চন্দ্রকোনা: যাদবপুরের পড়ুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় জমছে রহস্যের মেঘ। র্যাগিং-এর অভিযোগ উঠে আসছে। এসবের মধ্যেই গতরাতে প্রথম গ্রেফতারি। সৌরভ চৌধুরী। যাদবপুরের বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তনী। মৃত স্বপ্নদীপের পরিবার পুলিশের কাছে যে অভিযোগ জানিয়েছিল, সেখানেও নাম ছিল এই সৌরভের। প্রথমে আটক করে দীর্ঘক্ষণ জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় তাঁকে। সূত্রের খবর, বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি ছিল। আর এরপরই গ্রেফতার হয় পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনার সৌরভকে। চন্দ্রকোনার খারুষা গ্রামের এক কৃষক পরিবার থেকে উঠে আসা সৌরভ কীভাবে এমন একটি ঘটনার সঙ্গে জড়িয়ে গেল, তা ভেবে কূল কিনারা পাচ্ছেন না প্রতিবেশীরা। শুক্রবার রাতে বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর থেকে একপ্রকার স্তম্ভিত তাঁরা।
গ্রামের একেবারে প্রান্তিক কৃষক পরিবারের ছেলে সৌরভ। কোনওরকমে চাষ-বাস করে সংসার চালান তাঁর বাবা নিরূপ চৌধুরী। বাবা-মায়ের একমাত্র সন্তান সৌরভ। মেধাবি পড়ুয়া হিসেবেই গ্রামের সকলে চেনেন সৌরভকে। ডাব্লুবিসিএস অফিসার হতে চাইত। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় খুব ভাল। গ্রাম থেকে কিছু দূরে টেনপুর হাইস্কুলে পড়াশোনা। ঘরের মধ্যে এখনও গাদা গাদা অঙ্কের বই। উচ্চমাধ্যমিকে অঙ্কে একশোয় একশো পেয়েছিল। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ার রহস্যমৃত্যুর ঘটনায় সৌরভের গ্রেফতারির খবর পৌঁছেছে স্কুলের প্রাক্তনীদের কাছেও। গোটা ব্যাপারটায় বেশ হতবাক তাঁরাও। গ্রামের লোকজনের কাছে হোক বা স্কুলে, বরাবর শান্ত স্বভাবের ছেলে হিসেবেই এতদিন সৌরভকে চিনেত এসেছেন সবাই। হঠাৎ করে এমন একটা ঘটনায় গ্রেফতারি কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন তাঁরা খারুষা গ্রামের প্রতিবেশীরা।
এদিকে ছেলের গ্রেফতারির খবর পেয়ে পুরোপুরি ভেঙে পড়েছেন দরিদ্র বাবা ও মা। শনিবার কাকভোরে রওনা দিয়েছেন কলকাতার উদ্দেশে। উচ্চশিক্ষার জন্য কলকাতায় এসে, ছেলের এমন একটি ঘটনার সঙ্গে নাম জড়িয়ে যাওয়ায় মানসিকভাবে বিপর্যস্ত তাঁরা। আত্মীয় পরিজন থেকে শুরু করে পাড়া-প্রতিবেশীরা কেউই বুঝে উঠতে পারছেন না, এমন ঘটনায় কীভাবে নাম জড়াল সৌরভের। তাঁর মা বলছেন, ছেলেকে ফাঁসানো হয়েছে। গতকালও গ্রেফতারির আগে মাকে ফোনে বলেছিলেন, তিনি নির্দোষ। তিনি কারও র্যাগিং করেননি বলেও মাকে জানিয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়ার পরেও কেন সৌরভ হস্টেলে রয়ে গিয়েছিলেন, তা নিয়েও বিস্তর প্রশ্ন উঠেছে। তবে তাঁর মায়ের দাবি, আর্থিক অনটনের জন্যই হস্টেলে থেকে গিয়েছিলেন সৌরভ। মাঝে একটা ঘরভাড়া নিয়ে থাকছিলেন কলকাতায়। প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। মাকে বলেছিলেন, এখানে থাকতে থাকতে যাতে একটা চাকরির ব্যবস্থা করে নিতে পারে, সেই চেষ্টাই করছিলেন।
গ্রামের লোকজন যে সৌরভকে চেনেন, জানেন… আর যে অভিযোগ সৌরভের বিরুদ্ধে উঠছে… দুইয়ের মধ্যে কোনও মিল খুঁজে পাচ্ছেন না তাঁরা।