পূর্ব মেদিনীপুর: প্রথম উক্তি: একটা ট্রলার বিক্রি করলেই দুটো ঋণ শোধ হয়ে যাবে।
দ্বিতীয় উক্তি: একটি এফডি ভাঙলেই বাড়ির লোন শোধ হয়ে যাবে।
তৃতীয় উক্তি: ওপরওয়ালা যা দিয়েছে, তাতে লোন শোধ করা আমার কাছে কোনও ফ্যাক্টর নয়।
জাহাজবাড়ি যখন নিলামে, তখন নিজের অবস্থান বুঝিয়ে দিলেন শেখ সুফিয়ান।
ওপরওয়ালা আমাকে যা দিয়েছে, তাতে এরকম লোন শোধ করা তাঁর কাছে কোনও বড় ফ্যাক্টরই নয়। নিজেই জানালেন নন্দীগ্রামের প্রাক্তন জেলা পরিষদের সহকারি সভাধিপতি শেখ সুফিয়ান। তাঁর বিরুদ্ধে ঋণ খেলাপি নিয়ে মামলা করার ভাবনা রয়েছে ব্যাঙ্কের। এদিকে ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধেই পাল্টা আইনি পদক্ষেপের হুঁশিয়ারি দিয়েছেন সুফিয়ান। ইতিমধ্যেই নন্দীগ্রাম থানায় অভিযোগ দায়ের করেছেন ব্যাঙ্কের বিরুদ্ধে।
সুফিয়ানের বক্তব্য, “এটা পরিকল্পিত চক্রান্ত। আমার রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনকে কলুষিত করার চেষ্টা চলছে। কোটি কোটি টাকা ঋণ খেলাপি থাকে, কারোর নাম সংবাদপত্রে হাইলাইটেড হয় না। কিন্তু আমার নাম করা হচ্ছে।” TV9 বাংলার ক্যামেরার সামনে অত্যন্ত আত্মবিশ্বাসী সুফিয়ান। স্পষ্টই তিনি বললেন, “আমি ট্রলারের মালিক। আমি দিঘাতে ব্যবসা করি, মাছের আড়ত রয়েছে… সেটা সবাই জানে। আমার এক একটা ট্রলারের যা দাম, ওরকম দুটো লোন শোধ হয়ে যাবে।”
কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাংকের ৪৯ লক্ষ টাকা ঋণশোধ না করার অভিযোগ ওঠে শেখ সুফিয়ানের বিরুদ্ধে। ব্যাঙ্কের দাবি, ২০১৪ সালে নন্দীগ্রামে জাহাজবাড়ি করার জন্য কন্টাই কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্ক থেকে ২৫ লক্ষ টাকা ঋণ নেন শেখ সুফিয়ান। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাস পর্যন্ত নিয়মিত ইএমআই দিলেও তারপর থেকে কিস্তির টাকা শোধ করছেন না। গত ১৮ মাস কিস্তির একটি টাকাও দেননি। ওই লোনের এখনও সাড়ে ৭লক্ষ টাকা বকেয়া আছে রয়েছে। এছাড়াও ট্রলার কেনার জন্য ওই ব্যাঙ্ক থেকেই ২০২০ সালে ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। তারও একটিও কিস্তি শোধ করেননি। এই মুহূর্তে আসল ২৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকার পাশাপাশি সুদ হয়েছে আরও ১লক্ষ ৬৯ হাজার টাকা। ব্যাঙ্কের পাওনা ৪৯ লক্ষ টাকা বলেই জানা যাচ্ছে।
সুফিয়ান অবশ্য দাবি করেছেন, “কোভিড সময় কালের অতিরিক্ত দু’বছরের সুদ চাপিয়েছে ব্যাঙ্ক। আমি বলেছিলাম, সুদ বাতিল করে দিন, আমি বাকি টাকা দিচ্ছি। ব্যাঙ্ক মানেনি। এখন এই ধরনের কুৎসা রটানো হচ্ছে।”
সুফিয়ানের আরও বক্তব্য, “আমার বাড়ির লোন সামান্য মাত্র। যেটা আমার এফডি করা আছে, সেটা তুললেই বাড়ির লোন মিটে যাবে। সেটা ফ্যাক্টর নয়। আমি উকিলের ব্যবস্থা করেছি। আমি নিজেই কেস করেছি। এখন এই মামলা বিচারাধীন।” চ্যালেঞ্জের সুরেই তিনি বললেন, “ওপরওয়ালা আমাকে যা দিয়েছে, তাতে লোন শোধ করা কোনও বড় ফ্যাক্টর নয়। আমার এক একটা ট্রলারের দাম এক কোটি টাকা। এক ট্রলার বিক্রি করলেই দুটো লোন শোধ হয়ে যাবে।” ব্যাঙ্কের সঙ্গেই এখন আইনি লড়াইয়ের প্রস্তুত শেষ সুফিয়ান।