কলকাতা: একটা ক্যামেরা। তাকে নিয়ে যত কাণ্ড। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে কবে বসবে সিসি ক্যামেরা? কোথায় কোথায় বসবে? এই নিয়ে জল্পনার মধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে নতুন করে জট। উপাচার্য বারবার বললেও এখনই বিশ্ববিদ্যালয়ের সিসি ক্যামেরা বসছে না। কর্মসমিতির ছাড়পত্র ছাড়া নজরদারি ক্যামেরা বসাতে চাইছেন না কর্তৃপক্ষ। ফলে কর্মসমিতির বৈঠক না হওয়া পর্যন্ত ঝুলেই থাকছে সিসি ক্যামেরা বসানোর বিষয়টি।
বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে ইউজিসি-র নির্দেশিকা রয়েছে অনেকদিন ধরেই। কিন্তু এত দিন গা করেনি যাদবপুর। দিব্যি চলে যাচ্ছিল নজরদারি ছাড়াই। কিন্তু গত ৯ অগাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের মেন হস্টেলে প্রথম বর্ষের পড়ুয়ার মৃত্যুর পরে ‘বুদ্ধি বেড়েছে’। কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, সিসি ক্যামেরা দিয়ে মুড়ে ফেলা হবে বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর। কিন্তু এত দিন কেন ছিল না নজরদারি ক্যামেরা? কোনও কোনও মহলের অভিযোগ, ছাত্রদের একাংশের আপত্তির জেরেই অধিকাংশ জায়গায় সিসি ক্যামেরা বসানো যায়নি। ৯ অগাস্টের মর্মান্তিক ঘটনার পরেও নজরদারি ক্যামেরার বিরোধিতায় তাঁরা অনড়।
যাদবপুরের এক পড়ুয়া বলেন, “যে পাঁচটা ছেলে আছে তাঁরা বাদ দিয়ে বাকি পঞ্চাশটা ছেলের উপর নজরদারি শুরু করে দিল এটা মানব না।”
বিরোধিতা যতই থাক, এ বার যাদবপুরের ভিতরে-বাইরে সিসি ক্যামেরার দাবি তার থেকে অনেক বেশি প্রবল। সংশ্লিষ্ট মহলগুলির বেশির ভাগেরই বক্তব্য, ইউজিসির নির্দেশিকা মেনে নজরদারি ক্যামেরা বসানো হোক বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে। বিশ্ববিদ্যালয়েরই অপর পড়ুয়া বলেন, “সিসিটিভি ক্যামেরা বসানো লাগানো যেতেই পারে। এতে অসুবিধার কিছু নেই।”
নড়েচড়ে বসেছেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষও। সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে উদ্যোগী হন অন্তবর্তীকালীন উপাচার্য। কোথায় কোথায় সিসিটিভি বসবে বুধবার বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে তাও ঠিক করে ফেলেন তিনি। উপাচার্য বলেন, “আপাতত হস্টেল গেটের সামনে বসবে। তারপর কোথায় কী বসানো যায় সেটা স্ট্রাটেজিক প্ল্যান।”
কিন্তু বসাবো বললেই তো আর বসানো যায় না! সরকারি লাল ফিতের ফাঁস বড় সহজ জিনিস নয়! বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্য কর্তাদের বক্তব্য, কর্মসমিতির অনুমোদন ছাড়া নজরদারি ক্যামেরা বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সম্ভব নয়। আবার অস্থায়ী উপাচার্য কর্মসমিতির বৈঠক এখনই ডাকতে পারবেন কি না, তা নিয়েও মতান্তর রয়েছে। ফলে খানিকটা বাধ্য হয়েই রণে ভঙ্গ দিয়েছেন উপাচার্য। সিসি ক্যামেরা কবে বসবে, তা নিয়েও তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য বুদ্ধদেব সাউ বলেন, “দ্রুত ইসি ডাকব।” রেজিস্ট্রার স্নেহমঞ্জু বসু বলেন, “ইসির মিটিং ডাকা না হলে পলিসি নেওয়া যাবে না ”
যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসমিতিতে রাজ্য সরকার এবং আচার্যের মনোনীত প্রতিনিধি থাকেন। ফলে সিসি ক্যামেরা বসানো নিয়ে রাজ্য সরকার এবং রাজ্যপাল কী ভাবছেন, সেটা গুরুত্বপূর্ণ। রাজ্যের একের পর এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অস্থায়ী উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে রাজ্য সরকারের সঙ্গে রাজ্যপালের সংঘাত তুঙ্গে। যাদবপুরে পড়ুয়া মৃত্যু নিয়ে সরাসরি রাজ্যপালকে দায়ী করেছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। এখনর্যাগিং রুখতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর ব্যাপারে তাঁরা একমত হবেন কি?