Mamata’s Muri Politics: একুশের মঞ্চে কেন ‘মুড়ি রাজনীতি’ করলেন মমতা?
Mamata's muri politics: বৃহস্পতিবার বৃষ্টি ভেজা দুপুরে সেই মুড়ি দিয়েই তৃণমূলের ‘শহিদ’ মঞ্চে বক্তৃতায় শান দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মুড়ি, চাল, ডাল-সহ বেশি কিছু প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যে জিএসটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র
২০১৫ সাল। অগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ। চলছে টানা বৃষ্টি। বিভিন্ন জেলায় বন্যার পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় উদ্বেগ বাড়ছিল প্রশাসনের। বন্যার ভ্রুকুটি দেখেই তড়িঘড়ি লন্ডন সফর কাটছাঁট করে কলকাতায় ফেরেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। নবান্নে ঢুকেই প্রেস কনফারেন্স। সেখানেই তিনি জানিয়ে দেন, আজ রাতে নবান্ন থেকেই সবকিছু তদারকি করবেন নিজের হাতে। মমতার এমন অতর্কিত ঘোষণায় বিড়ম্বনায় পড়েন আমলারা। কীভাবে মমতার দেখভাল করবেন চিন্তিত হয়ে পড়েন তাঁরা। মুশকিল আসান করলেন খোদ মমতাই। সবার জন্য রেস্তোরাঁ থেকে বিরিয়ানি অর্ডার দেন। কিন্তু তিনি খেলেন না। তাহলে উপায়? মমতার সহজ সমাধান, “আমার মুড়ি হলেই চলবে।”
বৃহস্পতিবার বৃষ্টি ভেজা দুপুরে সেই মুড়ি দিয়েই তৃণমূলের ‘শহিদ’ মঞ্চে বক্তৃতায় শান দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সম্প্রতি মুড়ি, চাল, ডাল-সহ বেশি কিছু প্যাকেটজাত খাদ্যপণ্যে জিএসটি বসানোর সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। এবারের একুশে জুলাইয়ে কেন্দ্রের বিরুদ্ধে জিএসটি, জ্বালানি, রান্নার গ্যাসের দাম বৃদ্ধি নিয়ে মমতা যে স্বর চড়াবেন, তাতে অস্বাভাবিক কিছু ছিল না। কিন্তু বাংলার পাহাড়, জঙ্গল, রাঢ় ভূমির প্রত্যন্ত গ্রাম থেকে আসা হাজার হাজার মানুষের সামনে মুড়িকে নাটকীয় ভাবে ‘রাজনৈতিক হাতিয়ার’ করে নেবেন মমতা, এটা অপ্রত্যাশিত ছিল সবার কাছে। তিনি জানতেন, এ সব মানুষের কাছে মুড়ি আর পাঁচটা খাদ্য শুধু নয়, দিন যাপনের অঙ্গ। তাই আজ দেহাতি মানুষগুলোর বুকে আগুন জ্বালাতে, জিএসটি বসানো মুড়িকেই ‘অস্ত্র’ করে নিলেন তৃণমূল সুপ্রিমো।
লাখো লাখো মাথার ভিড়ের সামনে দাঁড়িয়ে বিজেপির বিরুদ্ধে তৃণমূল সুপ্রিমোর তোপ, “এক থালা মুড়ি খাব, তাতেও জিএসটি”। তারপরের দৃশ্যগুলোতে মমতাসুলভ যে ভাষা হিল্লোল তোলে ‘তৃণমূলী ভিড়ে’ তা কতকটা এরকম-
-এই কার কাছে মুড়ি আছে এক থালা নিয়ে এসে তো।
– কে মুড়ি নিয়ে এসেছো। হাতের সামনে আছে? নেই! তাহলে, সামনের দোকান থেকে মুড়ি কেনো তো।
– আছে তো ছুড়ে দে না। ওই তো আছে। গ্রামের ছেলেরা আসছে, তাদের কাছে মুড়ি থাকবে না তো, কী থাকবে? বিরিয়ানি!
– দাও দাও, আমি দিয়ে দেব আবার। ওটাকে রিলে রেসে পার করো। যার মুড়ি তাকে ফেরত দেব, কিছু চিন্তা করো না।
এরপর মুড়ির থলে মঞ্চে আসে। লাল ভেলভেটের থালায় মুড়ি ঢালেন মমতা। কম হলে চলবে না। ওমন ভিড়ে একটু বেশি মুড়ি না হলে দেখবে কীভাবে? বলেন নিজেই। তারপর মুড়ির থালা পোডিয়ামের উপর রেখে কিছুটা ‘পশ’ নিয়ে মমতার ‘ডায়লগ’, “তা হলে মুড়িতেও জিএসটি। বিজেপির বন্ধুরা, মুড়ি খাবেন না!” শেষে মমতার নির্ঘোষ, “আমাদের মুড়ি ফিরিয়ে দাও, নইলে বিজেপি বিদায় নাও।”
যিনি মুড়ি দিয়ে মমতার এই ‘চিত্রনাট্যকে’ সাজিয়ে দিলেন, তাঁকেও ধন্যবাদ জানাতে ভুললেন না মমতা। বললেন, “কাজে লেগে গেল। দেখেছো তো, যা চাইলে পাওয়া যায়।”
মমতার মুড়ি-তরজাকে কীভাবে দেখছেন রাজনৈতিক মহল। রাজনৈতিক বিশ্লেষক শুভময় মৈত্র বলেন, “মুড়ি অত্যন্ত প্রতীকী। গ্রামবাংলার মানুষ মুড়ির সঙ্গে নিজেদের অবস্থান মেলাতে পারেন। কোনও কিছুর দাম বাড়লে বিরক্ত হন সাধারণ মানুষ। অসন্তুষ্ট হন কেন্দ্র ও রাজ্যের উপর। সে জায়গায় দাঁড়িয়ে মুড়ির মাধ্যমে তৃণমূল নেত্রী বোঝানোর চেষ্টা করেছেন, দাম বাড়ার পিছনে মূলত কেন্দ্রই দায়ী।” তাঁর আরও ব্যাখ্যা, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বের বড় গুণ হচ্ছে, তাঁর কথাবার্তা, চালচলনে অতি সহজে সাধারণ মানুষের মন জয় করে নেওয়া। মুড়ি হচ্ছে গ্রামবাংলার একটি জনপ্রিয় জলখাবার। তবে, মুখ্যমন্ত্রীর মুড়ি-তরজা আগেই পরিকল্পিত না চটজলদি মাথায় আসা, তা জানা মুশকিল। কিন্তু বক্তৃতার সময় নেত্রীর যে জনমুখী ভাবমূর্তি প্রকাশ পায়, আজ মুড়ির ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।”
অন্যদিকে আর এক রাজনৈতিক বিশ্লেষক মইদুল ইসলামের কথায়, “এটা বলা যায় একপ্রকার মমতার ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা। ২০১১-১২ সালে মমতাকে দেখা গিয়েছিল ভিড়ের মধ্যে শিলাদিত্যকে মাওবাদী বলতে। এবারে মুড়ি দিয়ে সেই ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছেন। এটাও ঠিক, গ্রামবাংলায় যেহেতু মুড়ি, চাল বেশি তৈরি হয়, সাধারণ মানুষের সঙ্গে কানেক্ট করার চেষ্টাও ছিল তাঁর।”
মমতার মুড়ি প্রসঙ্গে বিজেপির রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, “কীভাবে বিয়ের তত্ত্বের থালায় মুড়ি এল? নাটক করতে নিষেধ করুন। প্যাকেটজাত নয়, এমন মুড়িতে কোনও জিএসটি বসানো হচ্ছে না।” সিপিএম নেতা শতরূপ ঘোষের কটাক্ষ, “উনি যেটা করেছেন একটা ভাল ড্রামা হয়েছে। পেশাদারি নাটককে হার মানায়। ইতিমধ্যে, কেরল সরকার ঘোষণা করেছে, কেন্দ্রের এই জিএসটি কার্যকর করবে না। তাই কেরলবাসীর মুড়ি খেতে অসুবিধা হবে না। ওনার সঙ্গে এখানেই আমাদের তফাৎ, আমরা বিধানসভায় ঘোষণা করি, উনি বিধানসভায় না করে মঞ্চে দাঁড়িয়ে মুড়ি খান।”