Explained: কেন প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করতে বিল পাশ করল পাকিস্তান

TV9 Bangla Digital | Edited By: অঙ্কিতা পাল

Apr 03, 2023 | 5:31 PM

Pakistan: সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে 'বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তার' অভিযোগ তুলেছে শাহবাজ় সরকার। সেদেশের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব সংক্রান্ত বিল পাস হয়েছে সেনেটে।

Explained: কেন প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করতে বিল পাশ করল পাকিস্তান
পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্ট

Follow Us

ইসলামাবাদ: চরম আর্থিক দুর্দশার সম্মুখীন পাকিস্তান (Pakistan)। অর্থনৈতিক সঙ্কটের (Economic Crisis) জেরে সেখানে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তৈরি হয়েছে। এদিকে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার দায় সম্পূর্ণ দেশের সুপ্রিম কোর্টের উপর চাপিয়েছেন সেদেশের প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফ। এবার সেই থেকে সাংবিধানিক সঙ্কট দেখা গেল পাকিস্তানে। সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করা নিয়ে গত বৃহস্পতিবার বিল পাস করেছে পাকিস্তানের উচ্চ কক্ষ সেনেট। অর্থনৈতিক সঙ্কটের মধ্যেই পাকিস্তানের শাহবাজ় সরকার ও বিচারব্যবস্থার একাংশের মধ্যে দ্বন্দ্ব প্রকাশ্যে। এর মধ্যেই প্রথমে জাতীয় সংসদে গত বুধবার প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা খর্ব করা নিয়ে প্রস্তাব পেশ করা হয়। সুপ্রিম কোর্টের বিরুদ্ধে ‘বিচারবিভাগীয় সক্রিয়তার’ অভিযোগ তোলা হয়। প্রস্তাবে উল্লেখ করা হয়, “এই কক্ষ বিশ্বাস করে, রাজনৈতিক বিষয়ে বিচার বিভাগের অপ্রয়োজনীয় হস্তক্ষেপ রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার প্রধান কারণ।” নিম্নকক্ষের পর এই প্রস্তাব উচ্চকক্ষে বিল হিসেবে পাশও হয়ে যায়। রাষ্ট্রপতির সিলমোহর পাওয়ার অপেক্ষা।

তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী তথা পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফ (PTI)-এর সুপ্রিমো ইমরান খান এই বিলের সমালোচনা করেছেন। তিনি টুইটে লেখেন, “পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টকে আক্রমণ করার পাশাপাশি এর ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে এবং পাকিস্তানের জনগণ তা প্রতিহত করবে।” তবে এই সুপ্রিম কোর্ট আইন, ২০২৩ কী বলছে? এর উদ্দেশ্য কী? এই বিল পাশের ফলে কী হবে?

বিলে কী উল্লেখ করা হয়েছে?

এই বিলটিতে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ বিধানের উল্লেখ করা হয়েছে। কোন মামলা স্বতঃপ্রণোদিতভাবে গ্রহণ করা যেতে পারে তা শুধু প্রধান বিচারপতির পরিবর্তে তাঁর সঙ্গে আরও দু’জন বর্ষীয়ান বিচারপতির সমন্বয়ে গঠিত একটি কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। এই মামলাগুলির শুনানির জন্য বেঞ্চগুলিও শীর্ষ বিচারপতির পরিবর্তে কমিটি দ্বারা সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। যেসব মামলার ক্ষেত্রে সংবিধানের ব্যাখ্যা প্রয়োজন হবে সেগুলি পাঁচজনের কম বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি হবে না। আর এই জাতীয় মামলার ক্ষেত্রে গৃহীত সিদ্ধান্তের পরিপ্রেক্ষিতে আবেদন করা যাবে।

পাকিস্তানের সংবিধানের ১৮৪ (৩) ধারার অধীনে স্বতঃপ্রণোদিত মামলাগুলি গৃহীত হয়। সুপ্রিম কোর্ট যদি মনে করে যে কোনও মৌলিক অধিকার প্রয়োগের ক্ষেত্রে জনগণের গুরুত্বের প্রশ্ন জড়িত তবে সেই মামলা গ্রহণ করা হয়ে থাকে। এতদিন এর অধীনে বিষয়গুলো সরাসরি প্রধান বিচারপতির বিবেচনার ওপর নির্ভরশীল ছিল। তবে এখন সেখানে বেঞ্চ গঠনের বিষয়টি যুক্ত হবে।

আইনমন্ত্রী আজম নাজির তারার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেছেন, “অতীতে দেখা গিয়েছে যে হাসপাতালের বাইরে পার্কিংয়ের জায়গার অভাব, বৃষ্টির জলে রাস্তা ডুবে যাওয়া বা কোনও অভিযুক্তের কাছ থেকে বোতল উদ্ধারের মতো ছোটখাটো বিষয়ে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা গৃহীত হয়েছিল। তাই স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার জন্য একটি ব্যবস্থা গঠন করা এখন প্রয়োজন।”

এই বিল আনার কারণ:

সম্প্রতি পঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় নির্বাচন সংক্রান্ত একটি মামলায় সুপ্রিম কোর্টের দুই বিচারপতি ভিন্নমত পোষণ করেন। এবং এই মামলায় প্রধান বিচারপতির ক্ষমতা কেন্দ্রীভূতকরণের নিন্দা করেছিলেন। তবে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সমর্থক হিসেবে বিবেচিত প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়ালের সঙ্গে সরকারের টানাপোড়েন বেশ কিছুদিন ধরেই চলছিল। দুই প্রদেশের নির্বাচন নিয়ে মামলাকে কেন্দ্র করে সেই টানাপোড়েন আরেক মাত্রা নেয়।

প্রসঙ্গত, গত বছর এপ্রিলে প্রধানমন্ত্রীর গদি হারান পিটিআই চেয়ারম্যান ইমরান খান। তাঁর দাবি অন্যায্যভাবে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছে। তারপর থেকেই জাতীয় নির্বাচনের দাবি তুলেছেন ইমরান। আর জাতীয় নির্বাচন কমিশনের উপর চাপ সৃষ্টি করতে জানুয়ারি মাসেই পঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বিধানসভা ভেঙে দেন ইমরান। নিয়ম অনুযায়ী, বিধানসভা ভেঙে গেলে সেখানে ৯০ দিনের মধ্যে পুনরায় নির্বাচন সংঘটিত করতে হয়। আর সেদেশের নির্বাচনী নিয়ম অনুযায়ী, সেখানে কোনও প্রদেশের নির্বাচন ও জাতীয় নির্বাচন একসঙ্গে অনুষ্ঠিত হয়। ফলে পঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের সঙ্গে একদিকে জাতীয় নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে। আর দাবি পূরণ হবে ইমরানের।

তবে নির্বাচন কমিশনের তরফে এখনও পর্যন্ত কোনও দিনক্ষণ ঘোষণা করা হয়নি। এরপর রাষ্ট্রপতি তথা পিটিআই সদস্য আরিফ আলভি একতরফাভাবে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন দুটি প্রদেশে ৯ এপ্রিল নির্বাচন হবে। আর গত ২৩ ফেব্রুয়ারি প্রধান বিচারপতি বান্দিয়াল স্বতঃপ্রণোদিতভাবে এই মামলার শুনানি শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে এই মামলার জন্য নয় বিচারপতির একটি বেঞ্চ গঠন করা হয়েছিল। তবে দুই জন বিচারপতি স্বতঃপ্রণোদিত নোটিস নেওয়ার সিদ্ধান্তের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেন। দু’জন নিজেকে এই মামলা থেকে সরিয়ে নেন। তারপর শেষমেশ পাঁচ জন বিচারপতির বেঞ্চে শুনানি শুরু হয়। গত ১ মার্চ সুপ্রিম কোর্ট ৩-২ ভোটে নির্বাচন কমিশনকে পঞ্জাব ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় নির্বাচন সংঘটিত করার নির্দেশ দেয়। এই মামলায় বিচারপতি মনসুর আলি শাহ ও বিচারপতি জামাল খান মন্ডল প্রধান বিচারপতির সীমাহীন কর্তৃত্বের সমালোচনা করেন।

গত ৩ মার্চ নির্বাচন কমিশন জানিয়েছিল, পঞ্জাবে ৩০ এপ্রিল ভোট হবে। কিন্তু কয়েক সপ্তাহ পর নিজেদের অবস্থান পরিবর্তন করে বলা হয় দেশের আর্থিক ও নিরাপত্তা পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে ৮ অক্টোবরই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। তারপর সুপ্রিম কোর্টে এই নির্দেশের চ্যালেঞ্জ জানায় পিটিআই। সেই আবেদনের ভিত্তিতে শুনানি এখনও বাকি রয়েছে। এর মাঝেই এই বিল নিয়ে আসল শাহবাজ় সরকার।

এরপর কী হবে?

সুপ্রিম কোর্ট (প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রসিডিউর) আইন, ২০২৩ এখন রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠানো হবে। যদি তিনি ১০ দিনের মধ্যে তাঁর সম্মতি না দেন তবে তিনি সম্মতি দিয়ে দিয়েছেন বলে বিবেচনা করা হবে।

বিলটি নিয়ে মতামত বিভক্ত। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রধান বিচারপতিদের মাঝে মাঝে পক্ষপাতদুষ্ট ভূমিকা পালন করতে দেখা গেলে তাদের ক্ষমতা খর্ব করা খারাপ কিছু নয়, তবে যেভাবে বিলটি আনা হয়েছে সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। কেউ কেউ আশা করছেন যে সুপ্রিম কোর্ট আইনটি বাতিল করবে। এর ফলে সরকারের সঙ্গে তার টানাপোড়েন আরও খারাপ দিকে যাবে। বিলটি বাস্তবায়িত হলে, পাকিস্তানের বিভিন্ন পুরানো রাজনৈতিক মামলা পুনরায় চালু করা হতে পারে।

Next Article