শিলিগুড়ি: রাজ্য সরকার চলতি অর্থবর্ষের বাজেটে ৩ শতাংশ মহার্ঘভাতা বাড়িয়েছে বটে, কিন্তু তাতে সন্তুষ্ট নয় আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারীরা। তাদের সাফ কথা, ভিক্ষা চাই না, হকের ডিএ চাই। এদিকে রাজ্য সরকারও নিজেদের অবস্থানে অনঢ়। বর্তমানে সরকারের যা আর্থিক অবস্থা, তাতে ৩ শতাংশের বেশি ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এবার অভিনব প্রতিবাদে সামিল শিলিগুড়ির এক স্কুল শিক্ষক। প্রতি মাসে যখন বেতন ঢোকে, তখন ওই তিন শতাংশ ডিএ তিনি আবার ফেরত পাঠিয়ে দেন সরকারের খাতে। হিসেব কষে তিন শতাংশ মহার্ঘভাতার অঙ্ক, ডিমান্ড ড্রাফ্টে মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে পাঠিয়ে দেন শিলিগুড়ি বয়েজ হাইস্কুলের বাংলার শিক্ষক প্রবীর বর্মণ।
হকের মহার্ঘভাতার দাবিতে নাগাড়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছে রাজ্যের সরকারি কর্মচারীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। লাগাতার আন্দোলন চলছে। কিন্তু এখনও আশানুরূপ কিছু হয়নি। সরকার বলছে, বর্তমান অবস্থায় এই তিন শতাংশের বেশি ডিএ দেওয়া সম্ভব নয়। তাই এবার বেতন হলেই বর্ধিত মহার্ঘভাতা ফিরিয়ে ‘সরকারের পাশে দাঁড়িয়ে’ নীরব প্রতিবাদ চালিয়ে যাচ্ছেন শিলিগুড়ির মাস্টারমশাই।
কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন সরকারি কর্মচারীরা। কিন্তু সেই দাবি পূর্ণ হয়নি। রাজ্য সরকার ৩ শতাংশ ডিএ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। কিন্তু মাস্টারমশাই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, এই টাকা তিনি নেবেন না। এটাই হবে তাঁর প্রতিবাদের ভাষা। এই বিষয়ে শিক্ষা দফতরকেও জানিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু তারপরও প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে তিন শতাংশ বর্ধিত ডিএ ঢুকছে তাঁর স্যালারি অ্যাকাউন্টে। অগত্যা, নিজেই উপায় বের করে নিয়েছেন। ওই তিন শতাংশ ডিএ আবার সরকারের কাছেই ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছেন তিনি। প্রতি মাসে বেতন ঢুকলেই চেক কেটে ডিমান্ড ড্র্যাফ্টে তিন শতাংশ বর্ধিত ডিএ-র টাকা তিনি পাঠিয়ে দেন মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে। গত কয়েকমাস ধরে এটাই হয়ে উঠেছে প্রবীরবাবুর মাস পহেলার রুটিন।
শিলিগুড়ির মাস্টারমশাইয়ের কথায়, ‘আমার প্রাপ্য, আমার অধিকার ডিএ। সরকারের টাকা নেই বলছে। তাই সামান্য তিন শতাংশ ডিএ ফিরিয়ে দিয়ে সরকারের পাশে দাড়াচ্ছি।’ প্রবীরবাবু বলেন, ‘দায়িত্ব ও দায়বদ্ধতা আমার আছে। ছাত্রদের পড়াই। কিন্তু নিজের অধিকারের লড়াই করতে জানি। শিলিগুড়ি থাকি বলে যৌথ মঞ্চের আন্দোলনে যেতে পারি না। কিন্তু এভাবেও তো লড়াই করাই যায়। তাই মাস পয়লায় চেক লিখে পাঠাই মুখ্যমন্ত্রীকে। সকলেই যদি এভাবে টাকা ফেরাতেন, সরকারের চাপ আরো বাড়ত। আমি আমার লড়াই চালাচ্ছি। পথ প্রদর্শক হতে চাই না। নিজের অধিকারের লড়াই লড়তেই থাকব।’