ঐতিহ্যগত ভাবে ভারতীয়দের দুটি পেশা ছিল। কৃষিকাজ এবং তাঁত বোনা। এখনও ভারতের অনেক প্রদেশেই তাঁতিবাড়ি রয়েছে। পারিবারিক ঐতিহ্য তাঁরা বয়ে নিয়ে চলেছেন এখনও। যদিও শাড়ি বুনতে যে সময় আর পরিশ্রম লাগে সেই অনুপাতে দাম তাঁরা পান না। হাতে বুনে যে শাড়ি তৈরি করা হয় তাই হল হ্যান্ডলুমের শাড়ি। ভারতীয় হ্যান্ডলুমের ঐতিহ্য দিকে দিকে ছড়িয়ে দিতে এবং দেশজ বস্ত্রশিল্পের জনপ্রিয়তা বাড়ায়ে প্রতি বছর ৭ অগস্ট দিনটি জাতীয় হ্যান্ডলুম দিবস হিসেবে পালন করা হয়। ২০১৫ সাল থেকে বিশেষ উদ্যোগ নিয়ে এই দিনটি পালন করা শুরু হয়। মিলে বোনা শাড়ি আর হাতে বোনা শাড়ির মধ্য়ে পার্থক্য তো আছেই। যে কোনও তাঁতই হ্যান্ডলুমের শাড়ি। ভারতের বিভিন্ন প্রদেশে এক একরকমের হ্যান্ডলুম শাড়ি বিখ্যাত।
বাংলার বিখ্যাত হ্যান্ডলুমের মধ্যে রয়েছে বালুচরি, স্বর্ণচুরি। আছে ফুলিয়ার তাঁত, মুর্শিদাবাদ, বিষ্ণুপুরের সিল্ক। খাঁটি বালুচরি শাড়ির দাম শুরু ১২ হাজার টাকা থেকে। এর কমে যদি শাড়ি কেনেন তাহলে সেই শাড়ি আদতে কতটা খাঁটি তা দেখে নিতে হবে। কেনার সময় অবশ্যই দেখে নেবেন যে সুল্কের হলমার্ক রয়েছে কিনা। বাংলার তাঁত, তাঁত বেনারসি এসব শাড়ি বাংলার ঐতিহ্য। এই সব শাড়ি গায়ে দিয়ে যা আরাম তা আর অন্য কোনও শাড়িতে আসে না।
তেমনই ওড়িশার সম্বলপুর সিল্ক, কটকি সিল্ক খুবই বিখ্যাত। মূলত টেম্পল প্রিন্টেই এই সব শাড়ি দেখা যায়। তবে সম্বলপুরি সিল্ক আর কটকি প্রিন্টের মধ্যে একটা ফারাক রয়েইছে। তেমনই অসমের মুগার কাজ খুব বিখ্যাত। অসম সিল্কের শাড়ি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই টেকসই। অরিজিনাল মুগা কাজের শাড়ির দাম শুরু হয় ১০ হাজার টাকার উপর থেকে। রাজস্থানের কোরা সিল্ক, কর্ণাটকের মহীশূর সিল্ক, তামিলনাড়ুর কাঞ্জিভরম, কাঞ্চিপুরম এই শাড়িগুলি দেখতে যেমন সুন্দর তেমনই দামও হয় অনেককআনি। একটা কাঞ্জিভরম শাড়ি বুনতে প্রায় ছ মাস মত সময় লেগে যায়। আর এই শাড়ি বুনতে যে সময় লাগে তার তুলনায় দাম নেহাৎই নগণ্য। কাশ্মীরের পশমিনা, উত্তরপ্রদেশের বেনারসি শাড়ি, তেলঙ্গানার পচমপল্লী, চান্দেরি, পৈঠানি, পাটোলা সিল্ক এই সবই হল হ্যান্ডলুমের শাড়ি।
অনেক দোকানেই এই সব দামি সিল্ক তিন-চার হাজার টাকার বিনিময়ে বিক্রি করা হয়। তবে ভুল করেও ফাঁদে পা দেবেন না। এতে ঠকতে পারেন আপনি। এই কোনও শাড়িই ১০ হাজার টাকার নীচে পাওয়া যায় না।