কলকাতা: বুধবার সন্ধ্যায় ঐতিহাসিক মুহূর্তের সাক্ষী ছিল গোটা দেশ। সাক্ষী ছিল বাংলাও। চন্দ্রযান তিন মাটি ছুঁয়েছিল চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে। তার সঙ্গে সঙ্গেই ভারতের বীরগাথা ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা বিশ্বে। যে বীরগাথার অংশীদার বাংলাও। হ্যাঁ, ইসরোর মুন মিশনে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়েছিলেন এই বাংলার অন্তত ২৫জন বিজ্ঞানী, গবেষক। কেউ খড়্গপুর IIT-র, কেউ যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের (Jadavpur University), কেউ শিবপুর IIEST-র। এঁদের হাত ধরেই বাঙালি আজ পৌঁছে গেছে চাঁদের পাহাড়ে।
বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের চাঁদের পাহাড়ের কথা মনে আছে? পাড়াগাঁয়ের বেকার যুবক শঙ্কর। সে যেমন সাহসী, তেমনই আত্মপ্রত্যয়ী। ছোটবেলা থেকেই তার মন ছুটে বেড়ায় দূর-দূরান্তে রোমাঞ্চের খোঁজে। সেই নেশাতেই হীরের খনির সন্ধানে একদিন পৌঁছে যায় চাঁদের পাহাড়ে। বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপন্যাসের নায়কের মতোই বাংলার পাড়াগাঁয়ে ছড়িয়ে আছে অনেক শঙ্কর। ছোটবেলা থেকেই যাঁদের নেশা ছিল অজানাকে জানার। তাঁদের হাত ধরেই উপন্যাসের পাতা থেকে বেরিয়ে ভারত পৌঁছে গেছে বাস্তবের চাঁদের পাহাড়ে।
চন্দ্রাভিযানে বাংলার জয়জয়কার
মহাকাশ গবেষণার ক্যালেন্ডারে ২৩ অগাস্ট ভারতের বড়দিন হিসেবেই থেকে যাবে। এ দিনই চাঁদের মাটি স্পর্শ করে চন্দ্রযান তিনের ল্যান্ডার বিক্রম। ৪১ দিনের রুদ্ধশ্বাস অভিযান সফল। গোটা বিশ্বের তাবড় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার চর্চায় চন্দ্রযান-৩ এর সফল অবতরণ। এই সাফল্যে জড়িয়ে আছে বাংলার নামও।চাঁদের মাটিতে বিক্রমের সফট ল্যান্ডিং কর্মসূচিতে ইসরোর সহযোগীর ভূমিকায় ছিল দেশের কয়েকটি প্রথম সারির শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। তার মধ্যে ছিল যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ও। শুধু তাই নয়, মুন মিশনের সঙ্গে যুক্ত ইসরোর বিভিন্ন বিভাগের ২০০-রও বেশি বিজ্ঞানী, গবেষক। যাঁদের মধ্যে অন্তত ২৫ জন বাঙালি।
তালিকায় রয়েছেন শিবপুর IIEST-র জয়ন্ত লাহা, সুমিতেশ সরকার, দেবজ্যোতি ধর, রিন্টু নাথ। রয়েছেন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুজ নন্দী, বিজয়কুমার দাই, অমিতাভ গুপ্ত, রাজীব সাহা, সায়ন চট্টোপাধ্যায়, কৃশানু নন্দী, আর্য রানা। ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ স্পেস সায়েন্সেস অ্যান্ড টেকনোলজি বা IISST-র নীলাদ্রি মৈত্র, সৌরভ মাঝি, অভিজিৎ রায়। তালিকায় আছেন নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের মানস সরকার, বেলুড় রামকৃষ্ণ মিশনের অমিত মাঝি। এছাড়াও, রাজাবাজার সায়েন্স কলেজের ছাত্রী মৌমিতা সাহা, ডন বসকো স্কুলের সৌরভ বসু, জলপাইগুড়ি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কৌশিক নাগ, কল্যাণী গভর্নমেন্ট ইঞ্জিনায়রিং কলেজের পীযূষকান্তি পট্টনায়ক, শিলিগুড়ি SIT-র রূপর্ণা দত্ত, বহরমপুরকে এন কলেজের তসিকুল ওরা, তেজপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের চয়ন দত্ত, সল্টলেক টেকনো মেনের সৌম্যজিত্ চট্টোপাধ্যায়। আছেন তুষারকান্তি দাস। যিনি চন্দ্রযানের ডেপুটি প্রোজেক্ট ডিরেক্টর।
বিজ্ঞান চর্চায় বাঙালির অবদান নতুন কিছু নয়। বরং বলা যেতে পারে বাঙালির হাত ধরেই ভারতে আধুনিক বিজ্ঞান চর্চার সূত্রপাত। জগদীশচন্দ্র বসু, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, মেঘনাথ সাহা, জ্ঞানেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়. প্রশান্তচন্দ্র মহলানবিশ, প্রফুল্লচন্দ্র রায়… বাংলার বিজ্ঞান ভাণ্ডারে ছড়িয়ে আছে অমূল্য রতন। তাঁদের সঙ্গে বিন্দুমাত্র তুলনা না টেনেও বলা যেতে পারে, বিজ্ঞান চর্চায় আজও বাঙালির স্থান মধ্য গগনেই। চন্দ্রাভিযানই তার জ্বলন্ত প্রমাণ।