নয়া দিল্লি: দিল্লির মসনদকে পাখির চোখ করেই একে একে ত্রিপুরা, গোয়া, মেঘালয়ে পা ফেলেছিল তৃণমূল। সংগঠন বাড়াতে রাজ্যগুলিতে ছুটে গিয়েছিলেন দবের সুপ্রিমো মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় সহ তৃণমূলের শীর্ষনেতারা। অন্যান্য জায়গায় ঘাসফুল না ফুটলেও মেঘালয়ের মাটিতে বেশ কয়েকটি আসনও পায় পশ্চিমবঙ্গে শাসক দল। তবে সব প্রচেষ্টাই বিফলে! জাতীয় দলের তকমা পেয়েও হারাতে হল তৃণমূলকে! লোকসভা নির্বাচনের ঠিক আগে নির্বাচন কমিশনের এই পদক্ষেপ কি তৃণমূলকে কোনও বাড়তি বিড়ম্বনায় ফেলবে? এত প্রচেষ্টার পর কেনই বা হারাতে হল সেই তকমা?
রয়েছে মোট তিনটি শর্ত। তার মধ্যে যে কোনও একটি পূরণ করতে হয়। প্রথম শর্ত, লোকসভা নির্বাচনে কোনও দলকে অন্তত তিনটি রাজ্য থেকে ভোটে লড়তে হবে ও দেশের মোট লোকসভা আসনের ২ শতাংশ আসনে জিততে হবে।
দ্বিতীয় শর্ত হল, লোকসভা বা বিধানসভা নির্বাচনে অন্তত ৪টি রাজ্যে ৬ শতাংশ করে ভোট পেতে হবে ও এক বা তার বেশি রাজ্যে ৪টি লোকসভা আসন পেতে হবে।
তৃতীয় শর্ত, ৪টি বা তার বেশি রাজ্যে রাজ্যদলের তকমা থাকতে হবে দলের কাছে। এই তিন শর্তের যে কোনও একটি পূরণ করলেই জাতীয় দলের তকমা পাওয়া যায়।
শর্ত ১: ২০১৯-এর লোকসভা নির্বাচনে বিভিন্ন রাজ্যে বিজেপি বিরোধী দলের প্রচারে গিয়েছিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। কিন্তু কোনও রাজ্য থেকেই প্রার্থী দেয়নি তাঁর দল। শুধুমাত্র সমর্থন জানিয়েছিল অন্য দলকে। সেই হিসেবে তিনটি রাজ্য থেকে ভোটে লড়তে পারেনি তৃণমূল। তবে দেশের মোট লোকসভা নিরিখে ২ শতাংশের বেশি আসনেই জয়ী হয়েছিল তৃণমূল। ৫৪৩ টি আসনের মধ্যে ২৪ টি আসন রয়েছে তৃণমূলের হাতে। অর্থাৎ শর্তের পরের অংশ মিললেও প্রথম অংশ মেলেনি।
শর্ত ২: পশ্চিমবঙ্গ থেকে ৪-এর বেশি লোকসভা আসন রয়েছে তৃণমূলের হাতে। তবে, ভোট শতাংশের বিচারেই ধাক্কা খেয়েছে তৃণমূল। ২০২৩-এর বিধানসভা নির্বাচনে মেঘালয় থেকে তৃণমূলের ঝুলিতে এসেছে প্রায় ১৪ শতাংশ ভোট আর ত্রিপুরায় পাওয়া ভোট শতাংশ ১-এরও কম (০.৮৮ শতাংশ)। আর ২০২২ সালে গোয়ায় তৃণমূলের ভোট শতাংশ ছিল ৫.২১ অর্থাৎ ৬ শতাংশে কিছুটা কম। অর্থাৎ জাতীয় দলের তকমা পাওয়ার মতো ভোট শতাংশ নেই জোড়াফুলের হাতে।
শর্ত ৩: রাজ্য দলের তকমা তখনই দেওয়া হয়, যদি সেই দল সংশ্লিষ্ট রাজ্যে অন্তত ২টি বিধানসভা আসন পায় ও কমপক্ষে ৬ শতাংশ ভোট পায়। তৃণমূল বাংলার বাইরে শুধুমাত্র মেঘালয়েই ৫ টি আসন পেয়েছে। আর কোনও রাজ্যের বিধানসভায় আসন পায়নি। তাই এই শর্তেও ব্যকফুটেই তৃণমূল।
কোনও দল জাতীয় দলের তকমা পেলে, তারা কিছু সুবিধা পেয়ে থাকে।
১. সংশ্লিষ্ট দলের জন্য একটি প্রতীক রিজার্ভ করা বা নির্দিষ্ট করা থাকে। অন্যথায় প্রতীক ‘ফ্রি’ হিসেবে গণ্য হবে।
২. সংশ্লিষ্ট রাজ্যের সরকারি পরিচালিত টেলিভিশন বা রেডিওতে সম্প্রচারের জন্য নির্দিষ্ট সময় পেতে পারে ওই দল।
৩. নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক করা বা নির্বাচনী বিধি তৈরির ক্ষেত্রে মতামত দিতে পারে জাতীয় দলগুলি। অন্য দলের কাছে সেই সুযোগ থাকে না।
২০১৬ সালের ২ সেপ্টেম্বর জাতীয় দল হিসেবে তৃণমূলকে স্বীকৃতি দেয় নির্বাচন কমিশন। ২০১৪-র লোকসভা নির্বাচনের নিরিখে এই তকমা দেওয়া হয়েছিল। ওই বছর ৫ টি রাজ্যে ৬ শতাংশের বেশি ভোট পেয়েছিল ঘাসফুল শিবির। পশ্চিমবঙ্গ ছাড়াও মনিপুর, ত্রিপুরা, ঝাড়খণ্ড ও অসমেও ভোটে লড়েছিল দল। সেবার পশ্চিমবঙ্গে ৪২ টি আসনের মধ্যে ৩৪ টি পেয়েছিল তৃণমূল। এরপরই তকমা পায় তৃণমূল। তবে ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের পর তৃণমূলের সেই তকমা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। নির্দিষ্ট সময় পরপর জাতীয় দলের তকমা খতিয়ে দেখে নির্বাচন কমিশন।
সোমবার নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ করা বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী, তৃণমূল, সিপিআই ও এনসিপি জাতীয় দলের তকমা হারিয়েছে। নতুন করে সেই তকমা পেয়েছে আম আদমি পার্টি বা আপ।
অর্থাৎ বর্তমানে জাতীয় দলগুলি হল, বিজেপি, কংগ্রেস, এনপিপি (ন্যাশনাল পিপলস পার্টি), বিএসপি (বহুজন সমাজ পার্টি), কমিউনিস্ট পার্টি অব ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী), আম আদমি পার্টি।