পৃথিবীতে যতবারই ভালোবাসার কথা উঠে, ততবার শ্রীকৃষ্ণ ও রাধার অপার প্রেমের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। রাধা-কৃষ্ণের প্রেম দৈবিক হলেও সাধারণের কাছে বড্ড আপন। কারণ এই শুদ্ধ প্রেম হল জীবাত্মা ও পরমাত্মার মিলন। বিরহ, অভিলাস, প্রেম সবস্তরেই রাধা-কৃষ্ণের প্রেম সকলের মন ছুঁয়ে যায়। শাস্ত্র অনুসারে, শৈশব থেকেই শ্রীকৃষ্ণের সবচেয়ে প্রিয় ছিল দুটি। একটি হল বাঁশি, অন্যটি রাধা। বিষ্ণুর অষ্টম অবতার শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি খুব পছন্দ। বাঁশি এতটাই প্রিয় যে, সবসময় তাঁর সঙ্গে থাকত। এমনকি শ্রীকৃষ্ণের মূর্তিতে বাঁশি ছাড়া কিছু ভাবা যায় না। তাঁর বাঁশির সুরেই মুগ্ধ হয়ে থাকত গোটা ধরিত্রী। ভগবান কৃষ্ণের বাঁশি হল প্রেম, সুখ এবং আকর্ষণের প্রতীক। শাস্ত্র অনুসারে, তাঁর বাঁশির নাম মহানন্দা বা সম্মোহিনী।
ধর্মীয় বিশ্বাস অনুসারে, ভগবান শিব মহর্ষি দধীচির হাড় থেকে শ্রীকৃষ্ণের বাঁশি তৈরি করেছিলেন। ভগবান শিব যখন বালক কৃষ্ণের সঙ্গে দেখা করতে আসেন, তখন সেই বাঁশিটি তাকে উপহার হিসাবে দেওয়া দিয়েছিলেন। পৌরাণিত কাহিনি মতে, দুষ্ট মামা কংসকে হত্যা করার পর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ রুকমণিকে বিয়ে করে দ্বারকায় বাস করতে থাকেন। স্ত্রী হিসেবে রুক্মিনী কৃষ্ণের সেবা পালন করেব। এমনকি সর্বদা ঈশ্বরের সেবায় নিজেকে একেবারে নিয়োজিত করে দিয়েছিলেন। কিন্তু কখনওই জীবন থেকে রাধাকে মুছে দিতে পারেননি। বিবাহের পরও রাধা প্রেমে মগ্ন ছিলেন কৃষ্ণ।
শাস্ত্র অনুসারে, শ্রীকৃষ্ণ সারাজীবন রাধার সঙ্গে মিলিত হওয়ার জন্য সব দায়িত্ব পালন করেছিলেন। জীবনের শেষমূহুর্ত পর্যন্ত আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন রাধার প্রেমে নিজেকে ফের মগ্ন হতে। শ্রীকৃষ্ণের বৃন্দাবন ছাড়ার পর থেকেই রাধার বর্ণনা পাওয়া যায় খুব অল্প। স্ত্রীকে নিয়ে দ্বারকায় বসবাস করলেও শেষবারের মতো শ্রীকৃষ্ণকে দেখার ইচ্ছে প্রকাশ করেছিলেন। রাধার ইচ্ছে মতো শ্রীকৃষ্ণ তাঁর সঙ্গে দেখা করেন জীবনে শেষ প্রান্তে এসে। কথিত আছে, বাঁশির সুর শুনে রাধা দেহত্যাগ করেছিলেন। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এ কথা জানলেও রাধার বিচ্ছেদ সহ্য করতে না পেরে তার বাঁশি ভেঙ্গে জঙ্গলে ফেলে দিয়েছিলেন। তারপর থেকেই শ্রীকৃষ্ণ সারাজীবন কোনও দিন বাঁশি বাজান নি।