মহাকালেশ্বর মন্দিরের নাম ও জনপ্রিয়তা কারওর অজানা নয়। তবে অনেকেই যেটি জানেন না তা হল, উজ্জয়নের এই বিখ্যাত মন্দিরের দ্বিতীয় তলেই রয়েছে শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দির। এই মন্দিরের দরজা বছরে একবার খোলা হয়। তা হল নাগপঞ্চমীর দিনে। এদিন শাস্ত্রমতে ও রীতি-রেওয়াজ মেনে পুজো করা হয়, তারপর ভক্তদের জন্য দরজা খুলে দেওয়া হয়। শ্রাবণ শুক্লা চতুর্থীর রাত ১২টা থেকে নাগ পঞ্চমীর রাত ১২টা পর্যন্ত খোলা থাকে। গভীর রাত থেকেই এখানে ভক্তদের ভিড় শুরু হয়। প্রথা অনুযায়ী এই মন্দির বছরের ৩৬৫ দিনে শুধুমাত্র নাগপঞ্চমী উপলক্ষে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। এরপর পুজোর পর আবার বন্ধ করে দেওয়া হয় এই বিশেষ মন্দিরের দরজা।
নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দির কোথায় অবস্থিত?
শ্রী মহাকালেশ্বর মন্দিরের দ্বিতীয় তলায় অবস্থিত শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরের দরজা বছরে একবার মাত্র নাগপঞ্চমীর দিনে ২৪ ঘন্টা খোলা থাকে। হিন্দুধর্মে শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে সাপের পুজো করার চল রয়েছে। হিন্দু ঐতিহ্য মতে, সর্পকে ভগবান শিবের অলঙ্কার হিসাবেও বিবেচনা করা হয়। মহাকাল মন্দিরের গর্ভগৃহের উপরে ওমকারেশ্বর মন্দির ও তার উপরে শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বরের মন্দিরও প্রতিষ্ঠিত। শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর মন্দিরে ১১ শতকের একটি অপূর্ব মূর্তি স্থাপন করা হয়েছিল। যেখানে শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর স্বয়ং তাঁর সাতটি ফণা তুলে দাঁড়িয়ে রয়েছেন। শুধু তাই নয়, একসঙ্গে অবস্থান রয়েছে শিব-পার্বতী, নন্দী ও সিংহ, গণেশ-কার্তিক। এটিই একমাত্র মন্দির যেখানে পুরো পরিবার-সহ ভগবান শিব একটি সাপের ফণার পাদদেশে উপবিষ্ট।
মন্দিরের ইতিহাস
মনে করা হয় যে মালওয়া রাজ্যের পারমার রাজা ভোজ এই মন্দিরটি ১০৫০ খ্রিস্টাব্দের দিকে তৈরি করেছিলেন। এর পরে, মহাকাল মন্দিরটি ১৭৩২ সালে সিন্ধিয়া পরিবারের মহারাজ রনোজি সিন্ধিয়া দ্বারা সংস্কার করা হয়েছিল। শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর ভগবানের মূর্তি নেপাল থেকে এনে এখানে স্থাপন করা হয়। ভগবান শিব তাঁর দুই পুত্র গণেশ ও কার্তিক-সহ একসঙ্গে দেখা যায়। প্রতিমার চূড়োয় রয়েছে সূর্য ও চন্দ্রও।
সাপের মালা
মূর্তিটি যদি ভালো করে দেখা যায়, তাহলে মহাদেবে গলায় ও বাহুতে আবৃত রয়েছে সর্পদেবতা। মনে করা হয়, উজ্জয়িনী ছাড়া পৃথিবীর অন্য কোথাও এমন মূর্তি নেই। এই মূর্তি দর্শনের পর ভিতরে প্রবেশ করলে শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বরের প্রধান মূর্তি অর্থাৎ শিবলিঙ্গ দেখা যায়। নাগপঞ্চমীর দিন শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বর মহাদেবকে একটানা ২৪ ঘণ্টা দেখা যায়। নাগপঞ্চমীর মধ্যরাতে মন্দিরের দরজা বন্ধ হয়ে যায়। হিন্দু ক্যালেন্ডার অনুসারে, শুভ যোগ তৈরি হয়েছে শ্রাবণ মাসের সপ্তম সোমবার।
ত্রিকাল পুজো
নাগপঞ্চমী উৎসবে ভগবান শ্রী নাগচন্দ্রেশ্বরের ত্রিকাল পুজো করা হয়। মাঝরাতে দরজা খোলার পর মহন্ত পুজো করা হয়। এরপর দুপুর ১২টা নাগাদ ফের একবার পুজো করা হয়। তারপর নাগপঞ্চমীর রাত বারোটায় মন্দিরে পুজো দেওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয় এই বিশেষ মন্দিরের দরজা।