40 দিনের অপেক্ষার পর অবশেষে চন্দ্রযান-3-এর ল্যান্ডার মডিউল চাঁদের মাটিতে পা রাখল। নামার সঙ্গে সঙ্গেই ভারত এক বিরাট সাফল্যের মুখ দেখল। আর এই সময়ের অপেক্ষাতেই ছিল গোটা দেশবাসী। চার বছরে ব্যর্থ হয়েছে তিনটি অভিযান। এবার তাই কোনও রকম ভুলচুক না করেই দক্ষিণ মেরু স্পর্শ করল চন্দ্রযান-3। চন্দ্রযান-2 চাঁদের সামনে গিয়েও চাঁদে পা রাখতে পারেনি। তবে সেই অভিযান থেকে শিক্ষা নিয়েই চন্দ্রযান 3-এর রূপরেখা তৈরি করেছিল ISRO-র বিজ্ঞানীরা। বুধবার অর্থাৎ 23 অগস্ট সন্ধ্যা 6.04 মিনিটে চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে অবতরণের সময় নির্ধারণ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই সময়ের আগেই নেমে গিয়েছে চাঁদে। কিন্তু এরপর কী? অবতরণের পরই কী কাজ শেষ বিজ্ঞানীদের? না কি আসল কাজ এখনই শুরু হবে? চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর ল্যান্ডার ‘বিক্রম’-এর কাজ কী হবে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।
ইসরো বিজ্ঞানীদের আসল কাজ শুরু হবে ল্যান্ডার ‘বিক্রম’ চাঁদে নামার পর। তারা ল্যান্ডার এবং রোভার থেকে পাঠানো ডেটা বিশ্লেষণ করবে। এরা চাঁদে একটা গোটা দিন (পৃথিবীতে 14 দিন) তাদের কাজ চালিয়ে যাবে। ল্যান্ডারে 3টি পেলোড এবং 2টি রোভারে রয়েছে। এছাড়াও এতে 5 ধরনের বৈজ্ঞানিক যন্ত্র রয়েছে, যা পৃথিবীতে প্রচুর ডেটা পাঠাবে। সৌরশক্তি চালিত ল্যান্ডার এবং রোভার চাঁদ সম্পর্কে সমস্ত তথ্য সংগ্রহ করতে ব্যস্ত থাকবে ISRO-র বিজ্ঞানীরা। তবে রোভার শুধুই তথ্য সংগ্রহ করবে। কিন্তু পৃথিবীতে সেই সব তথ্য পাঠানোর কাজ হবে ল্যান্ডারের।
চাঁদে অবতরণের কিছুক্ষণ পরে, বিক্রম ল্যান্ডারটি খুলবে এবং রোভারের জন্য একটি র্যাম্প তৈরি করবে। অর্থাৎ সেই র্যাম্প ধরেই রোভারটি এদিক ওদিক ঘুরে বেরাবে। ছয় চাকার রোভারে ভারতের পতাকা এবং ইসরোর লোগো রয়েছে। অবতরণের প্রায় চার ঘণ্টা পর এটি ল্যান্ডারের ভিতর থেকে বেরিয়ে এসে নামতে শুরু করবে। অবতরণের সময় রোভারের গতিবেগ হবে প্রতি সেকেন্ডে 1 সেমি। রোভার তার নেভিগেশন ক্যামেরার মাধ্যমে আশেপাশের পরিবেশ অনুধাবন করতে থাকবে।
চাঁদে কী করবে চন্দ্রযান-3-এর ল্যান্ডার ও রোভার?
চাঁদের মাটি ছোঁয়ার পর রোভার চাঁদের পৃষ্ঠে পতাকা এবং ইসরোর লোগো রেখে আসবে। অর্থাৎ ভারত তার পরিচয় চাঁদের মাটিতে পুঁতে রাখবে। রোভারের পেলোডগুলিতে ইনস্টল করা যন্ত্রগুলি চাঁদের সমস্ত ডেটা পাঠাবে। এগুলি চাঁদের বায়ুমণ্ডল সম্পর্কিত সমস্ত তথ্যও দেবে। ল্যান্ডারে তিনটি পেলোড রয়েছে। এটি ল্যান্ডিং সাইটের চারপাশে চাঁদের প্লাজমার ঘনত্ব, তাপমাত্রা এবং ভূমিকম্প পরিমাপ সবকিছুই করবে।
ল্যান্ডার এবং রোভারের জন্য সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ কী?
চন্দ্রযান-3-এর রোভার ও ল্যান্ডারকে একদিন চাঁদে থাকতে হবে। এরপর সেখানে রাত হবে। চাঁদের দক্ষিণ মেরুতে তাপমাত্রা মাইনাস 238 ডিগ্রি সেলসিয়াসে পৌঁছবে। এত কম তাপমাত্রায় মেশিন ঠিক মতো কাজ করবে না, একথা আগেই জানিয়েছিলেন ISRO-র বিজ্ঞানীরা। সেক্ষেত্রে কীভাবে এই ল্যান্ডার ও রোভার কাজ করবে, এখন সেটাই দেখার।