Weather Forecast: নাছোড় বৃষ্টিতে নিদ্রাহীন কুলু-মানালি, কলকাতার ঘুম কাড়ল জুলাইয়ের উষ্ণতম রাত
Heavy Rain: ১৪ জুলাইয়ের আগে ভাল বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে। ভারী বৃষ্টি তো দূর, সব জায়গায় হালকা-মাঝারি বৃষ্টি হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে চাষির চিন্তাও কমবে না, কমবে না ভ্যাপসা গরম।
কলকাতা: খামখেয়ালিপনা বললেও কি সবটা বলা হয়? বেনজির বৃষ্টিতে (Rainfall) ভাসছে দিল্লি-চণ্ডীগঢ়। নাছোড় বর্ষায় মহাদুর্যোগ হিমাচল প্রদেশে (Himachal Pradesh)। ফুঁসছে বিপাশা, বৃষ্টি-ধসে নিদ্রাহীন বাঙালির প্রিয় কুলু-মানালি। বৃষ্টি বেড়েছে উত্তরবঙ্গেও। আগামিকাল, ভোট গণনার দিন ৫ জেলায় জারি হয়েছে লাল-কমলা সতর্কতা। যেখানে বৃষ্টি, সেখানে অবিরাম ধারা! যেখানে নেই, সেখানে একেবারেই নিখোঁজ! বাড়তি বিপদ, ভ্যাপসা গরম। গুমোট রাত। গত মাসে জুনের উষ্ণতম রাত কাটিয়েছিল কলকাতা। গত রাতে জুলাইয়ের উষ্ণতম রাতের সাক্ষীও হয়ে গেল মহানগর। আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াস। স্বাভাবিকের চেয়ে তিন ডিগ্রি বেশি!
উত্তর ভারতে চোখ রাখা যাক। পশ্চিমী ঝঞ্ঝা, রাজস্থানের নিম্নচাপ, সক্রিয় মৌসুমি অক্ষরেখার ত্রিফলায় একটানা বৃষ্টি। দিল্লিতে ২৪ ঘণ্টায় ১৫৩ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। ১৯৮২ সালের পর জুলাই মাসে একদিনে এত বৃষ্টি এই প্রথম। ঘটনা হল, পরের ২৪ ঘণ্টাতেও আবার সেঞ্চুরি বৃষ্টির। সফদরজংয়ে বৃষ্টির পরিমাণ ১০৭ মিলিমিটার। মানে দু’দিনে ২৬০ মিলিমিটার বৃষ্টি। অথচ, গোটা জুলাই মাসে রাজধানীতে বৃষ্টি হওয়ার কথা ১৯৬ মিলিমিটার। বেনজির বৃষ্টি চণ্ডীগঢ়েও। ২৪ ঘণ্টায় বৃষ্টির পরিমাণ ৩২২ মিলিমিটার। গোটা জুলাইয়ে চণ্ডীগঢ়ে বৃষ্টি হওয়ার কথা ২৭৬ মিলিমিটার। মানালিতেও একদিনে ঝরেছে ১৩১ মিলিমিটার বৃষ্টি। নাঙ্গাল বাঁধ এলাকায় বৃষ্টি হয়েছে ২৮২ মিলিমিটার। জম্মু-কাশ্মীরের কাঠুয়ায় একদিনে ঝরেছে ২৯৬ মিলিমিটার। মোদ্দা কথা, অনেক জায়গাতেই গোটা মাসের বৃষ্টি, কোথাও তারও বেশি বৃষ্টি একদিনে ঢেলে দিয়েছে প্রকৃতি। অল্প সময়ে বেশি বৃষ্টি! তারই ছাপ পড়েছে নদীতে, রাস্তায়। দেশলাই বাক্সের মতো গাড়ি ভাসছে নদীতে। মুহুর্মুহু ধস নামছে, নামছে কাদার স্রোত। হাইওয়ে পর্যন্ত বন্ধ।
এই ছবি কি এ বার উত্তরবঙ্গেও দেখতে হবে?
সিকিম-সহ উত্তরবঙ্গে এ পর্যন্ত ২০ শতাংশ বেশি বৃষ্টি হয়েছে। মাটির জলধারণ ক্ষমতা আর নেই বললেই চলে। নদী-নালা টইটম্বুর। এই অবস্থায় নতুন করে প্রবল বৃষ্টি শুরু। গণনার দিন আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, জলপাইগুড়ি, এই তিন জেলায় লাল সতর্কতা। একদিনে ২০০ মিলিমিটারেরও বেশি বৃষ্টি হতে পারে। অতি ভারী বৃষ্টির কমলা সতর্কতা দার্জিলিং, কালিম্পংয়ে। ফের ধস নামার আশঙ্কা। পাহাড়ি নদীতে হড়পা বানও নামতে পারে। কারণ, যোগ হবে সিকিম, ভুটান পাহাড়ের নদীর জলও। ১৩ জুলাই পর্যন্ত উত্তরে জারি কমলা সতর্কতা। তার আগে পরিস্থিতির উন্নতি হওয়ার সম্ভাবনা কম।
আবার ১৪ জুলাইয়ের আগে ভাল বৃষ্টির সম্ভাবনা নেই দক্ষিণবঙ্গে। ভারী বৃষ্টি তো দূর, সব জায়গায় হালকা-মাঝারি বৃষ্টি হবে কিনা, তাও স্পষ্ট নয়। বিক্ষিপ্ত বৃষ্টিতে চাষির চিন্তাও কমবে না, কমবে না ভ্যাপসা গরম। গুমোট গরমে দক্ষিণের বাসিন্দাদের এমনিতেই নাজেহাল দশা। উদাহরণ হিসেবে কলকাতার কথা বলা যেতে পারে। রবিবার আলিপুরের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৪.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কিন্তু রাতের তাপমাত্রা ৩০ ডিগ্রি সেলসিয়াসেই দাঁড়িয়ে যায়, আর কমতে পারেনি। তথ্য ঘেঁটে দেখা যাচ্ছে, ২০০২ সালের ১০ জুলাই কলকাতার সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয়েছিল ৩০ ডিগ্রি। এটাই জুলাইয়ে উষ্ণতম রাতের সর্বকালীন রেকর্ড। সে অর্থে, ২১ বছর পর যুগ্ম ভাবে উষ্ণতম রাতযাপন মহানগরের।
চলতি মরসুমে জুন মাসেই একাধিক গুমোট রাত কাটিয়েছে কলকাতা। ৮ জুন আলিপুরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড হয় ৩১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। জুন-রাতে বেনজির গরম। আবার ১৬ জুন একই উষ্ণতম রাত ফিরে আসে কলকাতায়। সবমিলিয়ে অন্তত ৬ রাত আলিপুরের তাপমাত্রা ছিল ৩০ ডিগ্রির উপরে। জুলাইয়ের শুরুতে বেশ কয়েকদিন ২৯ ডিগ্রির ঘরে ছিল পারদ। এ বার তা তিরিশের ঘরেও ঢুকে পড়ল। মৌসম ভবনের পূর্বাঞ্চলীয় প্রধান সঞ্জীব বন্দ্যোপাধ্যায় বলছেন, ”নিম্নচাপ অক্ষরেখার জন্য বঙ্গোপসাগর থেকে বিপুল পরিমাণ জলীয় বাষ্প উত্তরবঙ্গে যাচ্ছে। পাহাড়ে ধাক্কা খেয়ে প্রবল বৃষ্টি নামাচ্ছে সেই মেঘ। অথচ এই মেঘ যাচ্ছে কলকাতা, দক্ষিণবঙ্গের উপর দিয়েই। কিন্তু এখানে বৃষ্টি নামাতে পারছে না। উল্টে রাতের আকাশে মেঘ থাকায় দিনে ঢোকা তাপ বেরোতে পারছে না। তাই রাতে তাপমাত্রাও কমতে পারছে না।”
দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টি বাড়ার জন্য দরকার অনুঘটক। অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে নিম্নচাপ। আপাতত তার কোনও ইঙ্গিতই দেখতে পাচ্ছেন না আবহবিদরা। ফল? উত্তরবঙ্গে উদ্বৃত্ত বৃষ্টি, দেশেও ২% বেশি বৃষ্টি আর দক্ষিণবঙ্গে ৩৪% ঘাটতি। এই বৈষম্য এখনই মোছার নয়।