কলকাতা: গত কয়েকদিন ধরে শাসক দলের একাধিক নেতাদের মুখে বারবার ঘুরে-ফিরে আসছে ‘হোলটাইমার’ শব্দটা। কেউ বলছেন, ‘হোলটাইমার’দের পরিবারের সদস্যদের চাকরি দিত বামেরা। এটাই নাকি ছিল রীতি। আবার কেউ প্রশ্ন তুলছেন, ‘হোলটাইমার’ শতরূপ ঘোষের কাছে কীভাবে এল ২২ লাখি গাড়ি? যদি তাঁর বাবাও দিয়ে থাকেন, একজন ‘হোলটাইমার’ এমন বিলাস-বহুল গাড়ি ব্যবহার করবেন কেন? এ প্রশ্নও উঠছে নানা মুখে। কিন্তু এই হোল টাইমার ব্যাপারটা কী? আদতে ‘হোলটাইমার’দের কী শর্ত মেনে চলতে হয়? কতটা নিয়ন্ত্রণ থাকে দলের? এসব নিয়েই এই বিশ্লেষণ।
দলের সর্বক্ষণের কর্মীকেই বলে হোলটাইমার। যে ব্যক্তি অন্য কোনও উপার্জনের পথ ছেড়ে বা না গ্রহণ করে কেবল সারাদিন পার্টির জন্যই এবং পার্টির কাজই করে থাকেন, তাঁরাই হোলটাইমার।
মূলত দুটি পদ্ধতিতে হোলটাইমার নেওয়া হয় দলে। বিভিন্ন গণ সংগঠনে কাজ করছেন, এমন যুবক-যুবতীদের দল হোলটাইমার হওয়ার প্রস্তাব দেয়। এছাড়া অনেক সময় যাঁরা এই ধরনের কাজের সঙ্গে যুক্ত, তাঁরা নিজেরাও দলকে প্রস্তাব দিতে পারেন। চিঠি দিয়ে এই প্রস্তাব দেন তাঁরা। দল যদি যোগ্য মনে করে, তাহলে তাঁদের হোলটাইমার হওয়ার সুযোগ দেয়। গত ১৫-২০ বছর ধরে এই পদ্ধতি চালু আছে বলেই জানাচ্ছেন বর্ষীয়ান নেতারা।
হোল টাইমার হলে দলের তরফ থেকে মাইনে পাওয়া যায়। যা ‘ওয়েজেস’ বলে উল্লেখ করেন অনেকে। তবে এটা বিভিন্ন জেলার আর্থিক কাঠামো অনুসারে ভিন্ন ভিন্ন হয়। যেমন ধরা যাক, একজন হোলটাইমার যদি বর্ধমানের বাসিন্দা হন, তাঁর ওয়েজেস হবে চার হাজার টাকা। মেদিনীপুরে সেই অঙ্ক হবে সাড়ে তিন হাজার টাকা। আবার কলকাতার হোলটাইমারের মাইনে হতে পারে সাড়ে ছ’হাজার টাকা।
অন্য কোনও চাকরি করা চলবে না। এমনকী কোনও পেশায় নিযুক্ত থাকাও চলবে না। একবারে ২৪ ঘণ্টা দলের জন্য কাজ করতে হবে। এটাই একমাত্র শর্ত।
আলিমুদ্দিন সূত্রে খবর, ২০১১-র পরে অর্থাৎ তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সংখ্যা কিছুটা কমেছিল। তবে ২০১৮-১৯ থেকে সেটা আবার বাড়তে শুরু করেছে বলেই জানাচ্ছেন দলের নেতারা। ছাত্র-যুবদের মধ্যে হোলটাইমার হওয়ার আগ্রহ বেড়েছে সাম্প্রতিককালে। আবেদনপত্র প্রচুর পড়ে রয়েছে দলের দফতরগুলিতে। কিন্তু দলের আর্থিক অবস্থার কারণে আবেদনকারীদের আবেদনে সাড়া দিতে পারছে না সিপিএম। হোলটাইমার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিকে মাইনে দিতে হবে। সে কারণেই আপাতত কম নিয়োগ হচ্ছে।
সিপিএমের সদস্যপদ রয়েছে এমন কর্মীদেরই লেভি বা চাঁদা দিতে হয়। যা রোজগার হয় তার ওপরে শতাংশের হিসেবে এই লেভি নেওয়া হয়। হিসেবটা হল এরকম- আয়ের ওপর ১ শতাংশ লেভি দিতে হবে। ১০ হাজার টাকা রোজগার হলে ১০০ টাকা দিতে হয় পার্টি ফান্ডে। ২০ হাজার টাকা আয় হলে লেভি হয় ৩০০ টাকা, ৪০ হাজার হলে ৬০০ টাকা। লেভি দিতে হয় হোলটাইমারদেরও। তারা যা রোজগার করে তার ওপর হিসেব করে চাঁদা দিতে হয়।
তবে বামফ্রন্টে সিপিএম ছাড়া অন্যান্য শরিক দলের মধ্যে কেবলমাত্র সিপিআই-তে হোলটাইমার হওয়ার রীতি আছে। বাকি শরিকদলে হোলটাইমার নেই।