হিন্দুধর্মে চন্দ্রকে দেবতা জ্ঞানেই পুজো করা হয়। জ্যোতিষশাস্ত্রেও চাঁদকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ চন্দ্রের অবস্থান শক্তিশালী হলে ব্যক্তির জীবনে কখনও কোনও অভাব দেখা যায় না। প্রতিটি দেবতাকে সনাতন ধর্মে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে চন্দ্রদেব হলে অন্যতম। এই চন্দ্রদেবের পুজোর জন্য কোনও উপবাস রাখা হয় না। পুজোর স্থানে বসানো হলেও চন্দ্রের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে রাশিচক্রেও। জ্যোতিষশাস্ত্র অনুসারে, যে ব্যক্তির জন্মের কুণ্ডলীতে চন্দ্রের অবস্থান শক্তিশালী হয়, সেই ব্যক্তির জীবনে সব ধরনের বিলাসিতা ও ভোগ বিরাজ করে।
অন্যদিকে, চন্দ্রের অবস্থান দুর্বল হলে তাকে শক্তিশালী করার জন্য বিভিন্ন প্রার প্রতিকার মেনে চলা উচিত। ভারতের অলিতে-গলিতে দেব-দেবীর মন্দির রয়েছে। তবে জ্য়োতির্লিঙ্গ বা দেব-দেবীর মতো চন্দ্রেরও মন্দির রয়েছে। ঋষিকেশে বিভিন্ন দেব-দেবীর মন্দির রয়েছে। অনেকেই হয়ততো জানেন না, এই পবিত্র জায়গায় একটি জনপ্রিয় মন্দির রয়েছে, যেখানে চন্দ্রদেবকে ভক্তিভরে পুজো করা হয়ে থাকে। শুধু তাই নয়, এই মন্দিরে একসঙ্গে পূজিত হন মহাদেব ও চন্দ্রদেব।
চন্দ্রেশ্বর মহাদেব মন্দির
দেবভূমি উত্তরাখণ্ডে বহু দেব-দেবীর বাস। শুধু অবস্থান বললে ভুল হবে, এই পবিত্র জায়গা বর্তমানে জনপ্রিয় তীর্থস্থানে পরিণত হয়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে এই পবিত্র পার্বত্য এলাকায় পর্যটক ও তীর্থযাত্রীরা মন্দির দর্শন করতে আসেন। তারই মধ্যে সবচেয়ে জনপ্রিয় মন্দির হল ‘চন্দ্রেশ্বর মহাদেব মন্দির’। ঋষিকেশের অত্য়ন্ত জাগ্রত ও গুরুত্বপূর্ণ একটি মন্দির। কথিত আছে, এই মন্দিরে দর্শন করলেই ভক্তদের সমস্ত দুঃখ-কষ্ট দূর হয় ও তাদের মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। চন্দ্রেশ্বর মহাদেব মন্দির সিদ্ধপীঠ নামেও পরিচিত। এই মন্দিরের সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বেশ কিছু পৌরাণিক কাহিনি। বিশেষ কিংবদন্তির কথা বহু ভক্তই জানেন না।
কিংবদন্তি
ধর্মীয় কিংবদন্তি অনুসারে, ঋষিকেশের যে স্থানে চন্দ্রেশ্বর মন্দির রয়েছে সেখানে চন্দ্রদেব কঠোর তপস্যা করেছিলেন। তপস্যায় খুশি হয়ে ভোলেনাথ তাঁকে দর্শন দেন। পৌরাণিক কাহিনি অনুসারে, প্রাচীনকালে চন্দ্র অভিশাপ পেয়েছিলেন এবং সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেতে তিনি ঋষিকেশে গঙ্গার তীরে ভগবান শিবের তপস্যা করেছিলেন। ১৪,৫০০ বছরের তপস্যার পর, ভগবান শিব বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ রূপে চন্দ্রদেবের সামনে আবির্ভূত হন ও তাঁকে অভিশাপ থেকে মুক্ত করেন। সেই থেকে এই স্থানে শিবলিঙ্গ পুজো করা হয়ে থাকে। এই শিবলিঙ্গ দর্শন করলেই ভক্তদের সকল ইচ্ছা পূরণ হয়।
বিবেকানন্দও এখানে তপস্যা করেছিলেন
কথিত আছে, ১৮৯০ সালে স্বামী বিবেকানন্দও এই স্থানে মহান তপস্যা করেছিলেন। যে গুহায় তিনি তপস্যা করেছিলেন তা এখনও বিদ্যমান। প্রতি বছর শিবরাত্রির দিনে ধুমধাম করে শিবলিঙ্গ, চন্দ্রদেবের পুজো করা হয়ে থাকে।