Share and Mutual Fund Investments: শেয়ার বাজার এত চড়া আগে হয়নি, ইনভেস্টমেন্ট কি এখন তুলে নেওয়াই শ্রেয়?
All Time High Market: ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক এই মুহূর্তে সর্বকালের সর্বোচ্চ। তাহলে এটাই কি সব বিনিয়োগ তুলে নেওয়ার সেরা সুযোগ? নাকি বাজার আরও চড়বে? এখন বিনিয়োগ করলে রিটার্ন ভাল মিলবে নাকি ঝুঁকি বেশি হয়ে যাবে? কী বলছেন বিশেষজ্ঞরা?
যারা শেয়ার বাজার রোজ ফলো করেন তাঁরা জানেন ভারতের শেয়ার বাজারের সূচক এই মুহূর্তে সর্বকালের সর্বোচ্চ (All Time High)। এর কারণ কী? এক কথায় বলা যায়, এর কারণ বিদেশি বিনিয়োগ (Foreign Investments)। বিভিন্ন বিদেশি কোম্পানি গত কয়েক মাস ধরে ভারতের বাজারে বিনিয়োগ করছে। কিন্তু হঠাৎ কী এমন হল যে ভারতে বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে?
ভারতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ বাড়ার একটা বড় কারণ হল ভারতের বিপুল জনসংখ্যা ও এই জনসংখ্যার গড় বয়স অনেক কম। অর্থাৎ এই জনসংখ্যার একটা বিশাল অংশ শিক্ষিত ও কর্মক্ষম। ফলে এই শিক্ষিত যুবক বা যুবতীরা যেমন কাজ করার জন্য শ্রমিক বা অন্যান্য পদের জন্য দক্ষ তেমনই ক্রেতা হিসাবেও মন্দ নয়। ফলে ভারতে বিনিয়োগ করার দুটো সুবিধা রয়েছে। প্রথম শিক্ষিত ও দক্ষ যুবসমাজ। আর দ্বিতীয় ভারতের বিশাল জনসংখ্যা যারা যে কোনও পণ্য কিনতে পারবে। এছাড়াও বিভিন্ন সেক্টরে ভারতের পরিকাঠামো আগের তুলনায় অনেক উন্নত হয়েছে। রেল, সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থা থেকে বর্তমানের টেলিকমিউনিকেশন, সব ক্ষেত্রেই ভারত দ্রুত উন্নতি করছে।
এছাড়াও আরও একটা কারণও রয়েছে। গত কয়েক বছর ভারতে একটা রাজনৈতিক স্থিরতাও রয়েছে। এনডিএ সরকার আসার পর সেই রাজনৈতিক স্থিরতা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। যে কোনও দেশে রাজনৈতিক স্থিরতা না থাকলে সেই দেশে বিদেশি কোম্পানিরা কখনোই বিনিয়োগের আগ্রহ দেখায় না। তাছাড়া সাম্প্রতিককালে রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ ভারতের বাজারকে সেভাবে প্রভাবিত করতে পারেনি। আমেরিকা ও ইউরোপের বাজারে অর্থনৈতিক মন্দা আসায় ভারতের প্রতি বিদেশি বিনিয়োগকারীডের আস্থা বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগেও ২০০৮-এ গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা আসার পরও ভারতের বাজার খুব দ্রুত ঘুরে দাঁড়িয়েছিল। ফলে এই ঘটনা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মনে ভারতের বাজারের প্রতি একটা আস্থা তৈরি করেছে।
এত বিনিয়োগের কারণে ভারতের বাজার কি ওভার ভ্যালুড?
শেয়ার বাজারে নথিভুক্ত সংস্থাগুলির মোট বাজারি মূলধন ও জিডিপির অনুপাত দেখলে ভারতের বাজারের অবস্থা কিছুটা বোঝা যেতে পারে। এই অনুপাত বর্তমানে ৯৬ শতাংশ থেকে ৯৭ শতাংশের মধ্যে রয়েছে। আর এই অনুপাত ১০০ এর বেশি হয়ে গেলেই অর্থাৎ শেয়ার বাজারে লিস্টেড কোম্পানিগুলোর মোট বাজারি মূলধন ভারতের জিডিপির তুলনায় বেশি হয়ে গেলেই বাজার ওভারভ্যালুড বলে ধরে নেওয়া হয়।
বর্তমানে মিউচুয়াল ফান্ডগুলো নতুন করে একলপ্তে অনেকটা টাকা বিনিয়োগ নেওয়া বন্ধ করে দিচ্ছে, এর একটা অর্থ হতে পারে বাজার ধীরে ধীরে ওভারভ্যালুড হচ্ছে। কারণ মিউচুয়াল ফান্ড কোম্পানিগুলো সাধারণ বিনিয়োগকারীদের থেকে যত বেশি টাকা তুলতে পারে, তাদের লভ্যাংশ ততই বেশি হয়। কিন্তু তারাই যখন নতুন বিনিয়োগ নেওয়া বন্ধ করছে, তখন তো বুঝতে হবে, বাজারে কোন শেয়ারে তারা বিনিয়োগ করবে সেরকম ভাল কোনও শেয়ার খুঁজে পাচ্ছে না। টাটা মিউচুয়াল ফান্ড, তাদের কিছু ফান্ডে নতুন বিনিয়োগ নেওয়া বন্ধ করে দিয়েছে।
তাহলে এখন বিনিয়োগ তুলে নেওয়া উচিৎ নাকি বিনিয়োগ রেখে দেওয়া উচিৎ?
আমেরিকার একটি রিপোর্টে দেখা গিয়েছে, আমেরিকার বাজার গত ২০ বছরে ৬ থেকে ৬.৫০ শতাংশ রিটার্ন দিয়েছে। এবং এই ২০ বছরের মধ্যে সেরা ২০ দিনেও বাজারের রিটার্ন ছিল ৬ থেকে ৬.৫০ শতাংশ। ফলে কেউ যদি সেই ২০ দিনের মধ্যে নিজের বিনিয়োগ তুলে নিত তাহলে সে সমস্ত রিটার্নই মিস করত। এর থেকে আমরা একটা জিনিসই শিখি, যে কোনও প্রয়োজন না থাকলে বিনিয়োগ করা টাকা বাজার থেকে তুলে নেওয়া ঠিক না। ১০ বছর বা ২০ বছর ধরে বিনিয়োগ করব ঠিক করে বাজার হঠাৎ পড়ে যাবে ভেবে বিনিয়োগ করা টাকা তুলে নেওয়াটা কখনই ঠিক না। যদি সেই টাকার এখন বা আগামী দু-এক বছরে প্রয়োজন থাকে তাহলে বাজার ওভারভ্যালুড হলে তুলে নেওয়া যেতেই পারে। যদিও সেক্ষেত্রে টাকা যার প্রয়োজন তাকেই হিসাব করে দেখে নিতে হবে।
এরপর মার্কেট আরও উঠবে নাকি পড়বে?
এই প্রশ্নের উত্তর দেওয়া সত্যিই কারও দেওয়া সম্ভব নয়। তবে হ্যাঁ, মার্কেট যত ওভারভ্যালুড হবে, মার্কেটের পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর মার্কেট যত আন্ডারভ্যালুড হয় তার বৃদ্ধির সম্ভাবনা বেড়ে যায়। কিন্তু আপনি যদি লংটার্মের জন্য বিনিয়োগ করেন, সেক্ষেত্রে মার্কেট উঠল না পড়ল সেদিকে তাকিয়ে বিনিয়োগ ভাঙা উচিৎ নয়। তবে হ্যাঁ, মার্কেট ওভারভ্যালুড হলে নতুন করে আর বিনিয়োগ করা ঠিক না। আর সিপ (SIP) হলে যেমন প্রতি মাসে বিনিয়োগ করে চলেছেন তেমনই বিনিয়োগ করে যাওয়ার কথাই বলেন বিশেষজ্ঞরা।
বাজার ওভারভ্যালুড হলে কী করণীয়?
প্রথমত, প্যানিক করবেন না। দ্বিতীয়ত, আগামী এক বা দু বছরের মধ্যে টাকার প্রয়োজন না থাকলে বিনিয়োগ ভাঙবেন না। বা লংটার্মে বিনিয়োগ করবেন ভেবে থাকলেও বিনিয়োগ ভাঙবেন না। একসঙ্গে অনেক টাকা বিনিয়োগ করার কথা এই মুহূর্তে মাথা থেকে বের করে দেওয়াই শ্রেয়। তবে সিপ-এ বিনিয়োগ চালিয়ে যান।
তবে এখানে বলা বিনিয়োগ সম্পর্কিত তথ্য কোনও উপদেশ নয়। বা এর উপর ভিত্তি করেই আপনাকে ভবিষ্যতের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করতে হবে এমনটাও নয়। তবে এই তথ্য আপনাকে বিভিন্ন বিনিয়োগের ধারণা দেবে।
*যে কোনও ধরনের বিনিয়োগের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে বিনিয়োগের আগে বিনিয়োগ সংক্রান্ত সমস্ত নথি অবশ্যই ভালভাবে পড়ে নেবেন।