Sarna Dharam Code: নতুন ধর্মের দাবি উঠছে বাংলাতেও, কী এই ‘সারনা ধর্ম কোড’ জানুন বিশদে
Sarna Religion: শনিবার জায়গায় জায়গায় ‘রেল রোকো’র ডাক দেওয়া হয়। পূর্ব বর্ধমানে জৌগ্রাম, মেদিনীপুরের খেমাশুলি, পুরুলিয়ার কাঁটাডি, মালদহ, দিনাজপুরে 'চাক্কা জ্যাম' চলে।
কলকাতা: ধর্মের আক্ষরিক অর্থ হল, যা ধারণ করা হয়। আদিবাসীদের একটা বৃহৎ জনজাতির কাছে প্রকৃতিই হল ধর্ম। প্রকৃতিকে মা বলে মানে তারা। প্রকৃতির রক্ষায় ‘জান কুরবান’ করতেও রাজি। ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, অসম, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু জেলায় এমন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ রয়েছেন, যাঁরা দাবি করেন তাঁদের ধর্মের নাম ‘সারনা’ (Sarna Religious Code)। সারনার অর্থ শাল গাছ। সারনা ধর্মে যাঁরা বিশ্বাসী, তাঁদের আরাধ্য প্রকৃতি। জল, জঙ্গল, জমিই তাঁদের শক্তির আধার। সারনা ধর্মাচারে বিশ্বাসীরা মূর্তি পুজো করেন না। বর্ণপ্রথা, স্বর্গ-মর্ত্যেও বিশ্বাস নেই তাঁদের। সিংবোঙ্গা, হিল্লা মারাংবুরুর উপাসক তাঁরা। তাঁদের সবটা ঘিরে প্রকৃতি। তবে নিজেদের সারনা ধর্মাবলম্বী বলে দাবি করলেও হিন্দু, ইসলাম, খ্রিস্টান, জৈন, পার্সির মতো তাঁদের সাংবিধানিক কোনও স্বীকৃতি নেই। অর্থাৎ নেই কোনও ‘সারনা ধর্ম কোড’। সেই স্বীকৃতির দাবিতেই এবার দেশের বিভিন্ন রাজ্যে আন্দোলনে নেমেছেন তাঁরা। তাঁদের দাবি, পৃথক ধর্ম। সেনসাস বা গণনায় তাঁদেরও আলাদা ধর্মীয় পরিচিতির ‘কলাম’ থাক, চান তাঁরা। এই আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ ‘আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান’ নামে এক সংগঠনের পতাকার নীচে এসে রাজ্যে, রাজ্যে আন্দোলন করছেন।
মনে করাচ্ছে লিঙ্গায়েতের স্বীকৃতির দাবি
এর আগে এভাবে ধর্মের স্বীকৃতি চেয়ে কর্ণাটকে আন্দোলনের ঝাঁঝ দেখা গিয়েছিল। তাতেই স্বীকৃতি পেয়েছিল লিঙ্গায়েত। এই ধর্মের মানুষ শিবের উপাসক। এবার প্রকৃতিপুজোকে সামনে রেখে সারনা ধর্মের স্বীকৃতির দাবি উঠছে। তাঁরা বলছেন, সারনা ধর্মকে অবিলম্বে স্বীকৃতি দিতে হবে। জনগণনায় আলাদা ‘কলাম কোড’ও দিতে হবে। এই জনজাতির বাস মূলত পশ্চিমবঙ্গ, ঝাড়খণ্ড, বিহার, ওড়িশা, অসমেই। তাই কেন্দ্রের পাশাপাশি রাজ্যের কাছেও এই স্বীকৃতির দাবি জানিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কর্মসূচি নেন আদিবাসীরা। দ্রৌপদী মুর্মু রাষ্ট্রপতি হওয়ার পর পরই আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের প্রেসিডেন্ট সালখান মুর্মু তাঁকে ও প্রধানমন্ত্রীকে চিঠি লেখেন বলে সংবাদসংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছিলেন।
হিন্দু-মুসলিম-শিখ-জৈন নয়
সালখান মুর্মুর বক্তব্য ছিল, বৃহৎ এই জনজাতি না হিন্দু, না মুসলিম, না খ্রিস্টান বা শিখ, জৈন। এমনও তিনি দাবি করেছিলেন, ২০১১ সালের আদমশুমারির সার্ভে রিপোর্টে দেখা গিয়েছিল গোটা দেশে ৫০ লক্ষের বেশি সারনা ধর্মের দাবিদার আছেন। তাঁরা চান, ধর্মের পৃথকীকরণের মাধ্যমে নিজেদের ভাষা ও ইতিহাসকে সংরক্ষিত করতে।
পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় আসতে পারে প্রস্তাব
পড়শি রাজ্য ঝাড়খণ্ডে এ সংক্রান্ত একটি প্রস্তাব ইতিমধ্যেই বিধানসভায় পাশ হয়েছে। যার মূল বক্তব্যই হল, ধর্মের কলামে সারনার পৃথক কোড চালু হোক। সূত্রের খবর, সারি ও সারনা ধর্মকে মান্যতা দিতে পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভায় একটি প্রস্তাব আনবে রাজ্য সরকার। আগামী ২০ ফেব্রুয়ারি বাজেট অধিবেশনেই সেই প্রস্তাব আসতে পারে বিধানসভায়।
রেল রোকোর ডাক
শনিবার ১১ ফেব্রুয়ারি পাঁচ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় রেল রোকো অভিযানের ডাক দিয়েছিল ‘আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযান’। পুরুলিয়া, মেদিনীপুর, ঝাড়গ্রাম, দক্ষিণ দিনাজপুর, উত্তর দিনাজপুর, মালদহের বিভিন্ন জায়গায় তার প্রভাবও দেখা যায়। শুধু সারনা ধর্ম কোড চালুর দাবিই নয়, এদিন আরও একটি বিষয় তুলে ধরেন আন্দোলনকারীরা। গিরিডিতে মারাংবুরু পাহাড়ে (পরেশনাথ) তাঁদের অধিকার খর্ব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তাঁরা।
দাবি পূরণ না হলে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘চাক্কা জ্যাম’
পরেশনাথ তাঁদের কাছে পবিত্র ‘জহরথান’ বা পুজোর জায়গা। আদিবাসী সেঙ্গেল অভিযানের ঝাড়গ্রামের জেলা প্রেসিডেন্ট সঞ্জয় হেমব্রম এদিন শুনিয়ে রেখেছেন, শনিবার ঘণ্টা দু’য়েকের জন্য অবরোধ চললেও দাবি পূরণ না হলে এপ্রিলের ১১ তারিখ থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য ‘চাক্কা জ্যাম’-এর পথে হাঁটবেন তাঁরা।