হুগলি: বোর্ড গঠন ঘিরে তপ্ত হয়ে ওঠে ফুরফুরা শরিফ। আক্ষরিক অর্থেই খণ্ডযুদ্ধের পরিস্থিতি তৈরি হয়। ফুরফুরা শরিফে পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের অশান্তির মাঝে ঢিল পড়ে নওশাদ সিদ্দিকির বাড়িতে, এমনটাই অভিযোগ। এদিনের বোর্ড গঠনে দুই রাজনৈতিক দলের আকচাআকচির বদলে মনোযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে চলে আসেন নওশাদ বনাম পুলিশ। পুলিশের সঙ্গে তর্কে জড়াতে দেখা যায় নওশাদকে। বাংলার রাজনীতিতে ঠান্ডা মাথার পরিণত উদীয়মান রাজনৈতিক নেতা নওশাদের বিরুদ্ধে এদিন ওঠে অসৌজন্যের অভিযোগও। আর এসবের মাঝেই ক্ষুব্ধ নওশাদের মুখে চলে আসে ফুরফুরা শরিফের অন্যতম রাজনৈতিক চরিত্র ত্বহা সিদ্দিকির নামও। নওশাদ বললেন, “ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে আলোচনা করে কোনও লাভ হবে না।” কিন্তু পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরাতে গিয়ে কেন নওশাদের মুখে ত্বহার নাম এল? ত্বহা তৃণমূল ঘণিষ্ঠ বলেই কি নওশাদ একথা বললেন, উঠছে প্রশ্ন।
কী কারণে ফুরফুরা শরিফ উত্তপ্ত হয়ে উঠল, কেনই বা মেজাজ হারালেন তিনি? TV9 বাংলাকে একান্ত সাক্ষাৎকারে সবটাই জানালেন নওশাদ। তিনি বলেন, “আজকে এখানে ফুরফুরায় পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের দিন ধার্য ছিল। আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করেই যত ঝামেলা। সেটা আমার ভাববারও বিষয় নয়। কিন্তু আমার বাড়ির ভিতরেই সেল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমি পারিবারিক কাজে বেরিয়ে যাচ্ছিলাম। আমি খবর পেলাম, আমার বাড়িতে সেল ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমার বাড়ির কাচ ভেঙেছে।”
এলাকার পরিস্থিতি যখন অত্যন্ত তপ্ত, বোমাবাজির অভিযোগ উঠছে, তখন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তিনি। নওশাদ বলেন, “আমি অ্যাডিশনাল এসপি-কে জিজ্ঞাসা করলাম, কোনও উত্তর দিতে পারলেন না। আমি অবস্থান বিক্ষোভে বসলাম। আমি দেখলাম পুলিশ মারধর করছিল। আমি অনুরোধ করলাম, শান্ত পরিবেশকে উত্তপ্ত করবেন না। ফুরফুরা শরিফ, শান্তির জায়গা। আমি একাই অবস্থান বিক্ষোভ করছিলাম। আমি অবস্থান তুলেও নিই। বাড়িতে ঢুকেছি, মোবাইল রাখছিলাম। সেল ফাটাতে শুরু করল।” ফুরফুরা শরিফের অরাজনৈতিক ব্যক্তি পীর সাহেবদের ওপরেও হামলা চলেছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
নওশাদ বলেন, “ওরা পীর সাহেবদের দরবারে ঢুকে যাচ্ছিল। সিনিয়র মোস্ট পীর সাহেবের দরবারে ঢুকে যায়। তাঁদেরকে মারধরও করেছে। আমিও ফুরফুরা শরিফের একজন পীরজাদা। কিন্তু আমি তো পীর সাহেবদের ওপরে কথা বলতে পারিনা।” তখনই তিনি বলেন, “আমি পুলিশ কর্তাদের অনুরোধ করেছি, আপনাদের সিনিয়র যাঁরা আছেন, তাঁর পীর সাহেবদের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা মিটিয়ে নিন। তবে অন ক্যামেরা এটাও বলে রাখছি, ত্বহা সিদ্দিকির সঙ্গে কথা বলে কিছু হবে না। পীর সাহেবদের ওপর যে আক্রমণ হয়েছে, তার বিচার করতে হবে। দরকার হলে আমি আইনি লড়াই লড়ে নেব পুলিশের সঙ্গে। পীর সাহেবরা রাজনীতি থেকে দূরে থাকেন, তাঁদের ওপর আক্রমণ হয়েছে।”
ফুরফুরা শরিফের এদিনের অশান্তি নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের ওপরে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন নওশাদ। আর এই সূত্রেই উঠে এসেছে ত্বহা সিদ্দিকির নাম। পীরজাদা ত্বহা সিদ্দিকিকে একসময় বাংলার মানুষ শাসকঘনিষ্ঠ হিসাবেই চিনত। কিন্তু তিনি সুর পাল্টেছিলেন সাগরদিঘি উপনির্বাচনের সময় থেকেই। উপনির্বাচনের সময়ে তৃণমূলের প্রার্থী বাছাই নিয়ে সুর চড়িয়েছিলেন তিনি। আবার ত্বহা সিদ্দিকিকে যখন শাসকদলের ওপর ভরসা রাখতে দেখা গিয়েছে, তখন সুর চড়াতে দেখা গিয়েছে নওশাদ কিংবা আব্বাসকেও। এই দূরত্ব ‘আইএসএফ’-এর আত্মপ্রকাশের আগে থেকেই। ফুরফুরা শরিফের বোর্ড গঠনকে সামনে রেখে রাজনীতির পাশা চালাচালি আবারও সামনে এল। ত্বহা সিদ্দিকির অবশ্য এদিন কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।