আলিপুরদুয়ার: সাপ নিয়ে মানুষের মনে একটা ভয় রয়েই গিয়েছে। সে বিষধর হোক বা নির্বিষ… সাপ দেখলেই মানুষের মনে একটা আতঙ্ক তৈরি হয়। সরকারের তরফে গ্রামাঞ্চলগুলিতে বিভিন্ন সচেতনতা প্রচার চালানো হয়। তারপরও মাঝেমধ্যেই আজব সব কাণ্ডকারখানা দেখা যায়। এই যেমন আলিপুরদুয়ারে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে গতরাতের কাণ্ড। এক পেল্লায় অজগর সাপকে নিয়ে হাসপাতালে হাজির এক যুবক। শ্যামল রায় নামে ওই যুবকের বাড়ি ফালাকাটার সাতপুকুরিয়া চার মাইলে। গতরাতে অজগর সাপে কামড় দিয়েছে তাঁকে। পায়ের গোড়ালিতে কামড় বসিয়েছে। সাপের কামড়ে অনেকটা মাংস উঠে গিয়েছে। এমন অবস্থায় কী করবেন, বুঝে না উঠে বিশাল আকারের সেই অজগর সাপটাকেই তুলে নিয়ে হাসপাতালে চলে এসেছেন তিনি।
জানা যাচ্ছে, গতরাতে শ্যামল রায় পাশের বাড়িতে নিমন্ত্রণ খেতে যাচ্ছিলেন। সেই সময় রাস্তার উপরে শুয়ে ছিল এই অজগর। অন্ধকারের মধ্যে দেখতে না পেয়ে শ্যামলের পা গিয়ে পড়ে অজগরের গায়ে। আর সঙ্গে সঙ্গে কামড় বসিয়ে দেয় গোড়ালিতে। তারপর সেই বিশাল অজগর সাপটিকে কোনওরকমে বস্তার মধ্যে ভরে হাসপাতালে নিয়ে আসেন তিনি। হাসপাতালের ভিতরে এমন পেল্লায় আকারের একটা অজগর সাপ দেখে আতঙ্ক ছড়ায় বাকি রোগী ও রোগীর পরিজনদের মনেও। পরে হাসপাতালের তরফে খবর দেওয়া হয় বন দফতরে। বন দফতরের কর্মীরা এসে সাপটিকে উদ্ধার করে নিয়ে যান। আপাতত হাসপাতালে শ্যামলের পায়ে সাপের কামড়ের ক্ষতের চিকিৎসা চলছে।
উল্লেখ্য, অনেক সময়েই কী সাপে কামড়েছে, তা বুঝতে না পেরে মানুষজন সাপটিকে নিয়ে হাসপাতালে চলে যান। কিন্তু এভাবে সাপ তুলে নিয়ে যাওয়ার কোনও কারণ থাকে না। কারণ, সব সাপ বিষধর হয় না। আর বিষধর সাপের সবার জন্যই একটি কমন অ্যান্টিভেনম থাকে। তাই কোন সাপে কামড়েছে, সেটি না জানালেও অ্যান্টিভেনম দেওয়া যায়। আর এইভাবে সাপ নিয়ে যাওয়া বেশ বিপজ্জনকও বটে। কারণ, যদি বিষধর সাপও কামড়ায়, তাহলে সবসময় তা মৃত্যুর কারণ নাও হতে পারে। কত মাত্রায় বিষ ঢাললে মৃত্যু হতে পারে, তা এক একটি সাপের ক্ষেত্রে এক এক ধরনের। ফলে যদি প্রথমবার সেই মাত্রায় বিষ নাও ঢোকে, পরে সাপ ধরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় আবার সাপটি কামড়াতে পারে।
আর এক্ষেত্রে যে সাপে কামড়েছে, সেই অজগর সাপ একেবারেই নির্বিষ। কিন্তু সাপের কামড় থেকে মানুষের মনে যে আতঙ্ক এখনও রয়ে গিয়েছে, ফালাকাটার হাসপাতালের এই ঘটনা সেটাই আবারও প্রমাণ করল।
এই বিষয়ে বিশিষ্ট সর্প বিশারদ মিন্টু চৌধুরী বলেন, ‘অজগর সাপ নির্বিষ। ওর কামরে মানুষের মৃত্যু হয় না। তবে যে ভাবে সাহস করে অজগর সাপটিকে বস্তাবন্দি করে হাসপাতালে নিয়ে এসেছেন ওই ব্যক্তি, সেটা শুভ বুদ্ধির প্রমান দিয়েছে। কারণ, তিনি সাপ চিনতে পারেনি, তাই সাপ নিয়ে গিয়েছিলেন। তবে এই ভাবে সাপ না জেনে ধরতে গেলে, বিপদ ঘটতে পারে।’