Congress Vs TMC: সিদ্দার শপথে নেই মমতা, বিরোধী জোটের রাশ হারানোর ভয়ে দূরত্ব বাড়াচ্ছেন তৃণমূল সুপ্রিমো?
Congress Vs TMC: আজ কর্নাটকে ছিল মুখ্যমন্ত্রী ও উপ-মুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে। আমন্ত্রণ পেয়েও সেই অনুষ্ঠানে যোগ দেনন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। পরিবর্তে লোকসভার উপ-নেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে এই অনুষ্ঠানে যোগ দিতে পাঠানো হয়।
বেঙ্গালুরু: সাম্প্রতিক অতীতে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে বিরোধ জাতীয় রাজনীতিতে প্রকাশ্যে এসেছে। একাধিক ইস্যুতে ‘একলা চলো’ নীতিতেই ভরসা রেখেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সংসদের অধিবেশন থেকে শুরু করে আদানি ও একাধিক ইস্যুতে বিজেপির বিরুদ্ধে ভিন্ন অবস্থান নিয়েছিল দুই রাজনৈতিক দল। সংসদের শেষ অধিবেশনে আদানি ইস্যুতে ভিন্ন ভিন্নভাবে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে দুই দল। তার আগে রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী নিয়ে মনোমালিন্য হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। এদিকে কর্নাটকে কংগ্রেসের জয়ের পর মমতা বন্দ্য়োপাধ্যায় শুভেচ্ছা জানালেও কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করেননি। আর আজ কর্নাটকের মুখ্যমন্ত্রী ও উপমুখ্যমন্ত্রী পদে শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠান। সেই অনুষ্ঠানে বিজেপি বিরোধী সকল সমমনোভাবাপন্ন দলগুলিকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিল কংগ্রেস। সেই তালিকায় ছিলেন তৃণমূল কংগ্রেস সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও। তবে তিনি নিজে এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন না বলে আগেই জানিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর পরিবর্তে তৃণমূল কংগ্রেসের হয়ে অনুষ্ঠানে যান তৃণমূলের লোকসভায় উপনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদার। আর তাতেই মনে করা হচ্ছে, কংগ্রেসের সঙ্গে দূরত্ব বজায় রাখতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস।
কর্নাটকে নিরঙ্কুশ সংখ্য়াগরিষ্ঠতা পেয়ে জয়ী হয়েছে কংগ্রেস। ফল ঘোষণার এক সপ্তাহ পর সেখানে অনুষ্ঠিত হল শপথগ্রহণ অনুষ্ঠান। আর এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন বিভিন্ন বিজেপি বিরোধী দলের রাজনৈতিক নেতা-নেত্রীরা। মঞ্চ আলো করে উপস্থিত ছিলেন জেডিইউ, এনসিপি নেতা নীতীশ কুমার ও শরদ পওয়ার সহ একাদিক বিজেপি বিরোধী দলের নেতা। তবে অনুষ্ঠানে এলেন না মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এই মঞ্চ থেকেই বিরোধী ঐক্যের বার্তা দিলেন কংগ্রেস সহ অন্যান্য দলের প্রতিনিধিরা। তবে সেই বার্তা প্রেরণ থেকে শত ক্রোশ দূরে রয়ে গেল তৃণমূল। এরপরই শুরু হল নতুন জল্পনা। তাহলে কি বিরোধী ঐক্য থেকে বাদ পড়বে তৃণমূল কংগ্রেস?
অতীতে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের বিরোধ:
রাষ্ট্রপতি ও উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী মনোনয়ন নিয়ে দুই দলের মধ্য়ে ফাটল চওড়া হয়। তারপর অনেক জল গড়িয়েছে। ফাটল চওড়া হয়েছে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের মধ্যে। রাজধানীতে বিভিন্ন ইস্য়ুতে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেস পৃথকভাবে বিজেপির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদে অংশ নিয়েছে। তারপর মেঘালয় বিধানসভা নির্বাচনের আগে সেখানে প্রচারে গিয়ে কংগ্রেসকে এক হাত নিয়েছে তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা। একইভাবে আক্রমণ করতে ছাড়েননি কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধীও। কংগ্রেস-তৃণমূল কংগ্রেস দ্বন্দ্ব যত প্রকট হয়েছে তত বিরোধী জোটে কংগ্রেস ও তৃণমূল কংগ্রেসের একসঙ্গে থাকার সম্ভাবনাও ফিকে হয়েছে। মাঝে কংগ্রেসকে বাদ দিয়ে বিজেপি বিরোধী শক্তি হিসেবে তৃতীয় ফ্রন্ট গঠনের সম্ভাবনাও দেখা গিয়েছিল।
তবে মোদী পদবি মানহানি মামলায় রাহুলের দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পর কিছুটা চিড়ে ভেজে। কংগ্রেসের পাশে থাকার বার্তা দিয়ে রাহুলের পক্ষে সওয়াল করেন মমতা-অভিষেক। এরপর কর্নাটকের ফলাফল ঘোষণা। বিপুল সংখ্যক আসন পেয়ে কর্নাটকে জয়ী হয় কংগ্রেস। বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বিজেপিকে প্রতিহত করার জন্য শুভেচ্ছা জানিয়েছিলেন ঠিকই। তবে কংগ্রেসের নাম উল্লেখ করেননি তাঁর প্রতিক্রিয়ায়। তারপর শপথ গ্রহণ অনুষ্ঠানে যোগদানের নিমন্ত্রণ পেয়েও নিজে না গিয়ে লোকসভায় তৃণমূলের উপনেতা কাকলি ঘোষ দস্তিদারকে পাঠালেন। তৃণমূলের এই পদক্ষেপ ঘিরে প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি বিরোধী জোটে নেতৃত্বের ভূমিকা তাঁর হাত থেকে বেরিয়ে যেতে পারে বলেই দূরত্ব বজায় রাখছেন মমতা? বাংলায় বিজেপির জয়রথ আটকে দিয়ে তৃতীয়বারের জন্য মুখ্যমন্ত্রী পদে আসীন হওয়ার পরই কেন্দ্র থেকে বিজেপিকে হঠাতে বিভিন্ন রাজ্যে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন তিনি। তবে রাজ্যের বাইরে খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি তিনি। গোয়া, ত্রিপুরা ও মেঘালয়ে পরপর হার আসে। আর চলতি বছরেই জাতীয় দলের তকমাও হারায় তৃণমূল। ফলে বিজেপি বিরোধী জোটে তৃণমূল সুপ্রিমোর ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। এদিকে এক কংগ্রেস নেতা বলেন, “২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসকে সমর্থন করবে বলে জানিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তবে এই মন্তব্যের পর তাঁর অনুষ্ঠানে যোগ না দেওয়াটা এক ধরনের অস্বস্তির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।” উল্লেখ্য, সম্প্রতি মমতা বলেছিলেন, “কংগ্রেস যেখানেই শক্তিশালী, তাদের লড়াই করতে দিন। আমরা তাদের সমর্থন দেব, এতে কোনও ভুল নেই। কিন্তু তাদের অন্যান্য রাজনৈতিক দলকেও সমর্থন করতে হবে।”