NABC 2023: বিদেশের মাটিতে বাংলার শিল্পীদের অপমানের প্রতিবাদে ফোরাম গঠনের পথে কলকাতা
NABC 2023: নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (NABC) ২০২৩ঘিরেই যত বিতর্ক। জানা যাচ্ছে, আমেরিকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হয়েছে বাঙালি শিল্পীদের। হেনস্থার শিকার হয়েছেন সংগীতশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী।
যত বিতর্ক বিদেশে বেঙ্গলি কনফারেন্স উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন (NABC) ২০২৩-কে কেন্দ্র করে। বহু বছর ধরেই এই বেঙ্গলি ফেস্টিভ্যালকে ঘিরে নানা অভিযোগ উঠেছে। তবে এই বছর সব সীমা অতিক্রম করে গেছে , এমনই মত বাংলার শিল্পী মহলে। এবার তাই সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে প্রতিবাদের পথে বাঙালি শিল্পী মহল। বিষয়টা ঠিক কি হয়েছিল? বিদেশের মাটির এই বার্ষিক সম্মেলনের টুকরো-টুকরো খবর সমাজ মাধ্যম সূত্রে ইতিমধ্যেই ছড়িয়ে পড়েছে মোবাইল স্ক্রিনে।
নর্থ আমেরিকান বেঙ্গলি কনফারেন্স (NABC) ২০২৩ঘিরেই যত বিতর্ক। জানা যাচ্ছে, আমেরিকায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গিয়ে চূড়ান্ত অপমানিত হতে হয়েছে বাঙালি শিল্পীদের। হেনস্থার শিকার হয়েছেন সংগীতশিল্পী জয়তী চক্রবর্তী, পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তী। মার্কিন মুলুক থেকে রাতে ফেসবুক লাইভে সেই অভিযোগের কথা জানিয়েছেন সঙ্গীত শিল্পী জয়তী। তার কিছুক্ষণ পরেই একটু রাতে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীও জানান, তাঁকে কতটা দুর্বিপাকে পড়তে হয়েছিল।
এর পর ছাই চাপা আগুন হঠাৎই দাবানলের চেহারা নিয়েছে। প্রত্যেক শিল্পীই যেমন এই ঘটনার নিন্দা করেছেন, তেমনই নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথাও বলেছেন। সঙ্গীত শিল্পী লোপামুদ্রা বলেছেন, “এটাই সঠিক সময় সঙ্ঘবদ্ধ হয়ে এর বিরুদ্ধে কথা বলার।” তিনিও একইভাবে বিদেশে গিয়ে হাস্যকর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছিলেন বলে অভিযোগ। সঙ্গীতশিল্পী পৌষালী বন্দ্য়োপাধ্য়া জানান, শিল্পীরা মানিয়ে নেন সমস্যা হলে। তবে পণ্ডিত অজয় চক্রবর্তীর মতো বাংলার গর্ব অপমান করলে ছেড়ে দেওয়া হবে না, হুঁশিয়ারি পৌষালীর। শিল্পী অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের কথায়, “খুব শীঘ্রই কিছু পরিকল্পনা করা হবে, বিদেশের মাটিতে অতিথি হিসেবে নিয়ে গিয়ে অপমান করলে, আর বিষয়টা লঘু করে দেখা হবে না।” এর পরই একটি খোলা চিঠি সমাজ মাধ্যমে দেখা যায়। তেজেন্দ্রনারায়ণ মজুমদার, বিক্রম ঘোষ, অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়, লোপামুদ্রা মিত্র, ইমন চক্রবর্তী, রূপম ইসলাম, দেবজ্যোতি মিশ্র, শ্রীজাত প্রমুখ এই চিঠি দেন। কি সেই চিঠি? রইল বয়ান:
“সুধী, উত্তর আমেরিকা বঙ্গ সম্মেলন’২৩, আটলান্টিক সিটিতে ঘটে যাওয়া কিছু অনভিপ্রেত ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এই প্রতিবাদপত্র। পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী, বিদ্বজ্জনের লাগাতার হেনস্থা এখন বঙ্গ সম্মেলনের অন্যতম আকর্ষণীয় এক অনুষ্ঠান। পূর্বের সম্মেলনগুলিতেও এমন উদাহরণ অসংখ্য। তবে এবারের সম্মেলন বোধহয় আগের সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছে। অব্যবস্থা, অসৌজন্য, অমার্জিত ব্যবহার, অসহযোগিতা শিল্পীদের আত্মসম্মানবোধে আঘাত করে চলেছে ক্রমাগত, ভদ্রতাবোধকে দুর্বলতা ভেবে একের পর এক অপমানসূচক ঘটনা সম্মেলন কর্তারা ঘটিয়েই চলেছেন। অতিথি শব্দটার সঙ্গে যে বিশ্বজনীন আতিথ্যের সংযোগ, তা তারা ভুলতে বসেছেন। এই পরিস্থিতিতে, বাংলার সব শিল্পী আজ সিএবি’র যে কোনও অনুষ্ঠান নিয়ে চূড়ান্ত আতঙ্কিত, অপমানিত। তাই একজোট হয়ে আজ তীব্র প্রতিবাদ জানাই সিএবি’র স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে। অপমানের আকস্মিকতায় আমরা মূক ও স্তম্ভিত। ভবিষ্যতের কর্মপন্থা কী হবে, তা অচিরেই প্রকাশ করব আমরা। ধিক্কার জানাই সংগঠকদের যারা এই রুচিহীন সম্মেলনের আয়োজন করেছেন। বঙ্গ সম্মেলনের জনপ্রিয়তা বিশিষ্ট স্বনামধন্য শিল্পীদের জন্য, অপদার্থ সংগঠকদের জন্য নয়, এ কথা যেন তারা বিস্মৃত না হন। সংস্কৃতি মঞ্চ আমাদের কাছে পবিত্র এক জানলা, তাকে নোংরা করার অধিকার আপনাদের কেউ দেয়নি। আমাদের শিল্পীজীবন আমাদের নিজস্ব, সেই আত্মসম্মানের জায়গায় কেউ হাত দিলে, সাবধান, গর্জে উঠবো।” শিল্পী মহল সূত্রে জানা যাচ্ছে, খুব শীঘ্রই একটি ফোরাম তৈরির উদ্যোগ নেওয়া হবে। উদ্দেশ্য, যাতে বিদেশের মাটিতে আগামী দিনে আর হেনস্থার সম্মুখীন না-হতে হয় পশ্চিমবঙ্গের শিল্পীদের।