মেদিনীপুর: পিংলায় বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় অভিযুক্ত ৩ জনকে ১৫ বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের নির্দেশ দিল মেদিনীপুর আদালত। যদিও অভিযুক্তের এক জনের স্ত্রীর অভিযোগ, সিআইডি কুড়ি লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিল সেই টাকা না দেওয়াতেই ফাঁসানো হয়েছে বলে অভিযোগ সদ্য সাজাপ্রাপ্ত নিমাই মাইতির স্ত্রীর। এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন বলে জানালেন তিনি।
৮ বছর বিচার প্রক্রিয়া চলার পর পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার ব্রাহ্মণবাড়ে বেআইনি বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের ঘটনায় তিন জনের ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ড এবং ১০ হাজার টাকা জরিমানার নির্দেশ দেন বিচারক। সোমবার মেদিনীপুর জেলা আদালতের ফাস্ট অ্যাডিশনাল কোর্টের বিচারক সালিম সাহি এই সাজা ঘোষণা করেছেন বলে জানিয়েছেন সিআইডি পক্ষের আইনজীবী দেবাশিস মাইতি।
আইনজীবী জানান, ওই ঘটনায় ১০ জন শিশু-সহ ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছিল। বিচারক ১১ টি ধারায় বিভিন্ন সাজা ও আর্থিক জরিমানার নির্দেশ দিয়েছেন। সর্বোচ্চ সাজা ১৫ বছর সশ্রম কারাদণ্ডের সঙ্গে ১০ হাজার টাকা আর্থিক জরিমানা, অনাদায়ে ৬ মাসের জেল। সেই সঙ্গে বিচারক নির্দেশ দিয়েছেন ওই মৃত শিশু শ্রমিকদের পরিবারকে ২ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার।
আসামীপক্ষের আইনজীবী প্রসূন দাস অধিকারী জানান, এই রায়ের অনুলিপি সংগ্রহ করে উচ্চ আদালতে যাওয়া হবে। ২০১৫ সালের মে মাসে ব্রাহ্মণবাড় গ্রামে বাজি কারখানায় পরপর বিস্ফোরণে ১০জন শিশুশ্রমিক-সহ প্রাণ গিয়েছিল ১৩ জনের। তার মধ্যে রাম মাইতি, তাঁর স্ত্রী রিনা মাইতি এবং শুভেন্দু ভক্তার মৃত্যু হয়েছিল। শনিবার তিন জনকে দোষী সাব্যস্ত করেন বিচারক। ঘটনার তদন্ত করেছে সিআইডি। মামলার তদন্তকারী অফিসার ছিলেন নীরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য।
তিনি বর্তমানে অবসর গ্রহণ করলেও এদিন আদালতে হাজির ছিলেন। প্রথমে তদন্ত শুরু করেছিল পুলিশ। পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে তদন্তভার হাতে নিয়েছিল সিআইডি। ওই ঘটনায় পিংলার তৃণমূলকর্মী রঞ্জন মাইতি, রঞ্জনের ভাই নিমাই মাইতি এবং মুর্শিদাবাদ এর সুরজ শেখকে গ্রেফতার করেছিল সিআইডি। ভারতীয় দণ্ডবিধির ২৮৫, ২৮৬, ৩২৩, ৩০৪ পার্ট টু, ৩৪ এবং সেকসেন ৪/৫ এক্সপ্লোসিভ সাস্টেন্স অ্যাক্ট (ই এস), সেকোসেন ৯ (বি) আই ই অ্যাক্ট এবং জুভেনাইল জাস্টিস অ্যাক্টের একাধিক ধারা এবং ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্ট এর ধারায় এদিন সাজা ঘোষণা করেন বিচারক।
এদিন রায় ঘোষণার পরে আদালত চত্বরের মধ্যেই কান্নায় ভেঙে পড়েন সদ্য সাজাপ্রাপ্ত নিমাই মাইতির স্ত্রী সুলেখা মাইতি। তাঁর অভিযোগ, স্বামীকে রাজনৈতিকভাবে ফাঁসানো হয়েছে। সিআইডি কুড়ি লক্ষ টাকা ঘুষ চেয়েছিল। না দেওয়ার জন্যই এভাবে ফাঁসিয়ে দেওয়া হয়েছে।