সিকিম ভ্রমণের প্ল্যান করলেই তালিকায় থাকে গ্যাংটক, ছাঙ্গু লেক, নাথুলা পাস, গুরুদংমার হ্রদ, পেলিং ইত্যাদি। যদিও এখন এ রাজ্যে বেড়েছে অফবিট স্পটের সংখ্যা। হোম স্টে সুবিধা থাকায় সেখানেও বাঙালি পর্যটকদের ভিড় বাড়ছে। সিকিমের যে কোনও জনপদের সৌন্দর্য লুকিয়ে রয়েছে এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ, খরস্রোতা নদী, পাহাড়ি ফুল আর মনেস্ট্রিতে। রা বাংলা হোক বা আরিতার, যেখানেই যাবেন দেখা পাবেন বৌদ্ধ মনেস্ট্রির। কিন্তু এ রাজ্যের সবচেয়ে বড় ও পুরনো মঠ কোনটি জানেন?
সিকিমের সর্ববৃহৎ বৌদ্ধ মঠ হল রুমটেক মনেস্ট্রি। ৪-৫ দিনের জন্য সিকিম বেড়াতে গেলেও রুমটেক মনেস্ট্রিতে একবার অবশ্যই ঢুঁ মারা উচিত। সিকিমের রাজধানী গ্যাংটক থেকে মাত্র ২৪ কিলোমিটার দূরে রয়েছে রুমটেক মনেস্ট্রি। আবার পেলিং ঘুরেও আসা যায় এখানে। সময় লাগে প্রায় ৪ ঘণ্টা। এমনকী আপনি ছাঙ্গু লেক, বাবা মন্দির, নাথুলা পাস ঘুরেও রুমটেক মনেস্ট্রি যেতে পারেন। কিন্তু কোনওভাবেই মিস করা যাবে না সিকিমের এই বৌদ্ধ মঠ।
১৭০০ দশকের মাঝামাঝি সময়ে তৈরি হয় এই রুমটেক মনেস্ট্রি। এই মঠ তৈরি করেছিল সিকিমের চতুর্থ চোগিয়াল। তারপর এই মঠ ধ্বংস হয়ে যায়। ১৬তম কারমাপা রংজং রিগপে দরজে খুঁজে পান রুমটেক মনেস্ট্রির ধ্বংসস্তূপ। তিব্বতে থেকে গ্যাংটক আসার পর তিনি পুনরায় এই মঠ পুনর্গঠনের সিদ্ধান্ত নেন। প্রায় ৪ বছর ধরে চলে মঠের কাজ। অবশেষে ১৯৬৬ সালে লোসার অনুষ্ঠানে পুনরায় খোলা হয় রুমটেক মনেস্ট্রির দরজা। তখন থেকে এই মঠ ‘ধর্মচক্র কেন্দ্র’ হিসেবে পরিচিত। তিব্বতি বৌদ্ধ ধর্মের প্রাচীনতম সম্প্রদায়গুলির মধ্যে একটি ব্ল্যাক হ্যাট। তাদের সদর দফতর এই রুমটেক মনেস্ট্রি।
রুমটেক মনেস্ট্রির দুটো ভবন রয়েছে। পুরনোটি তৈরি হয়েছিল সেই ১৭৪০ সালে। যে নতুন মঠটি তৈরি হয়েছে ১৯৬৬ সালে, সেটা পুরনোটির থেকে প্রায় ২ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। পুরনো থেকে নতুন মঠে যাওয়ার রাস্তা সাজানো সাদা বৌদ্ধ পতাকা দিয়ে। মঠের একটা রাস্তা যায় গোল্ডেন স্তূপের দিকে। এই স্তূপ সোনা ও রূপো, ফিরোজা, অ্যাম্বার এবং প্রবালের মতো মূল্যবান পাথর দিয়ে তৈরি।
সেপ্টেম্বর থেকে জুন—এই সময় রুমটেক মনেস্ট্রি যাওয়ার সেরা সময়। গ্রীষ্মের সময় ভোর ৪টে থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত রুমটেক মনেস্ট্রির দরজা খোলা থাকে। শীতে সকাল ১০টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত পর্যটকেরা এই মঠে আসতে পারেন। লোসার উৎসব, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, বুদ্ধের জ্ঞানার্জনের বার্ষিকী উদযাপন, ১৭তম কর্মপার জন্মদিন ইত্যাদি বিশেষ দিনে রুমটেক মনেস্ট্রিতে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। তখনও যেতে পারেন রুমটেক মনেস্ট্রিতে।
৪,৯০০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত রুমটেক মনেস্ট্রির সৌন্দর্য মন ভোলানো। তাছাড়া এই মঠ ভিউ পয়েন্ট হিসেবে কাজ করে। এখান থেকে সিকিমের পাহাড়ি জনপদ, উপত্যকার প্যানোরমিক দৃশ্য উপভোগ করা যায়। প্রাকৃতিক পরিবেশ ও মনোরম দৃশ্য উপভোগ করার টানেই আরও বেশি পর্যটকদের ভিড় হয় রুমটেক মনেস্ট্রিতে।