চাঁদের এক্কেবারে দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েও সাফল্য অধরা রয়ে গিয়েছে লুনা-25 এর। এখন প্রশ্ন অনেকের মাথাতেই ঘুরপাক খাচ্ছে, ভারতের চন্দ্রযান-3 এর সঙ্গেও এমনটা হবে না তো? স্পেস স্ট্র্যাটেজিস্ট পিকে ঘোষ বলছেন, চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের জন্য চন্দ্রযান-3 এর সবথেকে বড় চ্যালেঞ্জ হল মহাকাশযানটিকে অনুভূমিক (Horizontal) থেকে উল্লম্ব (Vertical) অবস্থানে নিয়ে যাওয়া। সংবাদমাধ্যম ANI এর কাছে পিকে ঘোষ বলেছেন, “সবথেকে বড় বিষয়টি হল, চন্দ্রযানটিকে একটি অনুভূমিক অবস্থান থেকে উল্লম্ব অবস্থানে নিয়ে আসা, যা সত্যিই খুব কঠিন। এই সব ছোট্ট দিকগুলি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে খতিয়ে দেখতে হবে।”
রবিবার সকালের দিকে দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত ডিবুস্টিং অপারেশনের মধ্যে দিয়ে যাওয়ার পরে বুধবার ভারতীয় সময় সন্ধে 6টা 4 মিনিটে চাঁদের মাটি স্পর্শ করতে চলেছে চন্দ্রযান-3। ইন্ডিয়ান স্পেস রিসার্চ অর্গ্যানাইজ়েশনের তরফ থেকে এই নির্ধারিত সময়ের কথাই উল্লেখ করা হয়েছে গত রবিবার। ডিবুস্টিংয়ের প্রক্রিয়াটি ব্যাখ্যা করতে গিয়ে মিস্টার ঘোষ বলেছেন, “ডিবুস্টিং বা রেট্রো ফায়ারিং হল এমনই একটি প্রক্রিয়া, যা মহাকাশযানকে তার গতি কমাতে সাহায্য করে। আপনি বুঝতে পারবেন যে, চন্দ্রযানটি ঘণ্টায় 6000 কিলোমিটারেরও বেশি গতিতে ভ্রমণ করছে এবং তারপরে তার গতিবেগ শূন্যের কাছাকাছি প্রায় 1 মিটার/সেকেন্ডে কমিয়ে আনা হয়েছে।”
প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বিশদে বলতে গিয়ে স্পেস স্ট্র্যাটেজিস্টের বক্তব্য, “এটি এমনই এক প্রক্রিয়া, যেখানে আপনি মহাকাশযানটিকে একটি বৃত্তাকার কক্ষপথে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। পেরিজিটি (Perigee) প্রায় 25 কিলোমিটার জুড়ে বিস্তৃত। দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত ডিবুস্টিং প্রক্রিয়া ছিল এটি। এখান থেকেই ধীরে-ধীরে এটি নীচে নামতে শুরু করবে এবং 23 তারিখ আপনি সেই মাহেন্দ্রক্ষণের সাক্ষী হবেন”
ভারতের চন্দ্রযান মিশন সাফল্যের লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই একাধিক ধাপ পেরিয়েছে। গত বৃহস্পতিবার নাগাদ চন্দ্রযানটির প্রপালশন মডিউল থেকে ল্যান্ডারকে আলাদা করা হয়েছে। রবিবার দ্বিতীয় এবং চূড়ান্ত পর্যায়ের ডিবুস্টিংও সম্পন্ন করেছে। চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণ করতে নিজের যাত্রাও শুরু করে দিয়েছে বিক্রম ল্যান্ডার। এর মধ্যেই আবার চাঁদের কক্ষপথে থাকা চন্দ্রযান-2 এর সঙ্গেও যোগাযোগ স্থাপন করতে পেরেছে চন্দ্রযান-3 এর বিক্রম ল্যান্ডার।
রাশিয়ার লুনা-25 চন্দ্রাভিযানের ব্যর্থতা সম্পর্কে পিকে ঘোষের বক্তব্য, মহাকাশ অনুসন্ধানে কোনও কিছু নিয়ে আগেভাগে নিশ্চিত হওয়া ঠিক নয়। তাঁর কথায়, “এখান থেকে একটা বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেল যে, মহাকাশ অনুসন্ধানের ক্ষেত্রে কোনও কিছুকে সহজ ভাবে নিতে পারবেন না আপনি। ছোটখাটো যে কোনও ভুল বড়সড় বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে। আমি সত্যিই তাদের জন্য দুঃখিত।”
আরও যোগ করে তিনি বললেন, “ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে লুনা-25 উৎক্ষেপণে খানিক বিলম্ব হয়েছে। কিন্তু 47 বছর পরও রাশিয়ার চন্দ্রাভিযানের চেষ্টা ব্যর্থ হল।” বলছেন, “প্রথমে তারা জানিয়েছিল যে, 23 অগস্ট অবতরণ করবে। তারপর আমার মনে হয়, ওরা গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছিল। তাড়াহুড়োর ফলেই 21 অগস্ট তো ল্যান্ড করতে পারলই না, তার আগেই ঘটে গেল বড় বিপত্তি। রাশিয়া বা সোভিয়েত ইউনিয়ন হল মহাকাশ অনুসন্ধানে অগ্রগামী। তাদের সঙ্গে এমনটা যখন হয়, তা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক।”