Bengali Film Business: দুই বাংলায় ছবির আদান-প্রদান ছবির বাণিজ্য বিস্তারে নতুন দিশা দেখাবে আদৌ?
Cross Business in Bengali Film: পঞ্চম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উৎসবে বাংলা ভাষার ছবির ব্যবসা বৃদ্ধির ইঙ্গিত। ২৯ জুলাই থেকে কলকাতায় শুরু হচ্ছে এই উত্সব। ‘হাওয়া’ ও ‘সুড়ঙ্গ’-এর মতো ছবি কলকাতার হলে এবং ‘চেঙ্গিজ’, কাকাবাবু’ বাংলাদেশের হলে রিলিজ় করার ফলে কতটা প্রভাব পড়বে ব্যবসায়?
বাংলা সিনেমার বাজার কীভাবে বাড়ানো যায়, সেই নিয়ে বিস্তর আলাপ-আলোচনার পর নতুন-নতুন দিশা দেখা দিয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ ও প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশের ভাষা অভিন্ন হওয়ায় এবং এই দুইয়ের সংস্কৃতিগত মিল থাকায় দুই পারের বাঙালি একে-অপরের সিনেমার প্রতি দীর্ঘদিন ধরেই আকৃষ্ট। সেই সূত্রেই ভারত-বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের প্রচেষ্টা। ২৯ জুলাই থেকে কলকাতায় শুরু হচ্ছে পঞ্চম বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উত্সব। বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রকের উদ্যোগে ও কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশের ব্যবস্থাপনায় এই উত্সব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। চলচ্চিত্র উত্সবে দেখানো হবে ‘পরাণ’, ‘হাসিনা’, ‘এ ডটারস টেল’, ‘স্ফুলিঙ্গ’-এর মতো ২৩টি বাংলা ভাষার ছবি। চলচ্চিত্র উত্সবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী হাছান মাহমুদ, রাজ্যের শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু, বিশিষ্ট পরিচালক গৌতম ঘোষ। ছিলেন বাংলাদেশের অভিনেতা ফিরদৌস হাসান, নুসরত ফারিয়া, পূর্ণিমা প্রমুখ। ৩১ জুলাই পর্যন্ত নন্দন প্রেক্ষাগৃহে চলবে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উত্সব। এই চলচ্চিত্র উৎসব অনুষ্ঠিত হওয়ায় খুবই উচ্ছ্বসিত এপার বাংলার পরিচালক গৌতম ঘোষ। বহু বছর ধরেই দুই বাংলায় ছবি মুক্তির প্রচেষ্টা করার পক্ষে সওয়াল করছেন তিনি। সম্প্রতি ‘হাওয়া’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ কলকাতার হলে রিলিজ় করায় আশার আলো দেখছেন বিশিষ্ট এই পরিচালক। বাংলাদেশের প্রেক্ষাগৃহেও পশ্চিমবঙ্গে তৈরি আরও বেশি সংখ্যক বাংলা ছবি মুক্তি পাক, এমনই স্বপ্ন দেখেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন এই পরিচালক। শিক্ষা মন্ত্রী তথা বিশিষ্ট পরিচালক অভিনেতা ব্রাত্য বসু বলেন, “দুই দেশের সংস্কৃতি ও ভাষা যখন এক, তখন দুই দেশের মানুষের দুই বাংলার ছবি দেখার সুযোগ বাড়লে অবশ্যই ভাল হয়। আর এখন তো ইন্টারনেটের যুগে এখানকার কাজ বাংলাদেশের মানুষ যেমন দেখেন, তেমনই বাংলাদেশের দারুণ সব ছবি আর সিরিজও এপার বাংলার মানুষ দেখেন। আগামী দিনে দুই দেশে একে-অপরের ছবি রিলিজ় করানো হলে বাংলা ছবির বাজার অনেক বৃদ্ধি পাবে।” সেই উদ্দেশ্যেই বাংলাদেশের ‘হাওয়া’ ও ‘সুড়ঙ্গ’ এখন কলকাতার হলে রিলিজ় করে। অন্যদিকে, জিতের ‘চেঙ্গিজ’ পৌঁছে গিয়েছে প্রতিবেশী রাষ্ট্র বাংলাদেশে। বাংলা ভাষার সিনেমার বাজার কীভাবে বিস্তৃত করা যায়, সেই নিয়ে বহুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। ভারতবর্ষে বাংলা আঞ্চলিক ভাষা হলেও প্রতিবেশী রাষ্ট্রের কাছে বাংলাই একমাত্র ভাষা। তাই এই বাজারে ধরতে বহুদিন ধরেই আলাপ-আলোচনা চলছে বলে জানিয়েছেন পরিচালক প্রেমেন্দুবিকাশ চাকি। এবার সেই আশার আলো দেখা দিচ্ছে। সেই কারণেই এপার বাংলার ‘চেঙ্গিজ’, কাকাবাবু’ যেমন বাংলা দেশের দর্শক দেখতে পেয়েছেন, তেমনই ওপার বাংলার ‘হাওয়া’, ‘সুড়ঙ্গ’ এপার বাংলায় মুক্তির কারণে আফরান নিশো ছবির প্রচারে এসেছেন পশ্চিমবঙ্গে। তবে এতে কি সত্যিই বাংলা সিনেমার বাজার বাড়বে? আফরান নিশোর কথায়, “অবশ্যই বাংলা সিনেমার বাজার বাড়বে। সাংস্কৃতিক মিলই দুই বাংলায় ছবির বাজার বিস্তৃত হওয়ার কারণ।” অভিনেত্রী চূর্নী গঙ্গোপাধ্যায়ও মনে করেন, “একই সঙ্গে দুই বাংলায় ছবি মুক্তি পেলে দর্শকদের আরও বেশি করে হলমুখী করা সম্ভব। এটা ভাল পদক্ষেপ।” অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরীর কথায়, “শুধুই ব্যবসা নয়, সঙ্গে সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানও আরও বেড়ে যাবে।” বহুদিন ধরেই দুই দেশের মধ্যে আলোচনার সুফল এখন দেখা যাচ্ছে। তবে শুধুই কি লাভ হবে? যেখানে বিগ বাজেট মাল্টিস্টারার হিন্দি ছবি রিলিজ় করলে বাংলা ছবির শো কমে যায় মাল্টিপ্লেক্সে, সেখানে স্ক্রিন পেতে তো প্রতিযোগিতা আরও বেড়ে যাবে। ডিস্ট্রিবিউটর শতদীপ সাহা বলেছেন, “সুস্থ প্রতিযোগিতা থাকলে তা ভালই হবে। অন্য ভাষার ছবির সঙ্গেও প্রতিযোগিতা করতেই হয় বাংলা ছবিকে। তবে বাজারটাও বেড়ে যাবে দুই দেশের বাংলা ছবির—এটাই আনন্দের খবর।” দুই বাংলার অভিনেতারা বহুদিন ধরেই একে-অন্যের দেশে কাজ করে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। সেখানে দুই দেশে এই সিনেমা রিলিজ়ের আদান-প্রদান সুস্থ প্রতিযোগিতার পাশাপাশি অবশ্যই সিনেমার ব্যবসার উন্নতি করবে আশা করছে সিনেমার ইন্ডাস্ট্রির প্রত্যেকেই।