Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: দ্বাদশ পর্ব, কোন ট্রিপে কীভাবে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে Biker-কে?

Weekend Trip: লাগেজ প্যাকিং মোটামুটি ৩০ দিনের ঘুরতে যাওয়ার জন্য। কী-কী জিনিস সঙ্গে নিয়ে যাওয়া দরকার এবং কীভাবে তা নিতে হবে, তা নিয়েই আলোচনা করব। যদি দিনের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে জামা-প্যান্ট এবং কিছু খাবার নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়াটা খুবই দরকার।

Motorcycle Ride: মোটরসাইকেল ডায়েরিজ়: দ্বাদশ পর্ব, কোন ট্রিপে কীভাবে ব্যাগ গুছিয়ে নিতে হবে Biker-কে?
ছবি: সঞ্জীব নস্কর
Follow Us:
| Edited By: | Updated on: Aug 06, 2023 | 9:45 AM

আজকে এই মোটরসাইকেল ডায়েরির ১২তম পর্বে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে কথা বলা দরকার। আমার মতো বাইক নিয়ে সারা ভারতবর্ষ তথা সারা পৃথিবী ঘুরে বেড়ায়, এমন মানুষের কাছে এই বিষয়টি খুবই চ্যালেঞ্জিং। এছাড়াও আজকের এই পর্বে থাকবে কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে একটি অভয়ারণ্যের সন্ধান। যেখানে আপনি বাড়ি থেকেই খাবার নিয়ে বেরিয়ে এই অভয়ারণ্যে পৌঁছে পিকনিকও করতে পারেন। এছাড়াও আপনি এখানে দেখে থাকবেন বিভিন্ন ধরনের পাখি, প্রজাপতি, নানা ধরনের মাকড়সা এবং অন্যান্য় কীটপতঙ্গ। এছাড়াও বহু-বহু বছরের পুরানো গাছ রয়েছে এখানে। আর এখানে, এই বিশাল জঙ্গলের গহনে আপনি নিজেকে হারিয়ে ফেলবেন অতি সহজেই। এছাড়াও রয়েছে অর্কিড এবং নানা ধরনের ফুলের সমাহার। আর রয়েছে বর্ষাকালে ফুটে ওঠা নানা ধরনের বড়-বড় ছত্রাক। মাঝেমধ্যেই আবার গভীর জঙ্গলের মাঝে ঝিঁঝিপোকার ডাকে আপনার কান বন্ধ হয়ে যাবে।

হ্যাঁ, আর কোথাও না। পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতার দক্ষিণে অবস্থিত নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের খুব কাছে, যা ‘চিন্তামণি কর পাখিরালয়’ নামে পরিচিত। জায়গাটি আগে ‘কয়ালের বাগান’ নামে পরিচিত ছিল। এই বনাঞ্চলটি ১৯৮২ সালে অভয়ারণ্যের মর্যাদা পায়। এটি ২০০৪ সালের ৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ‘নরেন্দ্রপুর বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য’ নামে পরিচিত থাকলেও পরে এই বনাঞ্চলটি অভয়ারণ্যে পরিণত হয় এবং চিন্তামণি করের নামে উৎসর্গ করা হয়। ২০০৫ সালে সরকারের তরফে এর দায়িত্ব গ্রহণ করা হয়। কলকাতা থেকে মাত্র ২০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের জন্য সকাল-সকাল ঘুম থেকে উঠে পড়ুন। দলের এক-একজনের জন্য এক-একটা কাজ ভাগ করে ১০টার মধ্যে রান্নাবান্না সেরে বেরিয়ে পড়ুন অভয়ারণ্যের উদ্দেশে। মাত্র ৪০ মিনিটের পথ। বিশ্ব বাংলা সরণি পেরিয়ে ইস্টার্ন মেট্রোপলিটন বাইপাস হয়ে সোজা চলে আসুন চিন্তামণি কর পাখিরালয়-এ। এই অভয়ারণ্যটি ৩৬৫ দিন সকাল ৭ টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত খোলা থাকে। তবে ৪টের পরে প্রবেশ নিষেধ। রবিবারের একটি বেলা বন্ধুদের সঙ্গে জঙ্গলে হারিয়ে যাওয়া এবং বনভোজনের মাধ্যমে সময় কাটানোর জন্য আদর্শ জায়গা এই চিন্তামণি কর পাখিরালয়।

ছবি: সঞ্জীব নস্কর

শুরুতেই বলেছিলাম আজকের বাইক রাইডিংয়ের একটি চ্যালেঞ্জিং বিষয় নিয়ে কথা বলব। তা হল লাগেজ প্যাকিং। এই লাগেজ প্যাকিং মোটামুটি ৩০ দিনের ঘুরতে যাওয়ার জন্য। কী-কী জিনিস সঙ্গে নিয়ে যাওয়া দরকার এবং কীভাবে তা নিতে হবে, তা নিয়েই আলোচনা করব। যদি দিনের সংখ্যা কমে যায়, তাহলে জামা-প্যান্ট এবং কিছু খাবার নিজের মতো করে গুছিয়ে নেওয়াটা খুবই দরকার। আমি নিজে ১৫ লিটারের একটা রেইন কভার সমেত একটা পিডব্যাক সামনেই নিয়ে থাকি। তাতে থাকে সব ধরনের আইডি প্রুফ (যেমন ভোটার কার্ড, আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স) এবং বাইকের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র। আমার নিজের প্রায় ১০ কপি ছবি-সহ গাড়ির স্মার্ট কার্ড, গাড়ির ইনসিওরেন্স এবং পলিউশন পেপার। এছাড়াও সব ওরিজিনাল ডকুমেন্টসের দু’কপি করে ফটোকপি। এছাড়াও এই ছোট্ট ব্যাগে থাকে একটি ছোট ডায়েরি, যার মধ্যে লেখা হয় প্রতিদিনের খরচ এবং কোথায়-কোথায় রাতে থাকা হল, তার বিবরণ। এছাড়াও চার্জার, ডেটা কেবল, পাওয়ার ব্যাঙ্ক, পেনড্রাইভ, অল পার্পাস ফোল্ডিং ছুরি, আরেকটি ছোট রিচার্জেবল টর্চ লাইট। আরেকটি ছোট ব্যাগের মধ্যে থাকে টুথপেস্ট, ব্রাশ, সাবান, শ্যাম্পু। কিছু দরকারি ওষুধপত্র যেমন প্যারাসিটামল, ওমেজ ডি, গ্যাস-অ্য়াসিডিটির ওষুধ, স্যাভলন, ব্যান্ডেড, কোকা ৬০, ওআরএস, কোল্ড ক্রিম, ভেসলিন, মশা দূরে থাকার রোল অন্, মাস্ক এবং স্যানিটাইজার। এছাড়াও থাকে ক্যামেরা এবং তার প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

ছবি: সঞ্জীব নস্কর

আর যাবতীয় ভারি জিনিসপত্র, যেমন জামাকাপড় তা সবই থাকে স্যাডেল ব্যাগে। আসুন দেখে নিই স্যাডল ব্যাগটি কীভাবে গুছিয়ে প্যাক করবেন। একটি মিডিয়াম সাইজ প্লাস্টিকের মধ্যে নিয়ে নিন দু’টো সেট জামা ও প্যান্টের, দু’টো হাফপ্যান্ট, একটি উইন্টার জ্যাকেট, একটি গামছা এবং একটি বিছানার চাদর প্লাস্টিকে ভরে বেঁধে নিন। অন্য একটি প্লাস্টিকের মধ্যে নিয়ে নিন যাবতীয় ছোট-ছোট জামাকাপড় যেমন দু’ধরনের হ্যান্ড গ্লাভস রাইটিং এবং উইন্টার, মোজা ৩ সেট, শেভিং কিট এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য।

কোথাও টেন্টিং করার জন্য একটি টেন্ট। সেই টেন্টের মাপের ফোল্ডিং ম্যাট্রেস, এয়ার পিলো এবং একটি অল পার্পাস ত্রিপল। আমরা যখন ২০১৮ এবং ২০২২-এ লাদাখ যাই, আমাদের গ্রুপের মধ্যে রান্না করার সরঞ্জামও ছিল। টেন্টটিং এবং ক্যাম্পি না করলে শুধুমাত্র হোটেলে থেকে কোনও একটি জায়গা সম্পর্কে যেমন কিছু বোঝা যায় না, তেমনিই মাত্র মাথাপিছু ১৫ হাজার টাকায় ২২ দিনের ট্যুরও করা যায় না। রান্না করার সরঞ্জামের মধ্যে পড়ে একটি পোর্টেবল স্টোভ সেট, ডিজেল ক্যারি করার দু’লিটারের প্লাস্টিক বোতল, প্রেশার কুকার, থালা, চামচ, লাইটার এবং ছুরি।

ছবি: সঞ্জীব নস্কর

এইসব যাবতীয় জিনিস থাকবে স্যাডেল ব্যাগে। তাই ছোট-ছোট প্লাস্টিকের মধ্যে গুছিয়ে নিন আপনার এবং আরোহীর প্রযোজনীয় জিনিসপত্র। জ্যাকেট, প্যান্ট থেকে সব জিনিসপত্র আপনি স্পোর্টস শপ-এ পেয়ে যাবেন। স্পোর্টস বা ট্র্যাকিংয়ের জিনিসপত্রগুলো হালকা এবং পাতলা হয়ে থাকে। তার ফলে ক্যারি করার অনেক সুবিধা আছে। স্যাডেল ব্যাগের একদম উপরে রাখুন রেইন কোট। এর সঙ্গে ব্যাগের ওয়েট ডিস্ট্রিবিউশনের কথাও মাথায় রাখতে হবে। সমানভাবে তা করা উচিত। তাহলে আর কী… সাত দিন, এক মাস অথবা তারও বেশি সময় নিয়ে বেরিয়ে পড়ুন এই প্রকৃতির কাছে।