TV9 Explained: হাতে ৩ মাস সময়, কীভাবে সাংসদ পদ বাঁচাবেন ‘দোষী সাব্যস্ত’ রাহুল গান্ধী?
রাহুল গান্ধীর কি সাংসদপদ খারিজ হতে পারে? বিশ্লেষণে টিভি৯ বাংলা।
নয়া দিল্লি: মোদী পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের মামলায় ‘দোষী’ সাব্যস্ত হয়েছেন ওয়ানাড়ের সাংসদ রাহুল গান্ধী (Rahul Gandhi)। তাঁর দু-বছরের কারাদণ্ডও ঘোষণা করেছে সুরাট আদালত। এবার তাঁর সাংসদ (MP) পদের কি হবে? আদৌ কি তাঁর সাংসদ পদ থাকবে? নাকি স্পিকার তাঁর সাংসদ পদ খারিজ করবেন? এমনই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। যদিও এই বিষয়ে সিদ্ধান্তটা আইনত বিশেষজ্ঞদের উপরই ছেড়ে দিচ্ছেন লোকসভার স্পিকার ওম বিড়লা (Om Birla)।
স্পিকারের অফিস সূত্রে খবর, আগে রাহুল গান্ধীর (Rahul Gandhi) সাংসদ পদ খারিজের ব্যাপারে লিখিত অভিযোগ স্পিকারের অফিসে আসুক, তারপরই এব্যাপারে পদক্ষেপ করা হবে। স্পিকারের তরফে আরও স্পষ্টভাবে জানানো হয়, যদি কেউ রাহুল গান্ধীর সাংসদ পদ খারিজের ব্যাপারে অভিযোগপত্র স্পিকারের টেবিলে জমা দেন, তারপর আইনত বিশেষজ্ঞরা সেটি খতিয়ে দেখবেন এবং তাঁরাই এই বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।
রাহুল গান্ধীর কি সাংসদপদ খারিজ হতে পারে? আইনজ্ঞদের মতে, কোনও সাংসদের সাংসদ পদ দুটি কারণে খারিজ হতে পারে। প্রথমত,যদি ১৯৫১ সালের জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ৮(১) ধারায় দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে কয়েকটি নির্দিষ্ট অপরাধ রয়েছে, যেমন দুটি গোষ্ঠীর মধ্যে শত্রুতা প্রচার করা, ঘুষ দেওয়া এবং নির্বাচনে প্রভাব খাটানো। তবে মানহানির বিষয়টি এই তালিকার মধ্যে পড়ে না।
দ্বিতীয়ত, সাংসদ যদি অন্য কোনও অপরাধের জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তাঁর দু-বছর বা তার বেশি সময়ের জন্য সাজাপ্রাপ্ত হন। RPA-এর ধারা ৮(৩) ধারা অনুযায়ী, একজন সাংসদ দোষী সাব্যস্ত হলে এবং কারাদণ্ডের মেয়াদ দু-বছরের কম না হলে তাঁকে সাংসদ হিসাবে ‘অযোগ্য’ ঘোষণা করা যেতে পারে।
সাংসদপদ খারিজের বিরুদ্ধে কী ভাবে আবেদন করা যায়? ৮(৪)-এর ধারা অনুযায়ী, দোষী সাব্যস্ত হওয়ার তারিখ থেকে “তিন মাস অতিবাহিত হওয়ার পর” সাংসদ পদ খারিজ করা যায়।
ফলে আইন অনুযায়ী, সাংসদ পদ ধরে রাখার জন্য রাহুল গান্ধীর হাতে এখনও ৩ মাস সময় রয়েছে। এই সময়ের মধ্যে তিনি নিম্ন আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আবেদন জানাতে পারেন। হাইকোর্ট তাঁর পক্ষে রায় দিলে সাংসদ পদ নিয়ে আর কোনও সমস্যা থাকবে না রাহুলের। কেননা যদি নিম্ন আদালতের তরফে অপরাধী সাব্যস্ত করার রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আবেদন জানানো হয়। তাহলে প্রাথমিকভাবে সাংসদপদ খারিজের উপর স্থগিতাদেশ দেওয়ার আইন রয়েছে। এপ্রসঙ্গে ২০১৩ সালের লিলি থমাস ভার্সেস ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়া-র অর্ডারটির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। সেই অর্ডার এখন রাহুল গান্ধীর উপর প্রযোজ্য। তবে কেবল হাইকোর্টে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার রায়ের বিরুদ্ধে আবেদন করলে চলবে না, ৩৮৯ সিআরপিসি ধারা অনুযায়ী বর্তমান সাজা এবং দোষী সাব্যস্ত ঘোষণার উপর স্থগিতাদেশ আনাতে হবে। যদি সেই স্থগিতাদেশ না আসে তাহলে সাংসদ পদ খারিজ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। সহজ কথায় বলতে গেলে, রাহুলের ক্ষণিকের জন্য সংসদ পদ বাতিল হচ্ছে না। তবে তাঁর মাথায় খাঁড়া ঝুলছে। বলা যায়, পুরো বিষয়টি এখন নির্ভর করছে হাইকোর্টের উপর।
উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনের আগে মোদী পদবি নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করেছিলেন কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী। কর্নাটকের কোলারে একটি জনসভা চলাকালীন রাহুল গান্ধী বলেছিলেন, “সমস্ত চোরেদের নামেই কেন মোদী রয়েছে? সে নীরব মোদীই হোক, বা ললিত মোদী কিংবা নরেন্দ্র মোদী?” তাঁর এই মন্তব্যের প্রেক্ষিতেই গুজরাটের সুরাটের বিজেপি বিধায়ক তথা প্রাক্তন মন্ত্রী পুর্ণেশ মোদী রাহুল গান্ধীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করেন। অভিযোগ করা হয়েছিল, রাহুল গান্ধী এই বিতর্কিত মন্তব্য করে গোটা মোদী সম্প্রদায়কেই অপমান করেছেন। সেই মামলাতেই এদিন রাহুল গান্ধীকে দোষী সাব্যস্ত করেছে গুজরাটের সুরাট আদালত। এমনকি ওয়ানাড়ের সাংসদকে দু-বছরের কারাদণ্ডও দিয়েছে আদালত। যদিও কংগ্রেস নেতা তথা আইনজীবী বাবু মাংগুকিয়া জানান, ইতিমধ্যে রাহুল গান্ধীর জামিন মঞ্জুর হয়েছে এবং তাঁর হাইকোর্টে আবেদন জানানোর জন্য নিম্ন আদালতের রায়ের উপর ৩০ দিনের স্থগিতাদেশ দিয়েছেন সুরাট আদালতের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এইচ.এইচ ভার্মা।