বর্ষায় বন্ধ থাকে দেশের সমস্ত জাতীয় উদ্যান, অভয়ারণ্য। মনে করা হয়, এসময় হল বন্যপ্রাণীদের সঙ্গমের সময়। তাই তাদের বিরক্ত না করাই ভাল। কিন্তু পক্ষীপ্রেমী হলে আলাদা করে আর জাতীয় উদ্যানে আপনার যাওয়ার প্রয়োজন নেই। পাহাড়ি গ্রাম লাটপাঞ্চার গেলেই আপনার পাখি দেখার শখ পূরণ হয়ে যাবে। মহানন্দা অভয়ারণ্যের ঠিক উপরে লাটপাঞ্চার। এখানে দেখা মেলে হরেক রকম হিমালয়ান পাখির। ওয়াইল্ডলাইফ ফটোগ্রাফি ভালবাসলে একবার আসা দরকার লাটপাঞ্চারে।
লেপচা ভাষায় ‘লাট’ অর্থ বেত এবং ‘পাঞ্চার’ অর্থ জঙ্গল। জঙ্গলে ঘেরা শান্ত, নিরিবিলি গ্রাম লাটপাঞ্চার। দুটো পাহাড়ের মাঝ দিয়ে বিস্তীর্ণ তরাই সমতল। উপর থেকে দেখা যায় তিস্তার এঁকে-বেঁকে বয়ে চলা। আর দেখা যায় পাইন, সিঙ্কোনার জঙ্গল। তবে, লাটপাঞ্চার বেশ বড় নেপালি গ্রাম। খুবই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন। এমনকী রাস্তাঘাটও সুন্দর। আর রাস্তার পাশেই রয়েছে দূর্গা মন্দির। পাহাড়ের উপরে গ্রাম হলেও অনেক পাকা বাড়ি রয়েছে। অন্যান্য পাহাড়ি গ্রামের চেয়ে লাটপাঞ্চারে হোম স্টের সংখ্যাও বেশি।
৪,৫০০ ফুট উচ্চতায় লাটপাঞ্চারকে পাখিদের স্বর্গরাজ্য বলা হয়। এখানে পাখিদের অবাধ বিচরণ। লাটপাঞ্চারে বসে দেখতে পাবেন বিরল প্রজাতির রেড হেডেড ট্রোগেন, স্কারলেট মিনিভেট, গ্রে কুনচ্যাট, ম্যাগপাই, লংটেইলড ব্রডবিল এবং দুর্লভ প্রজাতির রুফাস নেকড হর্নবিল। এছাড়াও দেখতে পেয়ে যেতে পারেন মালয়ান জায়েন্ট স্কুইরেল, হিমালয়ান ব্ল্যাক বিয়ার, চিতাবাঘ ও স্যালাম্যান্ডার। লাটপাঞ্চারের জঙ্গলে ২৪০ প্রজাতির পাখি এবং ৩৬ প্রকারের বন্যপ্রাণীর দেখা মেলে। লাটপাঞ্চার থেকে দু’কিলোমিটার দূরে রয়েছে সানসেরিদাঁড়া ভিউ পয়েন্ট। আকাশ পরিষ্কার থাকলে এখান থেকে দেখা যায় তুষারাবৃত কাঞ্চনজঙ্ঘা।
বর্ষায় এখানে জোঁকের ভয়। তবে ভয়কে উপেক্ষা করে লাটপাঞ্চারের পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে পারেন। ছোট বাঁশের সারি, অর্কিড ও পাহাড়ি ফুলের মেলা, সিঙ্কোনা আর এলাচ গাছের ভিড় গোটা গ্রাম জুড়ে। তার সঙ্গে পাইনের জঙ্গল রয়েছে। জঙ্গলের মধ্যে ঘুরতে ঘুরতে চেনা-অচেনা পাখির ডাক শুনতে পারেন। লাটপাঞ্চার থেকে ঘুরে নিতে পারেন অহলদাড়া, লাটকুঠি, পাঁচপোখরি, সামসারিদাঁড়া, লেপচা মনাস্ট্রি ইত্যাদি। দু’দিনের অবসর যাপনের জন্য ঘুরে আসতে পারেন লাটপাঞ্চার।
নিউ জলপাইগুড়ি বা শিলিগুড়ি থেকে সেবকের পথ ধরতে হবে। কালিম্পং থেকে কালিঝোরা হয়ে বাঁ দিকের রাস্তা ধরতে হবে। এখান থেকে ১৩ কিলোমিটার গেলেই লাটপাঞ্চার। শিলিগুড়ি থেকে ৪১ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত লাটপাঞ্চার। গাড়ি ভাড়া পড়বে প্রায় ৩,০০০ টাকা। এখানে থাকার জন্য একাধিক হোম স্টে পেয়ে যাবেন। সেখানে থাকা-খাওয়া নিয়ে খরচ শুরু ১,১০০ টাকা থেকে।