TV9 Bangla Explained on Delhi Flood: ১ মাসের বৃষ্টি ১ দিনে! তা-ও ডুবত না দিল্লি, যদি না…
TV9 Bangla Explained on Delhi Flood: ভারী বৃষ্টির জেরে বেড়েছে যমুনা নদীর জলস্তর। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনা নদী। বর্তমানে ২০৮.৫৩ মিলিমিটার দিয়ে যমুনা নদী বইছে। যা ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে।
নয়া দিল্লি: কেউ কোমর জলে খাবি খাচ্ছেন, কেউ আবার হাঁটু জল পেরিয়েই রুজি-রুটির খোঁজে বেরচ্ছেন। কোনটা রাস্তা, আর কোনটা নদী, তা বোঝা দায়! ভারী বৃষ্টিতে (Heavy Rain) ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে দিল্লিতে (Delhi)। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনা নদীর জল। রিং রোড থেকে শুরু করে লালকেল্লা, আইটিও থেকে সুপ্রিম কোর্ট, সর্বত্রই জমা জল পৌঁছে গিয়েছে। কমপক্ষে ১৫ জনের মৃত্যু হয়েছে বিগত কয়েক সপ্তাহে। একাধিক জায়গায়, যেখানে জল জমে রয়েছে বিগত কয়েকদিন ধরে, সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আপাতত রবিবার অবধি দিল্লির সমস্ত স্কুল, কলেজ ও জরুরি পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত নয় এমন সরকারি অফিস বন্ধ রাখা হয়েছে। জমা জলে দিল্লির বেহাল দশা নিয়ে ইতিমধ্যেই রাজনীতির কচকচানিও শুরু হয়ে গিয়েছে। শাসক দল আম আদমি পার্টি ও বিজেপির মধ্যে দোষারোপের পালা শুরু হয়েছে। কিন্তু যে প্রশ্নটা সবথেকে গুরুত্বপূর্ণ, তা হল হঠাৎ কেন বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হল দিল্লিতে? শুধুই কি ভারী বৃষ্টি নাকি হরিয়ানার বাঁধ থেকে ছাড়া জলে বানভাসি হল দিল্লি?
অল্প সময়ে অতিরিক্ত বৃষ্টি-
গোটা মাসে দিল্লিতে যে পরিমাণ বৃষ্টি হওয়ার কথা, তা একদিনেই ঝরে পড়েছে দিল্লিতে। গত ৯ জুলাই দিল্লিতে ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল, যা ১৯৮২ সালের পর এই প্রথম জুলাই মাসে এত পরিমাণ বৃষ্টিপাত হল। ৯ ও ১০ জুলাই-দুই দিন মিলিয়ে দিল্লিতে বৃষ্টি হয়েছিল ২৬০ মিলিমিটার, অথচ গোটা জুলাই মাসে দিল্লিতে মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ১৯৬ মিলিমিটার হওয়ার কথা। মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরীবাল জানিয়েছেন, ২৪ ঘণ্টায় ১০০ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে। এত পরিমাণ বৃষ্টি সামাল দেওয়ার জন্য যথাযথ ব্য়বস্থা নেই দিল্লিতে।
যমুনা নদীর জলস্তর-
ভারী বৃষ্টির জেরে বেড়েছে যমুনা নদীর জলস্তর। বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে যমুনা নদী। বর্তমানে ২০৮.৫৩ মিলিমিটার দিয়ে যমুনা নদী বইছে। যা ৪৫ বছরের রেকর্ড ভেঙেছে। জলস্ফীতির কারণে যমুনা নদীর আশেপাশের রাস্তাঘাট, বাড়ি-অফিস জলে ডুবে গিয়েছে।
হাথনিকুণ্ড ব্যারেজ-
শুধু দিল্লি নয়, ভারী বৃষ্টিতে ভাসছে পার্শ্ববর্তী হরিয়ানাও। বন্যা পরিস্থিতি এড়াতে হরিয়ানার হাথনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে। ফলে ক্রমশ বাড়ছে যমুনা নদীর জলস্তর। এই প্রথম যে হাথনিকুণ্ড থেকে জল ছাড়া হল, তা নয়। আগেও হরিয়ানার এই ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া হয়েছে, কিন্তু এবারে হাথনিকুণ্ড ব্যারেজ থেকে জল দিল্লিতে পৌঁছতে বিগত কয়েক বছরের তুলনায় কম সময় লেগেছে। ফলে হঠাৎ নদী ফুলে ফেঁপে উঠে আশেপাশের এলাকা প্লাবিত করেছে।
জমি জবরদখল-
কেন হাথনিকুণ্ড থেকে দ্রুত দিল্লিতে জল পৌঁছেছে, তার কারণও ইতিমধ্যেই খুঁজে বের করেছেন বিশেষজ্ঞরা। দ্রুতগতিতে দিল্লিতে জল পৌঁছনোর পিছনে প্রধান কারণ হিসাবে জমি জবরদখল ও পলি জমাকেই দায়ী করা হয়েছে। আগে যমুনা নদী তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি চওড়া হওয়ায় জল বেশি প্রবাহিত হত। কিন্তু পলি জমায় ও নদীর আশেপাশের জমি জবরদখল করে নেওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই প্লাবিত হয়েছে নদীর দুই পাশের এলাকাগুলি।
পলিস্তর বৃদ্ধি-
দিল্লি জলমগ্ন হওয়ার আরও একটি বড় কারণ হল নদীতে পলিস্তর বৃদ্ধি। যমুনার দুই পাড় থেকে আবর্জনা ফেলার কারণে নদীর পলিস্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। একইসঙ্গে নদীর গতিপথও অবরুদ্ধ হয়েছে একাধিত ব্রিজ তৈরি করার জন্য। ওয়াজিরাবাদ থেকে ওখলা অবধি ২২ কিলোমিটার অঞ্চলে ২০টিরও বেশি ব্রিজ তৈরি করা হয়েছে। ফলে ব্রিজের স্তম্ভগুলোর আশেপাশে পলি জমতে শুরু করেছে এবং মাঝনদীতেই বালুচর তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি দিল্লির নিকাশি ব্যবস্থারও ভয়ঙ্কর হাল। সব মিলিয়ে দিল্লি থেকে জল বেরনোর আর কোনও রাস্তা নেই। ফলে জল জমতে জমতে কোমর অবধি পৌঁছেছে। এই জল যন্ত্রণা থেকে মুক্তি কবে, তাও কেউ বলতে পারছেন না। আজ, শনিবার নতুন করে ভারী বৃষ্টির পূর্বাভাসও দিয়েছে মৌসম ভবন। ফলে দিল্লির পরিস্থিতি আরও কঠিন হতে পারে।