Bengal Panchayat Election: ‘চিত্রগুপ্তের’ খাতাতেও গরমিল? বাংলায় রাজনৈতিক হিংসায় কত মৃত্যু, জানা গেল RTI-এ
Bengal Panchayat Election: এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা আরটিআই-এর উত্তরে জানায় 'নট অ্যাভেলেবেল', সুন্দরবন পুলিশ জেলা তথ্যের জায়গা ফাঁকা রাখে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ আবার উত্তর না দিয়ে ওয়েবসাইট দেখে নিতে বলে।
কলকাতা: রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর তথ্যে চেপে যাচ্ছে বা তথ্য নিয়ে লুকোচুরি! অভিযোগ উঠছে রাজ্য প্রসাশনের বিরুদ্ধে। ভোট ও রাজনৈতিক হিংসার ও মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তুমুল গরমিলের অভিযোগ খোদ এই রাজ্যের প্রশাসনের বিরুদ্ধে। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে, কেন এভাবে রাজ্য সরকার চেপে যাচ্ছে রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যা? সরকারি ভাবে নথিবদ্ধ হয়েছে সেই তথ্য কেন লুকোচ্ছে রাজ্যে সরকার? আসল তথ্য ও NCRB-কে দেওয়া চেপে দেওয়া তথ্যের এক্সক্লুসিভ সেই সরকারি নথি টিভি৯ বাংলার হাতে।
রাজ্যের রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর ঘটনার সংখ্যা বেমালুম চেপে যাচ্ছে রাজ্য সরকার। একাধিক সরকারি তথ্য নিয়ে গুরুতর অভিযোগ RTI অ্যাক্টিভিস্ট বিশ্বনাথ গোস্বামীর। তথ্যে হেরফের ধরা পড়ল সরকারি নথিতেই। কীভাবে রাজনৈতিক হিংসা ও মৃত্যুর সংখ্যায় গরমিল তৈরি হয়েছে? দেখলে চমকে যেতে হবে।
অভিযোগ, শুধুমাত্র ২০২১ সালের রাজ্যে রাজনৈতিক হিংসার ছবি আঁতকে ওঠার মতো। সরকারি পরিসংখ্যানও তেমনি। আধিকারিকদের একাংশের মতে, খোদ রাজ্য প্রশাসনের এই চেপে যাওয়ার প্রবণতা রাজ্যের জন্য, দেশের জন্য মারাত্মক। হিংসার ঘটনা, মৃত্যুর ঘটনা চেপে গেলে তা আরও বাড়বে। মানুষ নিরাপত্তাহীনতায় ভুগবে। এই আধিকারিকদের মতে, ২০২১ সালে ‘ম্যাসিভ পোল ভায়োলেন্স’ হয় বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে। এই তথ্য যদি সরকার চেপে যায় তা অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।
বিভিন্ন জেলায় আরটিআই করে পাওয়া সরকারি নথি বলছে, ২০২১ সালে ১ হাজার ১৭টি রাজনৈতিক হিংসার ঘটনা ঘটেছে। মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে ৬০টির বেশি। কিন্তু রাজ্যের সব পুলিশ জেলা ও পুলিশ কমিশনারেটের ঘটনা ধরলে সংখ্যা আরও বেশি। কয়েকটি পুলিশ জেলা প্রশাসন আরটিআই-এর আবার কোনও উত্তর দেয়নি। কেউ আবার বলেছেন ঘটনার সংখ্যা শূন্য। কেউ-কেউ তথ্য দিতেই অস্বীকার করেছেন।
এর মধ্যে মুর্শিদাবাদ পুলিশ জেলা আরটিআই-এর উত্তরে জানায় ‘নট অ্যাভেলেবেল’, সুন্দরবন পুলিশ জেলা তথ্যের জায়গা ফাঁকা রাখে, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ আবার উত্তর না দিয়ে ওয়েবসাইট দেখে নিতে বলে। কিন্তু সেখানে রাজনৈতিক হিংসা সংক্রান্ত কিছুই মেলেনি। ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটও ফাঁকা রেখে দেয় জায়গা।
বিশ্বনাথ গোস্বামীর দাবি, সব কিছু ধরলে ঘটনার সংখ্যা দেড় হাজারের কাছাকাছি। মৃত্যুর সংখ্যাও ৬০-এরও বেশি। ২০২১ সালে কলকাতা হাইকোর্টে হিংসা নিয়ে মামলায় রাজ্যপুলিশের ডিজি আদালতকে তথ্য দেন, মৃত্যুর সংখ্যা ২৯। রাজ্যের পুলিশ প্রধান হাইকোর্টকে যে তথ্য দেন সেই তথ্য বিকৃত করে ওই বছরেই NCRB কে পাঠানো হয় বলে অভিযোগ। সেই অনুযায়ী রাজনৈতিক হিংসার সংখ্যা ৩৪। এবং মৃত্যু ৭।
কেন এমন লুকোচুরি?
আরটিআই কর্মী বিশ্বনাথবাবু বলেন, “কিছু জেলা প্রশাসন আরটিআই-এর উত্তর দেবে না। মানুষের তথ্য জানার অধিকার এভাবে সংবিধান ভেঙে এড়িয়ে যাচ্ছে প্রশাসন। রাজ্য কত ভাল সেটাই হয়ত প্রমাণ করার চেষ্টা চলছে। রাজ্যে ঘটনা যতই ঘটুক, প্রশাসন দেখাতে চায় ঘটনার সংখ্যা সামান্য।”
কেন কিছু জেলার প্রশাসন তথ্য দেবে না?
এখানেও রয়েছে আসল সত্য লুকোনোর বিষয়। একেবারে বিশ্বনাথবাবুর দাবি, একে নির্দেশ জারি করে সংশ্লিষ্ট জেলা ও প্রশাসনকে বলা হয়েছে বিশ্বনাথবাবুর আরটিআই-এর উত্তর না দিতে। সেই গোপন সরকারি বিজ্ঞপ্তিও এক্সক্লুসিভলি টিভি ৯ বাংলার হাতে এসেছে।
কী বলছেন রাজনৈতিক নেতা ও প্রশাসন বিশেষজ্ঞরা?
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেন, “পুলিশের উপস্থিতিতে ৫৬ জন বিজেপি কর্মীর দেহ ময়না তদন্ত হয়। আর পুলিশ মন্ত্রী বলছেন ৫ থেকে ৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। স্বাভাবিক ভাবেই এনসিআরবি-র কাছে প্রকৃত তথ্য় পাঠায়নি তৃণমূল সরকার।” সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তী বলেন, “তৃণমূল আসার পর থেকে এনসিআরবি-তে রিপোর্ট যায় না। তথ্য গোপন করা হয়। যে সরকার ডেঙ্গি হলে অজানা জ্বর বলে চালিয়ে দেয়। সেই সরকার এই কাজ করবে স্বাভাবিক।” রাজ্যের মন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য বলেন, “একটা নির্বাচন থেকে পরের নির্বাচন পর্যন্ত সবটাই পোস্ট পোল। তাহলে কী লুকোচ্ছে আর কী লুকোচ্ছে না, এই সবটাই অবান্তর। আসলে যাদের অস্তিত্ব নেই তারাই এইসব কথা বলে।”