Mamata and Abhishek Banerjee: অভিষেকের কথায় সেদিনই কি বিপদ সংকেত পেয়েছিলেন মমতা?
Mamata and Abhishek Banerjee: মঞ্চে সে সময় উপবিষ্ট রাজনীতির রোদ-ঝড়-জলে 'সিজনড' তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী। ভ্রাতৃষ্পুত্রের এমন চড়া আবেদন শুনেই সম্ভবত পিসিমা বিপদ আঁচ করেছিলেন।
কলকাতা: দিনটা ছিল একুশে জুলাই। ধর্মতলায় তৃণমূলের শহিদ স্মরণের সমাবেশে তখন কাতারে-কাতারে মানুষ। মঞ্চে উঠে ঝাঁঝালো বক্তৃতায় তৃণমূলের ‘সেনাপতি’ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ১০০ দিনের কাজে কেন্দ্রের টাকা আটকে রাখার প্রসঙ্গে কেন্দ্র তথা বিজেপিকে কড়া আক্রমণ শুরু করেছেন। সেই সূত্র ধরেই তিনি ডাক দিলেন ‘দিল্লি চলো’। তাঁর নেতৃত্বে বাংলার মানুষ দিল্লির কৃষিভবন ঘেরাও করবেন আটকে থাকা হকের টাকার দাবিতে। আর এই মহা-কর্মসূচীর আগে তাঁরই ভাষায় ‘ট্রেলার’ হিসাবে বাংলার সর্বস্তরের বিজেপি নেতাদের বাড়ি ঘেরাও করতে হবে বলে জানিয়ে দিলেন অভিষেক। মঞ্চে সে সময় উপবিষ্ট রাজনীতির রোদ-ঝড়-জলে ‘সিজনড’ তৃণমূল সুপ্রিমো তথা মুখ্যমন্ত্রী। ভ্রাতৃষ্পুত্রের এমন চড়া আবেদন শুনেই সম্ভবত পিসিমা বিপদ আঁচ করেছিলেন। আর বোধ হয় সেই জন্যই নিজে বলতে উঠে অভিষেকের কর্মসূচির মূল সুরটাতে সিলমোহর দিলেও জঙ্গিপনায় বেশ কিছুটা রাশ টেনে দেন। কিন্তু তবু ‘বিপদ’ ঠেকানো গেল না। সোমবার (৩১ জুন ২০২৩) কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ স্পষ্টত নির্দেশ দিল, ‘শান্তি বিঘ্ণিত হতে পারে এবং সাধারণ মানুষের অসুবিধা করে কোনও রকম কর্মসূচি নয়’।
২১ জুলাই ঠিক কী বলেছিলেন অভিষেক?
মঞ্চে দাঁড়িয়ে আঙুল উঁচিয়ে তৃণমূলের সেকন্ড-ইন-কমান্ড দলের কর্মীদের বলেন, “আগামী ৫ অগাস্ট বিজেপি-র বড়, মেজ, সেজ বুথ থেকে শুরু করে অঞ্চল, ব্লক, জেলা থেকে রাজ্যস্তরের সব বিজেপি নেতাদের বাড়ি শান্তিপূর্ণ ভাবে ঘেরাও করুন।” পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, অভিষেকের এই ঘোষণায় যে জলঘোলা হবে তা হয়ত সেই সময়ই আঁচ করেছিলেন রাস্তায় দাঁড়িয়ে রাজনীতি করা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অভিষেকের কর্মসূচিকে সমর্থন করেও কিছুটা শুধরে দিয়ে মমতা বলেছিলেন, “আমি বলব এই কর্মসূচী ব্লকে-ব্লকে করুন। বুথে-বুথে নয়। আর বিজেপি নেতাদের বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে, প্রতীকী ভাবে করন। যাতে কেউ বলতে না পারেন, বাধা দেওয়া হচ্ছে।”
ফলে, মমতা সেই দিনই বুঝেছিলেন এই কর্মসূচির জন্য সাধারণের অসুবিধা হতে পারে। তাই সাবধানও করেছিলেন। আর আজ তাঁর সেই দূরদর্শিতাই সত্যি প্রমাণ হল। প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানম বেঞ্চ কড়া ভাষায় নির্দেশ দেয়, “সাধারণ মানুষের সমস্যা হবে এমন কোনও কর্মসূচি করা যাবে না।” সঙ্গে রাজ্যকে তীব্র ভর্ৎসনা করে বলে, “কেউ যদি এই ধরনের মন্তব্য করে, প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে না? ধরুন কেউ বললো হাইকোর্ট ঘেরাও করবে। তখনও প্রশাসন কোনও ব্যবস্থা নেবে না?”
এ দিকে, আদালতে ধাক্কা খেতেই সুর নরম শাসকদলের। মমতার সেদিনের সেই বক্তব্যই এখন ‘রক্ষাকবচ’ তৃণমূলের। আজ রায় ঘোষণার পর শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পরিষ্কার বলে দিয়েছিলেন বাড়ি থেকে ১০০ মিটার দূরে হবে। তারপরও বিজেপি ভয় পেয়ে গিয়েছিল বলে আদালতে গিয়েছে। আমরা এখন আদালতের নির্দেশ মেনে চলব।”
এ দিকে, অভিষেকের কর্মসূচিতে নিষেধাজ্ঞা পড়তেই যেন বাড়তি অক্সিজেন পেতে শুরু করেছে গেরুয়া শিবির। বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বলেন, “যে রায় দিয়েছে তাকে স্বাগত জানাচ্ছি। পিসি-ভাইপো এই ধরনের অগণতান্ত্রিক কর্মসূচী থেকে আগামী দিনে বিরত থাকবেন আশা করছি।”