবাদী পার্টি এবং আরএলডি-কে জোটে নিয়ে এসেছিলেন সুরজিৎ। ২০০৪-এর ১৭ মে একটি সাধারণ ন্যূনতম কর্মসূচি তৈরি করা হয়। ‘প্রগতিশীল ধর্মনিরপেক্ষ জোট’ বা ইউনাইটেড প্রোগ্রেসিভ অ্যালায়েন্স নামটি প্রস্তাব করেছিলেন, প্রয়াত ডিএমকে প্রতিষ্ঠাতা এম করুণানিধি। ২২ মে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন মনমোহন সিং। ইউপিএ সরকারের । আরও যাঁরা মন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন, তাঁরা হলেন – এনসিপি প্রধান শরদ পওয়ার, আরজেডি সভাপতি লালুপ্রসাদ যাদব, এলজেপি প্রধান রাম বিলাস পাসওয়ান, জেএমএম প্রধান শিবু সোরেন, টিআরএস প্রধান কে চন্দ্রশেখর রাও, ডিএমকে-র টিআর বালু, দয়ানিধি মারান ও এ রাজা, পিএমকে প্রধান এস রামাদসের ছেলে অম্বুমণি রামাদস। .

চার বছরেই সংখ্যালঘু ইউপিএ

২০০৬ সালে প্রথম ইউপিএ জোট ত্যাগ করে কেসিআর-এর টিআরএস। তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে গিয়েছিল তারা। এরপর ইউপিএ ছাড়ে ভাইকোর এমডিএমকে। ন্যূনতম সাধারণ কর্মসুচির কোনও প্রকল্প সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হচ্ছে না, এই অভিযোগ করে ২০০৭ সালে জোট ত্যাগ করে তারা। তবে ইউপিএ সবথেকে বড় ধাক্কা খেয়েছিল ২০০৮ সালে। ভারত-মার্কিন পরমাণু চুক্তি নিয়ে দ্বন্দ্বের প্রেক্ষিতে সমর্থন প্রত্যাহার করেছিল চার বাম দল। ২০০৫ সালে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের মার্কিন সফরেই এই চুক্তি নিয়ে কথা উঠেছিল। পরের তিন বছর, কংগ্রেস এবং বামপন্থীদের মধ্যে এই নিয়ে তীব্র মতানৈক্য চলে। অবশেষে, সরকার ত্যাগ করেছিল বামেরা। কংগ্রেসের পর, জোটের সবথেকে বড় শরিক চলে যাওয়ায় সংখ্যালঘু হয় পড়েছিল ইউপিএ সরকার।

মনমোহনের পাশে মুলায়ম

সেই সময় সরকার বাঁচাতে এগিয়ে এসেছিলেন মুলায়ম সিং যাদব। ২০০৪-এ র ইউপিএ জোটে আমন্ত্রণ না পেয়ে অপমানিত বোধ করেছিল যে সমাজবাদী পার্টি, তারাই ইউপিএ সরকারের প্রতি সমর্থন দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব থেকে বাঁচিয়ে দিয়েছিল মনমোহন সরকারকে। তবে, এরপরও ইউপিএ-র ভাঙন বন্ধ হয়নি। ২০০৯ সালে নিজ নিজ রাজ্যের নির্বাচনী অঙ্কে জোটত্যাগ করে পিডিপি এবং পিএমকে। তামিলনাড়ুতে ডিএমকে-কংগ্রেসের বিরুদ্ধে এআইএডিএমকে-র সঙ্গে জোট করে পিএমকে, আর জম্মু ও কাশ্মীরে সরকার গঠনের জন্য কংগ্রেসের বিরুদ্ধে ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে জোট বাঁধে পিডিপি।

২০০৯-এ বিস্ময়কর জয়

একের পর এক জোট সঙ্গী বেরিয়ে যাওয়ায়, অনেকেই ভেবেছিলেন ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে ভরাডুবি হতে চলেছে ইউপিএ-র। আশ্চর্যজনকভাবে ২০৬ আসনে জিতে ক্ষমতায় ফিরেছিল কংগ্রেস। পাঁচ বছর আগের তুলনায় অনেক ভাল অবস্থানে থাকলেও, সরকার গঠনের জন্য তখনও জোটসঙ্গীদের প্রয়োজন ছিল কংগ্রেসের। আর সেই সঙ্গীর ভূমিকা নিয়েছিল তৃণমূল কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রেল মন্ত্রক দেওয়া হয়েছিল। তবে, ইউপিএ-১ এর তুলনায় এবার কংগ্রেসের জোট শরিকদের সংখ্যা ছিল কম। মন্ত্রিসভায় জায়গা পেয়েছিল কংগ্রেস ছাড়া মাত্র পাঁচটি দল – তৃণমূল কংগ্রেস, এনসিপি, ডিএমকে, ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং ইন্ডিয়ান ইউনিয়ন মুসলিম লিগ। আরজেডি, সপা এবং বিএসপিও এই সরকারকে সমর্থন করেছিল। তবে, ২০১০-এ রাজ্যসভায় মহিলা সংরক্ষণ বিলের প্রতিবাদে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেন লালু। এআইমিম, ভিসিকে, সিকিম ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট এবং বোড়োল্যান্ড পিপলস ফ্রন্ট-সহ বেশ কিছু দল সরকারের অংশ হলেও, তাদের কোনও মন্ত্রিত্ব ছিল না।

সমস্যা জর্জরিত ইউপিএ-২

২০১২ সালে একসঙ্গে জোড়া ধাক্কা খেয়েছিল ইউপিএ-২। মার্চে সরকার ত্যাগ করেছিল ডিএমকে। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তাদের উদ্বেগ রাষ্ট্রপুঞ্জে প্রকাশ না করায় সরে গিয়েছিল তারা। সেই বছরই সেপ্টেম্বরে, এফডিআই বিলের প্রতিবাদে সরকার ছাড়ে তৃণমূল কংগ্রেস। ঝাড়খণ্ডের জেভিএম-পি এবং এআইমিমও সেই বছরই ইউপিএ ছাড়ে। এছাড়া, ইউপিএ-২ সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কেলেঙ্কারির অভিযোগও উঠেছিল। ২জি স্পেকট্রাম কেলেঙ্কারি থেকে কমনওয়েলথ গেমস কেলেঙ্কারি-সহ বহু অভিযোগ তুলেছিল বিজেপি।

২০১৪-র ভরাডুবি

২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে, আরও বেশ কিছু দল ইউপিএ জোট ভেঙে এককভাবে নির্বাচনী ময়দানে নেমেছিল। কংগ্রেসের ভরাডুবি দেখেছিল এই নির্বাচন। মাত্র ৪৪ আসনে জিততে পেরেছিল শতাব্দী প্রাচীন দলটি। যা এখনও পর্যন্ত লোকসভায় তাদের সবথেকে খারাপ ফল। ইউপিএ জিতেছিল মাত্র ৬০ আসনে। কেন্দ্রে এসেছিল নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন এনডিএ সরকার।

‘ইউপিএ কী? ইউপিএ বলে কিছু নেই’

২০১৪ সালের পর, বস্তুত ইউপিএ-র আর কোনও অস্তিত্ব ছিল না। ২০২৩-এর ১৮ জুলাই পর্যন্ত শুধুমাত্র সনিয়া গান্ধীর পদ বলতে গিয়ে ইউপিএ চেয়ারপার্সন বলে উল্লেখ করা হত। দীর্ঘদিন ধরে ইউপিএ-র দলগুলির কোনও বৈঠক হয়নি। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনের আগেও জোটসঙ্গীদের কোনও বৈঠক হয়নি। ২০১৯ সালের নির্বাচনে ইউপিএ দলগুলি জিতেছিল মাত্র ৯১ আসনে। আগের নির্বাচনের থেকে সামান্য উন্নতি হয়েছিল কংগ্রেসের, জিতেছিল ৫২ আসনে। ২০২১ সালের নভেম্বরে, তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেন, “ইউপিএ কী? ইউপিএ বলে কিছু নেই।” ২০২৩-এর ১৮ জুলাইয়ে সরকারিভাবেই আর ইউপিএ বলে কিছু রইল না। তার জায়গা নিয়েছে আরও বৃহত্তর জোট, ‘ইন্ডিয়া’। ইউপিএ-র পুরোনো সঙ্গীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে শিবসেনা (উদ্ধব)-এর মতো আরও কিছু নতুন দল। ২০০৪-এ নির্বাচনের পর গঠিত হয়েছিল ইউপিএ। ইন্ডিয়া জোট গঠন করা হয়েছে নির্বাচনের আগে। এই জোট, আসন্ন লোকসভা নির্বাচনে এনডিএ-কে কতটা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে পারে, এখন সেটাই দেখার।

Next Article