TV9 Explained: মহার্ঘ ভাতা কী? কেন দেওয়া হয়? DA-তে ‘অরুচি’ কেন রাজ্যের? জানুন DA-র DNA

Dearness Allowance: কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ-র হারে বিস্তর ফারাক রয়েছে। কারণ কেন্দ্র যেখানে সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ মেনে মহার্ঘ ভাতা দেয়, সেখানেই রাজ্য সরকার ষষ্ঠ পে কমিশনের হারে ডিএ দেয়।

TV9 Explained: মহার্ঘ ভাতা কী? কেন দেওয়া হয়? DA-তে ‘অরুচি’ কেন রাজ্যের? জানুন DA-র DNA
অলঙ্করণ: অভিজিৎ বিশ্বাস
Follow Us:
| Updated on: Mar 12, 2023 | 11:06 AM

বকেয়া ডিএ (DA) মেটাতেই হবে, এই দাবিতেই আজ ধর্মঘটের ডাক দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মীদের সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ। রাজ্যজুড়েই এই ধর্মঘটের প্রভাব পড়েছে। শিক্ষকদের কর্মবিরতির কারণে একাধিক সরকারি স্কুলে পঠনপাঠনে প্রভাব পড়েছে। অন্যদিকে, শহর কলকাতা থেকে জেলা, সমস্ত জায়গাতেই ডিএ ধর্মঘট নিয়ে অশান্তি রুখতে কড়া নজরদারি চালাচ্ছে পুলিশ। সরকারের তরফে আগেই জানানো হয়েছিল, ধর্মঘটের সমর্থন করে কাজে অনুপস্থিত থাকলে কর্মজীবনে ছেদ পড়বে। এবার প্রশ্নটা উঠছে, কেন ডিএ নিয়ে এই বিক্ষোভ-ধর্মঘট? সরকারি কর্মীদের কী দাবি, রাজ্য সরকারই বা কী বলছে ডিএ নিয়ে? কেন্দ্রীয় সরকার ও বাকি রাজ্যের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গের ডিএ-র ফারাকই বা কতটা?

ডিএ বা মহার্ঘ ভাতা কী?

যে ডিএ-র দাবি নিয়ে এত বিক্ষোভ, ধর্মঘট, তা আসলে কী, তা প্রথমে জেনে নেওয়া দরকার। মহার্ঘ ভাতা বা ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স হল মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিতে সরকারের তরফে যে বেতনের উপরে বর্ধিত ভাতা দেওয়া হয়, তাকেই মহার্ঘ ভাতা বা ডিএ বলে। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের ডিএ আলাদা হয়। লিখিত কোনও নিয়ম না থাকলেও মূলত কেন্দ্রের ধার্য করা ডিএ অনুসরণ করেই রাজ্যের ডিএ ঘোষণা করা হয়।

ডিএ বা মহার্ঘ ভাতার সূচনা হয়েছিল বহু যুগ আগে থেকে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় থেকে বর্ধিত ভাতা দেওয়া হত, তবে তা খাদ্যের ভাতা ছিল। এরপর স্বাধীনতার আগের বছর থেকে কর্মীদের জন্য এই বর্ধিত ভাতার ঘোষণা করা হয়। প্রতি বছর মূলত দু’বার এই বর্ধিত ভাতা দেওয়া হয়, জানুয়ারি থেকে জুন মাসে এবং জুলাই থেকে ডিসেম্বর মাসের জন্য।

পে কমিশন 

সরকারি কর্মীদের বেতনকাঠামো কী হবে এবং পদোন্নতির পর বর্ধিত বেতন কত হবে, এই সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেয় পে কমিশন (Pay Commission)। ১৯৪৬ সালে প্রথম পে কমিশন গঠন করা হয় এবং ১৯৪৭ সালের মে মাসে কমিশন প্রথমবার তাদের সুপারিশ জমা দেয়। নির্দিষ্ট কোনও নিয়ম না থাকলেও প্রতি ১০ থেকে ১২ বছর অন্তর নতুন পে কমিশন গঠন করা হয়। ২০১৬ সালে শেষ পে কমিশন গঠন হয়। বর্তমানে সেই সপ্তম পে কমিশন মেনেই কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ দেওয়া হয়।

কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীরা কত শতাংশ ডিএ পান?

২০২০ সালের জানুয়ারি মাস থেকেই করোনা মহামারি ও লকডাউনের কারণে কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের ডিএ স্থগিত রাখা হয়েছিল। সেই সময়ে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মীদের ডিএ-র হার ছিল ১৭ শতাংশ। পরে ২০২১ সালের জুলাই মাসে কেন্দ্রের তরফে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করা হয়। দুই বছরের বকেয়া ডিএ-র হার মিলিয়ে একলাফে বর্ধিত ডিএ বেড়ে দাঁড়ায় ২৮ শতাংশে।

রাজ্য় সরকারের কর্মীরা কত শতাংশ হারে ডিএ পান?

কেন্দ্রের সঙ্গে রাজ্য সরকারের কর্মীদের ডিএ-র হারে বিস্তর ফারাক রয়েছে। কারণ কেন্দ্র যেখানে সপ্তম পে কমিশনের সুপারিশ মেনে মহার্ঘ ভাতা দেয়, সেখানেই রাজ্য সরকার ষষ্ঠ পে কমিশনের হারে ডিএ দেয়। রাজ্য সরকারের কর্মীদের দাবি, এই বৈষম্য মেটাতে হবে। কেন্দ্রের হারেই ডিএ দিতে হবে। কিন্তু রাজ্য সরকার এই দাবি মানতে নারাজ। হিসাব মতো, রাজ্য সরকারের কর্মীদের ৩৯ শতাংশ হারে ডিএ পাওয়ার কথা। তবে রাজ্য সরকারি কর্মীরা ডিএ পেতেন ৩ শতাংশ হারে। চলতি বছরের বাজেটে রাজ্য সরকারের তরফে ৩ শতাংশ ডিএ-র হার বাড়ানোর কথা ঘোষণা করা হয়। অর্থাৎ বর্তমানে সরকারি কর্মীরা ৬ শতাংশ হারে ডিএ পাবেন। কিন্তু সরকারি কর্মীরা বকেয়া ৩৩ শতাংশ ডিএ-র দাবিতে অনড়।

সরকারি কর্মীরা কত টাকা ডিএ পান?

রাজ্য সরকারের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী বা  গ্রুপ ডি-র কর্মীরা বর্তমানে ৩ শতাংশ ডিএ পান, তবে টাকার হিসাবে তিনি বেতনের উপরে অতিরিক্ত ৬০০ টাকা পাবেন। ধরা যাক, গ্রুপ-ডির কর্মীর বেতন ১৮ হাজার টাকা। ৩ শতাংশ হারে ডিএ হলে, তার বেতন ৫৪০ টাকা বাড়বে। ৬ শতাংশ হারে যদি রাজ্য সরকার ডিএ দেয়, তবে তার বেতনের উপরে অতিরিক্ত ১০৮০ টাকা পাবেন।

গ্রুপ সি-র কর্মীদের ন্য়ূনতম বেতন ২২ হাজার ৭০০ টাকা হয়। যদি ৬ শতাংশ হারে ডিএ পান, তবে বেতনের উপরে অতিরিক্ত ১৩৬২ টাকা পাবেন।

যদি রাজ্য বকেয়া হারেই ডিএ দিত, তবে কত টাকা বেতন পেতেন সরকারি কর্মীরা?

রাজ্যের সরকারি কর্মীদের দাবি, ৩৯ শতাংশ হারে রাজ্যের ডিএ দেওয়া উচিত। যদি সত্যিই রাজ্য এই হারে ডিএ দিত, তবে গ্রুপ-ডি কর্মীর বেতনের উপরে ডিএ হত ৭ হাজার ২০ টাকা। অর্থাৎ মোট তারা ২৫ হাজার ২০ টাকা বেতন পেতেন।

গ্রুপ-সি কর্মীদের বকেয়া হারে ডিএ দিলে, সে ক্ষেত্রে বেতনের উপরে অতিরিক্ত ৮ হাজার ৮৫৩ টাকা পাওয়া যেত। সেক্ষেত্রে বেতন বেড়ে দাঁড়াত ৩১ হাজার ৫৫৩ টাকা। 

কোন রাজ্যে কত শতাংশ ডিএ দেওয়া হয়?

২০২০ সালের ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, কেরলে সরকারি কর্মচারীরা ৩৬ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের ১ জুলাইয়ের হিসাব অনুযায়ী, তামিলনাড়ুর সরকারি কর্মচারীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের ১ অগস্টের হিসাব অনুযায়ী, মধ্য প্রদেশের সরকারি কর্মচারীরা ৩৪ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২১ সালের হিসাব অনুযায়ী, উত্তর প্রদেশের সরকারি কর্মীরা ৩১ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, মহারাষ্ট্রের সরকারি কর্মচারীরা ৩১ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের অগস্ট মাসের হিসাব অনুযায়ী, ছত্তীসগঢ়ের সরকারি কর্মচারীরা ২৮ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, কর্নাটকের সরকারি কর্মচারীরা ২৭.২৫ শতাংশ হারে ডিএ পান।

২০২২ সালের জানুয়ারি মাসের হিসাব অনুযায়ী, অন্ধ্রপ্রদেশের সরকারি কর্মচারীরা ৩৮.৭৭৬ শতাংশ হারে ডিএ পান।