Calcutta High Court: ‘মামলাকারী ইনি বলেই কি এত অনীহা?’ জাতীয় পতাকা অবমাননায় শুভেন্দুর মামলায় রাজ্যকে তিরস্কার প্রধান বিচারপতির
Calcutta High Court: বাঁশবেড়িয়ার স্কুলে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় বিরক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, "এই ঘটনা যদি শিশুদের সামনে হয়, তাহলে দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় সঙ্গীত এরাজ্যের কবির লেখা আর সেখানে এই ঘটনা কি ভাবমূর্তি তৈরি করবে?"
কলকাতা: ‘যবে থেকে এসেছি, দেখছি অভিযোগকারী কে সেটা এখানে খুব গুরুত্ব পায়’,স্বাধীনতা দিবসের দিন বাঁশবেড়িয়ার জাতীয় পতাকার অবমাননার অভিযোগের ভিত্তিতে রাজ্য বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর করা মামলার ভিত্তিতে রাজ্যকে তিরস্কার কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি টি এস শিবজ্ঞানমের ডিভিশন বেঞ্চ। ১৫ অগস্ট হুগলির বাঁশবেড়িয়ায় জাতীয় পতাকা ফেলে দেওয়ার ‘গুজব’কে ঘিরে ব্যাপক অশান্তি দানা বাঁধে। ঘটনার জল গড়ায় আদালত পর্যন্ত। শুভেন্দু অধিকারী কলকাতা হাইকোর্টে একটি মামলা দায়ের করেন। মঙ্গলবার সেই মামলার শুনানি ছিল। সওয়াল জবাবের সময়ে রাজ্যের তরফে এজি সৌমেন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় জানান, আদৌ সেদিন ওই স্কুলে জাতীয় পতাকার অবমাননা হয়েছিল কিনা, সেই বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষ। রাজ্যের আইনজীবী অনির্বাণ রায় আদালতে জানান, ইতিমধ্যেই এই ঘটনায় ৩১ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তখনই মামলাকারীর আইনজীবী বলেন, যাঁদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাঁরাই আদতে ‘ভিক্টিম’। তখন প্রধান বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “যদি বলছেন, কিছু হয়নি, তাহলে তাঁদের কেন গ্রেফতার করা হয়েছে?” রাজ্যের আইনজীবী উত্তর দেন, “স্কুলের বাইরে জমায়েত করেছিলেন। গণ্ডগোল পাকানোর চেষ্টা চলছিল।” রাজ্যের এহেন উত্তরে অসন্তুষ্ট হন প্রধান বিচারপতি। এরপরই রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশ্যে প্রধান বিচারপতির মন্তব্য,” আপনার কী মনে হয় না, এটা সিরিয়াস।” বিচারপতির মন্তব্য, “রাজ্যের এ বিষয়ে আরও সজাগ হওয়া উচিৎ ছিল।” শুভেন্দু অধিকারীর নাম না করে প্রধান বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “মামলাকারী ইনি বলেই কি এত অনীহা?” রাজ্যের আইনজীবীর উদ্দেশে ডিভিশন বেঞ্চের বক্তব্য, “আপনি ভুলে যান কে আদালতে এসেছে। জাতীয় পতাকার অবমাননা আমাদের সবার অবমাননা। রাজ্যের আরও প্রোঅ্যাক্টিভ হওয়া উচিত। পুলিশ-থানার উচিৎ ছিল স্বতঃস্ফূর্ত পদক্ষেপ নেওয়া।”
প্রধান বিচারপতির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য, “সব কিছুকে রাজনৈতিক রঙ দেবেন না। মিথ্যে বলবেন না। আপনি চোখ বন্ধ রাখলেই পৃথিবী অন্ধকার হয়ে যায় না। যবে থেকে এসছি দেখছি মামলাকারী কে সেটা এখানে খুব গুরুত্ব পায়।” প্রধান বিচারপতি এতটাই অসন্তুষ্ট হয়েছিলেন, এরপর রাজ্যের তরফে কোনও আইনজীবী কোনও জবাব দেননি।
রাজ্য পুলিশকে প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই মামলা বাদ দিয়ে দিচ্ছি। এর পর কি তদন্ত করবেন? গ্রেফতার করলেই সব কিছু হয় না। জেলে তিন বেলা খাওয়ার পর জামিনে ছাড়া পেলে আবার ঘুরে বেড়াবে।”
বাঁশবেড়িয়ার স্কুলে জাতীয় পতাকা অবমাননার ঘটনায় বিরক্ত প্রধান বিচারপতি বলেন, “এই ঘটনা যদি শিশুদের সামনে হয়, তাহলে দুর্ভাগ্যজনক। জাতীয় সঙ্গীত এরাজ্যের কবির লেখা আর সেখানে এই ঘটনা কি ভাবমূর্তি তৈরি করবে?”
প্রসঙ্গত, ১৫ অগস্ট বাঁশবেড়িয়ায় স্বাধীনতাদিবস পালনের সময় জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ ওঠে। ঘটনায় দুপক্ষের ঝামেলা হয়। ওই ঘটনায় স্কুলে অনেকেই আহত হন। পুলিশও আহত হয়।
এই ঘটনায় স্কুলের প্রিন্সিপাল সেক্রেটারি হলফনামা জমা দেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে আদালত। কাদের গ্রেফতার করা হয়েছে, তাদের কী ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’, সেটাও জানতে চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি। এক সপ্তাহ পর ৬ সেপ্টেম্বর মামলার শুনানি। এই ঘটনায় স্কুলকেও একটি স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি।