Article 355 and 356: অনুচ্ছেদ ৩৫৬ ও ৩৫৫ কী? সংবিধানের এই দুই ধারার মধ্যে পার্থক্যই বা কোথায়?
What is article 355 and 356: অনেকেরই ধারণা, অনুচ্ছেদ ৩৫৬-র বিকল্প বোধহয় অনুচ্ছেদ ৩৫৫। আদতে সংবিধানের এই দুই অনুচ্ছেদ কিন্তু বিপরীতধর্মী। এই পরিস্থিতিতে জেনে নেওয়া যাক কী এই অনুচ্ছেদ ৩৫৬? অনুচ্ছেদ ৩৫৫-ই বা কী? সংবিধানের এই দুই অনুচ্ছেদের মধ্যে তফাতই বা কী?
কলকাতা: বাংলার সদ্য সমাপ্ত পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে যে ভয়ঙ্কর হিংসার পরিবেশ তৈরি হয়েছে। তারপর বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী থেকে শুরু করে একের পর এক বিজেপি নেতার মুখে শোনা গিয়েছে সংবিধানের অনুচ্ছেদ ৩৫৬ কিংবা অনুচ্ছেদ ৩৫৫ জারির কথা। বাম আমলে বারংবার তৎকালীন বিরোধী দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের মুখে শোনা যেত অনুচ্ছেদ ৩৫৬ জারির দাবি। এখন তাঁর সরকারের বিরুদ্ধেই সেই একই দাবি তুলতে শোনা যাচ্ছে বিরোধীদের। সিপিআইএম অবশ্য এই দুই ধারার কোনওটি জারির পক্ষেই নেই। অনেকেরই ধারণা, অনুচ্ছেদ ৩৫৬-র বিকল্প বোধহয় অনুচ্ছেদ ৩৫৫। আদতে সংবিধানের এই দুই অনুচ্ছেদ কিন্তু বিপরীতধর্মী। এই পরিস্থিতিতে জেনে নেওয়া যাক কী এই অনুচ্ছেদ ৩৫৬? অনুচ্ছেদ ৩৫৫-ই বা কী? সংবিধানের এই দুই অনুচ্ছেদের মধ্যে তফাতই বা কী?
অনুচ্ছেদ ৩৫৬ কী?
প্রথমে বুঝে নেওয়া যাক অনুচ্ছেদ ৩৫৬ সম্পর্কে। যুক্তরাষ্ট্রীয় কাঠামোয় কোনও জরুরি পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় সরকারের করণীয় কী, সংবিধানের ১৮ নম্বর ভাগে সেই বিষয়গুলি আলোচনা করা হয়েছে। এই ভাগেই অনুচ্ছেদ ৩৫৬-র কথা বলা হয়েছে, যাকে সাধারণ কথায় রাষ্ট্রপতি শাসন বলা হয়। এই অনুচ্ছেদের বিধান অনুযায়ী, ভারতীয় সংবিধানের ৩৫৬ ধারা অনুযায়ী, কোনও রাজ্যের সরকার সাংবিধানিক শর্ত মেনে রাজ্য শাসনে ব্যর্থ হলে, কেন্দ্রীয় সরকার সেই রাজ্যের নির্বাচিত সরকারকে বরখাস্ত করে, রাজ্যের আইনি, সাংবিধানিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব নিজের হাতে তুলে নিতে পারবে।
কোন পরিস্থিতিতে অনুচ্ছেদ ৩৫৬ জারি করা যায়?
যদি কোনও দল বিধানসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে না পারে এবং মুখ্যমন্ত্রী নির্বাচনে ব্যর্থ হয়, কোনও বিপর্যয়ের কারণে যথা সময়ে বিধানসভা নির্বাচন না করা গেলে, অনাস্থা প্রস্তাবে সরকারের পতন ঘটলে, সংবিধান মেনে সরকার পরিচালিত হচ্ছে না বলে রাজ্যপাল বা রাষ্ট্রপতি মনে করলে এবং আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির চূড়ান্ত অবনতি ঘটলে, রাষ্ট্রপতি শাসন জারি করা যায়।
কতদিনের জন্য জারি করা যায় রাষ্ট্রপতি শাসন?
ছয় মাসের মধ্যে অনুচ্ছেদ ৩৫৬ জারি করার সিদ্ধান্ত, সংসদের দুই কক্ষে পাশ করাতে হয়। রাজ্যের পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হলে, সংসদের দুই কক্ষের অনুমোদন নিয়ে রাষ্ট্রপতি শাসনের মেয়াদ বাড়ানো যায়। তবে রাষ্ট্রপতি চাইলে যখন খুশি অনুচ্ছেদ ৩৫৬ অপসারণ করত পারেন। স্বাধীনতার পর থেকে মোট ১৩২ বার এই অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে রাজ্য সরকারের পতন ঘটানো হয়েছে।
৩৫৬ ধারার অপপ্রয়োগ বন্ধ করেছিল সুপ্রিম কোর্ট
একটা সময় দিল্লির সরকার প্রায় সকাল-বিকেল এই অনুচ্ছেদ প্রয়োগ করে রাজ্যের ক্ষমতায় হস্তক্ষেপ করত। কিন্তু, ১৯৯৪ সালে কর্নাটকের এক মামলায় ঐতিহাসিক রায় দিয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের বিষয়ে এসআর বোমাই বনাম কেন্দ্রীয় সরকার মামলায় সুপ্রিম কোর্ট জানিয়েছিল, অনুচ্ছেদ ৩৫৫-র সম্পূর্ণ ব্যবহার করার পরই অনুচ্ছেদ ৩৫৬ প্রয়োগের কথা ভাবা যেতে পারে।
অনুচ্ছেদ ৩৫৫ কী?
অনুচ্ছেদ ৩৫৬ যেখানে রাজ্যের ক্ষমতার উপর কেন্দ্রকে হস্তক্ষেপের অনুমতি দেয়, অনুচ্ছেদ ৩৫৫ সেখানে বাইরের আক্রমণ ও অভ্যন্তরীণ সংকট থেকে রক্ষা এবং রাজ্যের শাসনব্যবস্থা বজায় রাখার বিষয়ে কেন্দ্র-রাজ্য সহযোগিতার কথা বলা হয়েছে। এর বিধানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, বাহ্যিক আগ্রাসন এবং অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার বিরুদ্ধে প্রতিটি রাজ্যকে রক্ষা করা এবং প্রতিটি রাজ্য যাতে সংবিধান মেনে পরিচালিত হয় তা নিশ্চিত করা কেন্দ্রের কর্তব্য। রাজ্য সরকার যদি অনুরোধ করে কিংবা রাজ্যের নাগরিকদের সুরক্ষার জন্য কেন্দ্র যদি প্রয়োজনীয় বলে মনে করে, তাহলে এই বিধানের আওতায় রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলা বজায় রাখার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে কেন্দ্র।
অনুচ্ছেদ ৩৫৫-র আওতায় কী রাজ্যকে অন্ধকারে রেখে কোনও পদক্ষেপ করতে পারে কেন্দ্র?
সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, কেন্দ্রের সেই ক্ষমতা নেই। এই অনুচ্ছেদের অধীনে, রাজ্যে কেন্দ্রীয় সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করা গেলেও তার কিছু শর্ত আছে। রাজ্য সরকারের বা রাষ্ট্রপতির সম্মতি লাগে। রাজ্য সরকার চাইলে তবেই কেন্দ্র পদক্ষেপ করতে পারে। কেন্দ্রীয় বাহিনী মোতায়েন করা হলেও, তাদের রাজ্য পুলিশ-প্রশাসনের নির্দেশ ও পরামর্শ মেনেই চলতে হয়।
আদালত কি অনুচ্ছেদ ৩৫৫ বা ৩৫৬ প্রয়োগের নির্দেশ দিতে পারে?
সংবিধান বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, সেই এক্তিয়ার নেই আদালতের। ৩৫৬ বা ৩৫৫ নম্বর অনুচ্ছেদ জারি করার সিদ্ধান্ত ঠিক না ভুল, শুধু সেই বিচার করতে পারে আদালত। কোনও ক্ষেত্রে এই ধরনের প্রয়োগ বেঠিক মনে করলে, আদালত সেই রাজ্য সরকারকে পুনর্বহাল করতে পারে।