State Song: বিজেপির ‘জাতীয়তাবাদের’ পাল্টা বাংলাবাদ! বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন ট্রেন্ড ‘আইডেন্টিটি পলিটিক্স’

১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদে (অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভা) অখণ্ড বাংলা ভাগের বিষয়টি উঠেছিল। বাংলাভাগের পক্ষে ভোট পড়েছিল। দুই টুকরো করা হয়েছিল বাংলাকে।

State Song: বিজেপির ‘জাতীয়তাবাদের’ পাল্টা বাংলাবাদ! বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন ট্রেন্ড 'আইডেন্টিটি পলিটিক্স'
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভা। Image Credit source: TV9 Bangla
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 22, 2023 | 9:36 PM

কলকাতা: বাংলার রাজনীতির নতুন ট্রেন্ড প্রচ্ছন্ন আইডেন্টিটি পলিটিক্স। বাংলার জন্য আলাদা দিবস ঘোষণা কিংবা রাজ্য সঙ্গীত নিয়ে সরকারি স্তরে ভাবনা চিন্তা শুরু হয়েছে। ২০ শে জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবসের বিরোধিতা করে রাজ্য পাল্টা প্রস্তাব আনছে পয়লা বৈশাখ হোক বাংলা দিবস। রাজ্য বিধানসভায় এই মর্মে বৈঠক হয়েছে। সোমবার বিধানসভার অধ্যক্ষ কর্তৃক গঠিত কমিটির দ্বিতীয় বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ইতিহাসবিদ সুগত বসু। সেই বৈঠকে পয়লা বৈশাখ দিনটিকেই বাংলা দিবস হিসাবে এক প্রকার চূড়ান্ত করা হয়েছে বলে সূত্রের দাবি।

ওয়াকিবহাল মহলের মতে, বাংলা দিবস ও রাজ্য সঙ্গীত তৈরির মধ্যে প্রাদেশিক আবেগ উস্কে দেওয়ার প্রবণতা অবশ্যই লক্ষণীয়। সেই সঙ্গে প্রশ্ন উঠছে বাঙালির পরিচয়বাদী রাজনীতিকেই কি নতুন করে হাতিয়ার করছে শাসক দল তৃণমূল? বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদ রুখতে তৃণমূলের অস্ত্র কি তবে প্রাদেশিক আবেগ এবং বাংলার পরিচয়বাদ? সে প্রশ্নও উঠে আসছে।

সাম্প্রতিক অতীতে একুশের নির্বাচনে তৃণমূলের স্লোগান ছিল বাংলা নিজের মেয়েকে চায়। আবার বিজেপিকে বহিরাগত, বাংলা বিরোধী আখ্যা দিয়েছিল রাজ্যের শাসক দল। এই দুই স্লোগানেই বাংলার সত্ত্বা এবং প্রাদেশিক আবেগ ছিল স্পষ্ট। এবার এই আবেগেরই কি স্থায়ী রাজনৈতিক অবয়ব চাইছে তৃণমূল? সেই কারণেই এত প্রস্তুতি, এত আয়োজন?

কেন ২০ শে জুনে আপত্তি? কেনই বা পয়লা বৈশাখ

১৯৪৭ সালের ২০শে জুন বঙ্গীয় আইন পরিষদে (অবিভক্ত বাংলার প্রাদেশিক আইনসভা) অখণ্ড বাংলা ভাগের বিষয়টি উঠেছিল। বাংলাভাগের পক্ষে ভোট পড়েছিল। দুই টুকরো করা হয়েছিল বাংলাকে। এই বিভাজনে ধর্মীয় বিশ্বাসের যে পার্থক্য, গুরুত্ব পেয়েছিল তা। এই দিনটিকে বিজেপি তুলে ধরতে চায়, কারণ, তাতে পশ্চিমবঙ্গে হিন্দু প্রাধান্য রাজনৈতিকভাবে তুলে ধরা সম্ভব হবে বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। অন্যদিকে মোঘল আমলে কর সংগ্রহের দিন পয়লা বৈশাখ। আবার বাঙালির নববর্ষও। রাজনৈতিক মহল মনে করছে, বাংলা দিবস হিসাবে এই দিনকে তুলে ধরে বাঙালির পরিচিত পার্বণ এবং হিন্দু মুসলিম সহাবস্থানের সংস্কৃতিতেই জোর দিতে চায় তৃণমূল।

ভারতের বিভিন্ন রাজ্যের সঙ্গীত, রাজ্যের পতাকা পর্যন্ত আছে। প্রাদেশিক আবেগ, রাজনীতি, সমাজ, বাণিজ্য উদ্যোগ সবেতেই প্রাদেশিক জাতীয়তাবাদ কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারে তার উজ্জ্বল উদাহরণ দক্ষিণ ভারত। এই দ্রাবিড় গৌরব আবেগ এতটাই তীব্র যে পরিচয়বাদী রাজনীতিই দক্ষিণের রাজনীতির মূল সুর। বিশেষত তামিলভূমে ও অন্ধ্র প্রদেশে ভারতের জাতীয় দলগুলির তুলনায় আঞ্চলিক দলগুলির শক্তিই বেশি।

বাংলার সমাজ, রাজনৈতিক জীবনে পরিচয়বাদী রাজনীতি সেভাবে দানা বাঁধেনি। সমাজ জীবনেও না। দ্রাবিড়দের মতো একতা বঙ্গজীবনে কখনওই ছিল না। এই ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে বাঙালির পরিচয়বাদী রাজনীতি সেভাবে গড়ে ওঠেনি। কিছু বিক্ষিপ্ত উদ্যোগ ছাড়া। বাংলায় দিল্লি বিরোধী রাজনীতি, বঞ্চনা নিয়ে ভিকটিম পলিটিক্স বাম আমল থেকে তৃণমূল জমানা একইভাবে চলছে। কিন্তু প্রাদেশিক আবেগের এই তাস বঙ্গ রাজনীতিতে নতুন এবং তাৎপর্যপূর্ণও বটে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই পরিচয়বাদকে বাঙালিবাদ না বলে বাংলাবাদ বলা উপযুক্ত হবে। এবং এই বাংলাবাদই এখন তৃণমূলের মোক্ষম অস্ত্র বিজেপির হিন্দু জাতীয়তাবাদকে রোখবার প্রশ্ন।

তবে সেই বাংলাবাদকে তুলে ধরতে শাসকদল কোন সঙ্গীতকে বেছে নেয়, তাতেও আলাদা করে নজর সকলের। উল্লেখ্য, বাংলা ভাষায় জাতীয় সঙ্গীত রচনা হয়েছে, তবে তা কাশ্মীর থেকে কন্যাকুমারিকার বন্দনা। সেখানে ভারত জননীই বন্দিতা। বঙ্কিমচন্দ্রের আনন্দমঠে যে মাতৃরূপ কল্পনা করে বন্দনাগীত আছে, তাও ভারতমাতার রূপেরই বন্দন। দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের ধনধান্যে পুষ্পে ভরাও বসুন্ধরার জয়গান। কোন সে গানে শুধু বাংলারই মহিমা উদ্ভাসিত হয়, কোন সঙ্গীত হয়ে ওঠে বাংলার একান্ত সঙ্গীত, সেদিকেই নজর সবমহলের।