আসানসোল: বাথরুমে পড়ে হাত ভেঙেছে দেহরক্ষীর। শুনানির দিন বিচারককে সেই কথা নিজেই জানালেন বীরভূমের ‘বাঘ’ অনুব্রত মণ্ডল। বৃহস্পতিবার আসানসোল সিবিআই বিশেষ আদালতে গরু পাচার মামলার শুনানি ছিল। ভার্চুয়ালি সেই শুনানিতে হাজিরা অংশ দেন অনুব্রত। কিন্তু থাকতে পারেননি সায়গল হোসেন। সায়গল কেন নেই, সেই প্রশ্ন করেন বিচারক। তখনই অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “ওঁর হাত ভেঙে গিয়েছে। বাথরুমে পড়ে। হাসপাতালে এমআরআই করাতে গিয়েছে।” বিচারক তখন অনুব্রত মণ্ডলকে দেখে বলেন, “আপনিও তো দেখছি অনেক রোগা হয়ে গিয়েছেন।” অনুব্রত বলেন, “হ্যাঁ সাহেব শরীরের রোগগুলো তো সবই রয়েছে। ওষুধপত্র সবই চলছে।” বিচারক জানতে চান, “ইনহেলার নিচ্ছেন?” অনুব্রত বলেন, “ইনহেলার , লিমুনাইজার দুটোই নিচ্ছি।”
গত দু’বার অনুব্রতর ভার্চুয়াল শুনানি না হলেও এবার তিহাড় জেল থেকে তাঁর সঙ্গে সরাসরি কথা বললেন বিচারক রাজেশ চক্রবর্তী। যদিও এদিন আদালতে অনুব্রতর হয়ে আর জামিনের আবেদন করেননি তাঁর আইনজীবী। অনুব্রত মণ্ডল বিচারককে বলেন, “শুনছি কেসটা দিল্লি চলে যাবে। আমরা দিল্লি যাব কেন? আমরা বাংলার মানুষ, আমাদের বাড়ি বাংলায়, আমরা দিল্লি যাব কেন? সাক্ষী-সহ সবার বাড়ি বীরভূমে।”
বিচারক বলেন, “দিল্লি কোর্ট বলেছে, চার মাস আপনাকে ওখান থেকে রিমুভ করা যাবে না, তাই এখন ওখানেই থাকতে হবে।”
বিচারক বলেন, “ইডি একটা আবেদন করেছে। আর কেস ট্রান্সফারের সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। ১৯ তারিখ শুনানি রয়েছে।” বিচারক আরও বলেন, “আপনার উকিলকে বলবেন প্রেয়ার করতে, আমি দেখব কিন্তু দেশের আইন যদি বাধ্য করে কেস ট্রান্সফারের বিষয়টি, তাহলে সেই আইন আমাকে মানতে হবে। আইন সবার জন্য সমান। আপনার ক্ষেত্রেও, আমার ক্ষেত্রেও।”
তখন অনুব্রত বিচারকের কাছে জানতে চান, “আমি কি হাইকোর্ট, সুপ্রীম কোর্ট যেতে পারি?” বিচারকের উত্তর, “অবশ্যই, সেজন্য তো হাইকোর্ট , সুপ্রিম কোর্ট খোলা হয়েছে। আপনারা সেখানেও আবেদন জানাতে পারেন।”
অনুব্রত বলেন, “সাহেব , আমার সব অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ আছে। একটা অ্যাকাউন্ট খোলার ব্যবস্থা করে দিন। লেবার পেমেন্ট হচ্ছে না। বেতন বোনাস কিছুই দিতে পারছি না।”
বিচারক বলেন, “আপনার মুখের কথায় এটা সম্ভব নয়। আইনজীবী মারফৎ আবেদন করুন। আমার কাছে এখনও পর্যন্ত এ মর্মে একটা আবেদনও আসেনি।” তখন অনুব্রত মণ্ডল বলেন, “আমার উকিলকে লাইনটা দিন আমি বলে দিচ্ছি।”
বিচারক তখন বলেন, “আপনার মেসেজটা আমি আপনার উকিলকে বলে দিলাম, আপনার আইনজীবী প্রেয়ার করুক আমি দেখব।” এই মামলার পরবর্তী শুনানি ১২সেপ্টেম্বর।
উল্লেখ্য, গত ৩০ জুন ও ১৪ জুলাই অনুব্রত ও সায়গলের ভার্চুয়াল শুনানির কথা থাকলেও তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগই করা যায়নি। পরপর দু’দিন ওই দু’জনকে উপস্থিত না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বিচারক। তিনি জরুরি ভিত্তিতে তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষকে ই -মেইল করে নির্দেশ দিয়েছিলেন, ১০ অগস্ট যেন এই দু’জনকে ভার্চুয়ালি উপস্থিত করানোর ব্যবস্থা করা হয়। সেই মত দেখা যায়, তিহাড় জেল কর্তৃপক্ষ আসানসোল সিবিআই আদালতকে নতুন লিঙ্ক পাঠিয়ে তড়িঘড়ি ভার্চুয়াল শুনানির ব্যবস্থা করেন।
গত ১৪ জুলাই সিবিআই আদালতে তদন্তকারী অফিসার বহু নতুন তথ্যের হদিশ জমা করেছিলেন। যার মধ্যে ছিল আরও জমির ডিড, পেট্রলপাম্প, ভুয়ো অ্যাকাউন্টের হদিশ সায়গলের মা,স্ত্রী ও শ্যালকের নামে রয়েছে। ছিলেন সুকন্যার মালিকানায় নতুন কোম্পানির অ্যাকাউন্টে সাড়ে তিন কোটির লেনদেনের তথ্য। এনামুলের সঙ্গে কেষ্টর রাইস মিলের সরাসরি যোগসূত্রর তথ্যও জমা হয়েছিল ওইদিন। এদিন সিবিআই তদন্তকারী অফিসার আদালতে যাননি। দু’পক্ষের আইনজীবির কোনও সওয়াল জবাবও হয়নি।