বীরভূম: দেখতে দেখতে এক বছর পার। ঠিক এক বছর আগে আজকের দিনেই সিবিআইয়ের হাতে গ্রেফতার হন বীরভূমের বেতাজ বাদশা অনুব্রত মণ্ডল। দিনটা ছিল রাখী পূর্ণিমা। সিবিআই গোয়েন্দারা বোলপুরের নীচুপট্টির বাড়ি থেকে টানতে টানতে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁকে। মাঝে এই একবছরে অনেক জল বয়ে গিয়েছে। সময় বদলেছে। এককালে যে বীরভূমে তৃণমূলের শেষ কথা কেষ্ট মণ্ডলই বলতেন, এখন সেই তৃণমূল কেষ্টকে ছাড়া দিব্যি চলতে শিখে গিয়েছে। অনুব্রতকে ছাড়াই পঞ্চায়েত ভোট উতরে গিয়েছে তৃণমূল। এক বছর পেরিয়ে কেমন পরিস্থিতি বোলপুরের নীচুপট্টিতে? খোঁজখবর নিয়ে দেখল টিভি নাইন বাংলা।
কখনও ‘চড়াম চড়াম’, তো কখনও ‘গুড় বাতাসা’। কখনও আবার ‘ভয়ঙ্কর খেলা’র হুঙ্কার। কেষ্টর এসব দাওয়াইয়ের অপেক্ষায় বলে থাকতেন দলের কর্মী-সমর্থকরা। ৩৬৫ দিন গমগম করত নীচুপট্টির এলাকা। কড়া নিরাপত্তায় ঘেরা থাকত কেষ্ট মণ্ডল বাড়ি। দিনভর ছোট-বড়-মাঝারি নেতাদের আনাগোনা লেগেই থাকত। বিরোধীরা একটা সময় বলত, তাঁর কথাতেই নাকি বীরভূমে পাতা নড়ে। নীচুপট্টির এই বাড়ি থেকেই নাকি গোটা জেলার ভোট নিয়ন্ত্রণ করতেন অনুব্রত মণ্ডল। এ বাড়ি যেন ‘কন্ট্রোল রুম’। অথচ এখন সে সব কোথায়!
গোটা বাড়িটা যেন আজ নিষ্প্রাণ হয়ে গিয়েছে। খাঁ খাঁ করছে নীচুপট্টির সেই বাড়ি। কেষ্ট বাড়িতে নেই। সুকন্যাও তিহাড়ে। নেই সেই গমগমে পরিবেশও। এক বছরের মধ্যেই পাল্টে গিয়েছে অনুব্রত মণ্ডলের নীচুপট্টির বাড়ির সেই চেনা ছবিটাও। হাতে গোনা কিছু পুলিশকর্মী শুধু রয়েছেন পাহারায়। কেষ্টর বাড়ির সামনে তৃণমূলের একটি পতাকা রয়েছে। সেটি বছর বছর পাল্টানো হত। কিন্তু এখন, সেটাও অবহেলায়। কার্যত মলিন হয়ে গিয়েছে। এক বছর ধরে পতাকা বদলানো হয়নি।
স্থানীয় বাসিন্দারাও বলছেন, এখন কেউ নেই। পার্টির নেতাদেরও দেখা নেই এক বছরে। নিরাপত্তারক্ষীরাই এখন শুধু বাড়ির সামনে পাহারা দেন। কেষ্টর অনুগামীদেরও মন খারাপ। আপদে-বিপদে সবসময় ‘দাদা’কে পাশে পেতেন তাঁরা। কিন্তু এখন আর সেই ছবি নেই। বলছেন, ‘আমরাই এখন বাড়ি গার্ড দিচ্ছি। কী করব, কিছু তো করার নেই। মন খারাপ করে। তিনি পাশে থাকতেন। আমাদের ভরসা থাকত যে মাথার উপরে একটা গাছ রয়েছে।’
তবে কেষ্টহীন বীরভূমে কিছুটা খুশি বিরোধীরা। বিরোধীরা বলছে, ‘উনি থাকলে ঝামেলা হত। কিন্তু এবার সুষ্ঠুভাবে মনোনয়ন জমা পড়েছে।’ স্থানীয় বাসিন্দাদের কেউ কেউ আবার বলছেন, এই এক বছরে বিজেপির সংগঠন অনেকটা বেড়েছে। এবারের পঞ্চায়েত ভোটে যে অতীতের মতো ঝামেলা হয়নি, সেই কথাও মানছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
যদিও রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিনহা বলছেন, ‘খারাপ তো লাগছেই। আমরা একসঙ্গে রাজনীতি করেছি। তিনি জেলার নেতৃত্ব দিতেন। জেলার মানুষ নিশ্চয়ই তাঁর অভাব বোধ করছেন। আমরা যতটা পারছি, সবাই মিলে সেই অভাব পূরণের চেষ্টা করছি।’ তাঁর আশা, কেষ্টর যাতে তাড়াতাড়ি জেল মুক্তি হয়।
বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার আবার বলছেন, ‘কেষ্টবাবু ওখানে ভালই আছেন। বর্ষপূর্তির জন্য় ওনাকে অভিনন্দন। চিন্তার কিছু নেই, আরও কয়েক বছর থাকতে হবে। ওনার মেয়ে হয়ত বাবার একটু আগে ছাড়া পাবেন।’