Bangladesh: অদম্য এক নারীর নাম সাজেদা বেগম, ৭৭ বছর বয়সে বসলেন স্কুলে ভর্তির পরীক্ষায়

Rajib Khan | Edited By: Sukla Bhattacharjee

Aug 10, 2023 | 10:36 PM

Bangladesh News: ছেলে-মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজের অধরা স্বপ্ন ভুলতে পারেননি সাজেদা বেগম। তাই ৭৭ বছর বয়সে ফের শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণের চেষ্টা করেন সাজেদা বেগম।

Bangladesh: অদম্য এক নারীর নাম সাজেদা বেগম, ৭৭ বছর বয়সে বসলেন স্কুলে ভর্তির পরীক্ষায়
৭৭ বছর বয়সে পরীক্ষায় বসলেন সাজেদা বেগম।
Image Credit source: নিজস্ব চিত্র।

Follow Us

ঢাকা: একেই বলে অদম্য জেদ। বয়স ৭৭ বছর। কিন্তু, এখনও মনের জোর কমেনি। এই বয়সে এসেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ কমেনি। তাই ঢাকার আঞ্চলিক কেন্দ্রে SSC ভর্তি পরীক্ষায় অবতীর্ণ হন সাজেদা বেগম। বাংলাদেশের ঢাকা (Dhaka) শহরের বাসিন্দা সাজেদা বেগম ৭৭ বছর বয়সে পরীক্ষায় বসে রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন বাংলাদেশে। বলা যায়, এখন বাংলাদেশে একটি অনুপ্রেরণার নাম হল, সাজেদা বেগম।

অদম্য জেদের অধিকারী সাজেদা বেগম। চিরন্তন ও প্রবহমান বাংলার হার না মানা মায়ের গল্পের মতো যেন তাঁর জীবন। ৭৭ বছর বয়সেও বুক ভরা স্বপ্ন, দৃঢ়চেতা আর অসীম সাহসই তাঁর সঞ্জীবনী শক্তি। দৃষ্টিশক্তির অস্পষ্টতা, শারীরিক অসুস্থতা কিংবা বয়সের ভার কোনও কিছুই রুখতে পারেনি তাঁর পথচলা আর স্বপ্নকে।

বাংলাদেশ উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে বুধবাপ এসএসসি ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেন সাজেদা বেগম। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার সাজেদা বেগমকে দেখে অভিভুত হয়ে যান। ‘বাউবির দীক্ষা: সবার জন্য উন্মুক্ত কর্মমুখী, গণমুখী ও জীবনব্যাপী শিক্ষা’- এই স্লোগানকে সামনে রেখে উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে অষ্টম/জেএসসি বা সমমানের সনদ নেই যাঁদের, তাঁদের ভর্তি পরীক্ষার মাধ্যমে এসএসসি প্রোগ্রামে ভর্তির সুযোগ করে দেন। যার ফলে সাজেদা বেগমের মতো সারা বাংলাদেশের সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষাবঞ্চিত আগ্রহী শিক্ষার্থীর শিক্ষা গ্রহণের পথ উন্মুক্ত হয়। রাতজাগা দীর্ঘশ্বাস, বুকে ক্রমাগত হয়ে চলা রক্তক্ষরণ আর হতাশার শিকল ছিঁড়ে যেন নতুন আলোয় উদ্ভাসের সুযোগ পান তাঁরা। তবে সকলের মধ্যে এক অনুপ্রেরণার নাম হয়ে উঠেছে সাজেদা বেগম।

জীবনের শুরু থেকেই বহু রক্তক্ষরণের সাক্ষী হয়েছেন সাজেদা বেগম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে জন্ম তাঁর। ফলে শৈশবেই দেখেছেন, সেই সময়ের হিংসা। বর্তমান ঢাকা বিমানবন্দরের ১ নম্বর টার্মিনালেই ছিল তাঁদের আদি বাড়ি। নবাব হাবিবুল্লাহ গার্লস স্কুলের ছাত্রী ছিলেন সাজেদা বেগম। স্কুলের গণ্ডি পেরোতে না পেরোতেই ঢাকা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের ইয়ং অফিসার আবুল হাসেমের সঙ্গে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয় সাজেদাকে। ফলে তৎকালীন সামাজিক প্রেক্ষাপট, বাস্তবতার মাঝে পড়ে অষ্টম শ্রেণিতেই খাঁচাবন্দি হয় সাজেদা বেগমের স্বপ্ন। এরপর একে-একে কোলজুড়ে আসেন বড় মেয়ে হাসিনা আখতার, মেজো ছেলে মাসুদ রানা ও ছোট সন্তান মাসুম রেজা। হাড়ভাঙা পরিশ্রম আর নিজের অধরা স্বপ্ন লালন করে মেয়েকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে ভর্তি করাতে সমর্থ হন সাজেদা। বর্তমানে তিনি সোনালী ব্যাঙ্কের এজিএম। মাসুদ রানা কম্পিউটার সায়েন্সে জার্মান থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়েছেন। আর মাসুদ রেজা উচ্চতর শিক্ষা সম্পন্ন করে ব্যবসা করছেন।

ছেলে-মেয়েরা প্রতিষ্ঠিত হলেও নিজের অধরা স্বপ্ন ভুলতে পারেননি সাজেদা বেগম। তাই ৭৭ বছর বয়সে ফের শিক্ষাঙ্গনে পদার্পণের চেষ্টা করেন তিনি। উন্মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তির খবর পেলেন কীভাবে জানতে চাইলে সাজেদা বেগম বলেন, “একদিন ছোট ছেলে একটা পত্রিকা নিয়ে এসে বলল ‘দেখছ মা কিশোরগঞ্জের বাউবি’র এই ছেলে চা বিক্রি করে এসএসসি পাস করছে, তোমার তো লেখাপড়ায় খুব আগ্রহ, তুমিও পরীক্ষা দাও।’ ব্যাস! সে দিন থেকেই বড় মেয়ের সঙ্গে বাউবিতে আসা যাওয়া। প্রথমদিকে লজ্জা লাগলেও পরে দেখি- সব বয়সের নারী পুরুষ, ডাক্তার, চাকরিজীবী, সচিব, পুলিশ, আর্মি, শারীরিক প্রতিবন্ধী- সবাই এখানে বিভিন্ন প্রোগ্রামে পড়াশোনা করে। আমার মনে শক্তি জাগল। ছোট ছেলে ও নাতি মোবাইলে ইন্টারনেটে দেখিয়ে দিল কীভাবে ক্লাস হয়, কী কী বিষয় পড়তে হয়।”

সাজেদা বেগমের বড় মেয়ে হাসিনা আখতার বলেন, “আমার এলাকায় নিম্ন আয়ের মানুষের কাছে মা ব্যাপক জনপ্রিয়। অসংখ্য মানুষের দৈনিক রোজগারের টাকা আম্মার কাছে তাঁরা আমানত হিসেবে রাখেন। জিম্মাদার খালা নামে ডাকেন তাঁরা। মা নকশীকাঁথা খুব সুন্দর সেলাই করেন। এক সময় বাণিজ্যিকভাবে সেলাইয়ের উদ্যোগ নিয়েছিলাম আমরা। মায়ের নান্দনিক সুনিপুণ কারুকাজ আমাদের বিস্মিত করে। শুধু তাই নয়, স্থানীয় আদিভাষায় অর্ধশত বিয়ের গীত জানেন তিনি।”

জীবন সায়াহ্নে এসে কী স্বপ্ন দেখেন আপনি? প্রশ্নের জবাবে সাজেদা বেগম বলেন, “আমি অনেকদূর পড়াশোনা করতে চাই। আল্লাহ বাঁচায়ে রাখলে বাউবি থেকে এসএসসি, এইচএসসি পাস করে নকশীকাঁথা নিয়ে কাজ করে একটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে একদিন আমি ভর্তি হব।”

সাজেদা বেগমের এই প্রচেষ্টায় অভিভূত উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ হুমায়ুন আখতার। তিনি বলেন, “সাজেদা বেগম একটি সাহসের নাম। একজন অনন্যা, অপরাজিতা। শিক্ষাবঞ্চিত নারীদের আদর্শ। এদেশে অসংখ্য নারী আছেন মেধাবী কিন্তু সামাজিক, পারিবারিক চাপ, কৈশরে বিয়ের কারণে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের অনুপ্রেরণা জোগাবেন সাজেদা বেগম।”

Next Article