TV9 Explained on Partygate Scandal: দাঁড়ি পড়তে পারে বরিসের রাজনৈতিক কেরিয়ারে, কী এই পার্টিগেট কেলেঙ্কারি?

TV9 Bangla Digital | Edited By: ঈপ্সা চ্যাটার্জী

Jun 11, 2023 | 5:19 AM

Boris Johnson: পার্টিগেট বিতর্ক নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হতেই জনপ্রিয়তাও কমতে থাকে বরিস জনসনের। কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক সাংসদ-নেতারা বরিস জনসনের ইস্তফার দাবি করেন। ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন বরিস জনসন।

TV9 Explained on Partygate Scandal: দাঁড়ি পড়তে পারে বরিসের রাজনৈতিক কেরিয়ারে, কী এই পার্টিগেট কেলেঙ্কারি?
অলঙ্করণ: শুভ্রনীল দে।

Follow Us

লন্ডন: খুইয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রীর পদ। এবার হাতছাড়া হল সাংসদ পদও। পার্টিগেট কেলেঙ্কারি(Partygate Scandal)-তে নাম জড়ানোয় রাজনৈতিক কেরিয়ারে প্রায় ইতি পড়তে চলেছে ব্রিটেনের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসনের (Boris Johnson)। প্রথমবার পার্টিগেট কেলেঙ্কারিতে নাম জড়ানোর পর থেকেই জনপ্রিয়তা কমতে শুরু করেছিল বরিস জনসনের। দলের অন্দরে ও বাইরেও চাপের মুখে পড়ে প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন বরিস। সেই সময় বিস্তর জলঘোলা হয়েছিল প্রধানমন্ত্রীর ইস্তফা ঘিরে। শুক্রবার বিকেলে সকলকে চমকে দিয়ে বরিস জনসন জানান, তিনি সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দিচ্ছেন। এবার প্রশ্নটা হল, কী এমন কেলেঙ্কারি করেছেন বরিস জনসন, যার কারণে তাঁকে একের পর এক গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে ইস্তফা দিতে হচ্ছে?

কেন ইস্তফা দিলেন বরিস জনসন-

করোনাকালে যখন গোটা বিশ্ব ঘরবন্দি, তখনই হুল্লোড়ে মেতে উঠেছিল ১০, ডাউনিং স্ট্রিট। যেখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা নিয়ে সতর্কতা জারি করা হচ্ছিল প্রতিদিন, সেখানেই বদ্ধ ঘরে ওয়াইনের ফোয়ারা ছুটেছিল। এক কথায় বলতে গেলে, লকডাউন চলাকালীন দেশের নাগরিকদের সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে বললেও নিজেই পার্টিতে মজেছিলেন ব্রিটেনের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন। প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ সামনে আসতেই তোলপাড় শুরু হয়। তদন্তে নামে কমন্স প্রিভিলেজ কমিটি। ওই কমিটিই শুক্রবার প্রাথমিক রিপোর্ট পেশ করে। আর তারপরই তড়িঘড়ি সাংসদ পদ থেকে ইস্তফা দিলেন বরিস জনসন।

পার্টিগেট কেলেঙ্কারি-

২০২০ সালে বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছিল মারণ সংক্রমণ করোনা। সংক্রমণ রুখতে বিশ্বের প্রায় সমস্ত দেশেই লকডাউন ঘোষণা করা হয়। জরুরি পরিষেবা ও অত্যাবশ্যকীয় কাজ ছাড়া বাড়ি থেকে বের হওয়ার উপরে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। এর ব্যতিক্রম ছিল না ব্রিটেনও। সেখানেও দফায় দফায় জারি হয়েছিল লকডাউন। সেই সময় থেকেই শুরু পার্টিগেট কেলেঙ্কারি। তবে গোটা ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসে এক বছর পর। ২০২১ সালে ডেইলি মিরর সংবাদপত্র একটি রিপোর্টে দাবি করা হয়, ২০২০ সালের ডিসেম্বরে লকডাউন চলাকালীন বিভিন্ন সরকারি দফতরে ক্রিসমাস পার্টি উদযাপন করা হয়েছিল। এর মধ্যে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন, ১০ ডাউনিং স্ট্রিটেও পার্টি হয়েছিল।

প্রাথমিকভাবে মনে করা হয়েছিল, লকডাউন চলাকালীন হয়তো দুই-তিনটি পার্টি হয়েছিল। কিন্তু সংবাদমাধ্যমগুলি নিজেরাই তদন্ত শুরু করলে জানা যায়, কমপক্ষে প্রায় ১৫টি বেআইনি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। পুলিশেও মামলা দায়ের করা হয়। প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন, তাঁর স্ত্রী ক্যারি,  তৎকালীন আইনমন্ত্রী ঋষি সুনক সহ মোট ৮৩ জনকে জরিমানা করা হয়।

‘দ্য গার্ডিয়ান’-এর প্রতিবেদনে দাবি করা হয়, লকডাউন চলাকালীন যে পার্টিগুলি হয়েছিল, তা ‘ভয়ঙ্কর’ ছিল। উত্তাল হই-হুল্লোড়, মদ্যপান করে অসুস্থ হয়ে পড়া, সাংসদ-মন্ত্রীদের মধ্যে মারপিট অবধি হয়েছিল। পুলিশ জরিমানা করতেই সকলে ক্ষমা চান এবং জরিমানার অঙ্ক মিটিয়ে দেন।

যেখানে সংক্রমণের ভয়ে সকলে ঘরবন্দি, সেই সময়ে প্রধানমন্ত্রীই পার্টি করছেন। এই নিয়ে জনরোষ তৈরি হতেই সাফাই গাইতে ময়দানে নামেন বরিস জনসন। তিনি দাবি করেন, ক্রিসমাস পার্টিতে যাবতীয় করোনাবিধি অনুসরণ করা হয়েছিল। ১০ ডাউনিং স্ট্রিটে কোনও পার্টির আয়োজনও করা হয়নি। কিন্তু ২০২২ সালে প্রকাশিত একটি রিপোর্টে বলা হয়, ২০২০ সালে প্রথম লকডাউন চলাকালীনই ১০ ডাউনিং স্ট্রিটের বাগানে পার্টি হয়েছিল। তৃতীয় লকডাউন চলাকালীন, ২০২১ সালে পার্টি করার জন্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের কাছে ক্ষমাও চান বরিস জনসন সহ কনজারভেটিভ পার্টির সদস্যরা।

পার্টিগেট বিতর্ক নিয়ে পুলিশি তদন্ত শুরু হতেই জনপ্রিয়তাও কমতে থাকে বরিস জনসনের। কনজারভেটিভ পার্টির একাধিক সাংসদ-নেতারা বরিস জনসনের ইস্তফার দাবি করেন। ২০২২ সালের ৭ জুলাই প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দেন বরিস জনসন। তাঁর ইস্তফার কয়েকদিন আগেই আইনমন্ত্রী পদ থেকে ইস্তফা দিয়েছিলেন ঋষি সুনকও।

কমন্স প্রিভিলেজ কমিটির রিপোর্ট ও বরিসের ইস্তফা-

ভারতীয় সংসদের লোকসভায় যেমন প্রিভিলেজ কমিটি থাকে, তেমনই ব্রিটেনের সংসদেও রয়েছে কমন্স প্রিভিলেজ কমিটি। সাত সদস্যের এই কমিটিতে চারজন বরিস জনসনের দল কনজারভেটিভ পার্টির সদস্য, দুইজন বিরোধী দল লেবার পার্টির সদস্য ও স্কটিশ ন্যাশনাল পার্টির একজন সদস্য রয়েছেন। ২০২২ সালের ২১ এপ্রিল হাউস অব কমন্স বরিস জনসনের বিরুদ্ধে পার্টিগেট কেলেঙ্কারি নিয়ে সংসদে বিভ্রান্তিমূলক বক্তব্য রাখার জন্য তদন্তের প্রস্তাবনা পাশ করে। চলতি বছরের মার্চ মাসে এই কমিটি অন্তর্বর্তী রিপোর্ট পেশ করে। শুক্রবার কমিটির মুখপাত্র জানান, আগামী ১২ জুন কমিটি পার্টিগেট কেলেঙ্কারির তদন্তের সম্পূর্ণ রিপোর্ট প্রকাশ করবে।

জল্পনা শোনা যায়, কমিটি হয়তো বরিস জনসনকে ১০ দিনেরও বেশি সময় সংসদ থেকে বরখাস্ত বা সাসপেন্ড করতে পারে, যার জেরে তিনি সাংসদ পদ খোয়াবেন। কমিটির বিবৃতির পরই শুক্রবার রাতে সাংসদ পদ থেকেও ইস্তফা দেন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন।

Next Article